মানিক বনাম মমতা

ভারতের প্রভাবশালী সংবাদপত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সোমবার 'আনডু ঢাকা ড্যামেজ' শিরোনামের সম্পাদকীয়তে লিখেছে :এক সময়ে ত্রিপুরাকে বলা হতো লিটল বেঙ্গল। নিকট অতীতে ১৯৭১ সালে এ রাজ্যটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।


বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি একটি বড় ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল নিয়ে ত্রিপুরা সফর করে গেলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল পুরনো বন্ধুত্বের সম্পর্ক ঝালিয়ে নেওয়া এবং একই সঙ্গে তার সম্প্রসারণ। সফরকালে ত্রিপুরার সেন্টাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি প্রদান করেছে। তবে এটা লক্ষণীয়, শেখ হাসিনা ত্রিপুরার আমন্ত্রণ গ্রহণ করলেও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে সম্মত হননি। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন এর যুক্তি হিসেবে বলেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ব্যস্ততার কারণে আসতে পারেননি।
এ যুক্তি খণ্ডনের মতো প্রমাণ আমাদের হাতে নেই। কিন্তু শেখ হাসিনার অবস্থান থেকে ধরে নিতে সমস্যা হয় না যে, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময়ে তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে যে চুক্তির সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তির কারণে তা হাতছাড়া হওয়ার প্রতিফলন ঘটেছে এতে। মমতা ব্যানার্জির সিদ্ধান্তের কারণে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষতি হয়েছে। সিপিএম ইতিমধ্যেই 'বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্ক' বজায় রাখার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার জন্য তার সমালোচনা করেছে, যদিও তিনি সেটা মানতে নারাজ। ঘটনা যাই হোক, চুক্তি সম্পাদনে তার অস্বীকৃতি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে পরবর্তী যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে উন্নীত করার চমৎকার সুযোগ নস্যাৎ করেছে। কেবল শেখ হাসিনার জন্যই এ চুক্তি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের জন্য ট্রানজিট সুবিধা নিশ্চিত করায় তা অনন্য ভূমিকা রাখতে পারত। ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে পেঁৗছাতে এ সুবিধা সময় ও দূরত্ব অনেক কমিয়ে দিতে পারে। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার যেখানে চমৎকার উদ্যোগ নিয়েছেন, মমতা ব্যানার্জি কিন্তু গত বছরের সেপ্টেম্বরের ব্যর্থতা নিরসনে এখন পর্যন্ত কিছুই করেননি। সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীরা যে সময়ে সুপ্রতিবেশিতার সম্পর্ক স্থাপনে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন, তা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার ক্ষেত্রে মমতা ব্যানার্জির কোনো যুক্তিই গ্রহণীয় হবে না। আর যেখানে ত্রিপুরার তুলনায় বাংলাদেশের সঙ্গে ভাষা ও সংস্কৃতির কারণে পশ্চিমবঙ্গের রয়েছে বাড়তি সুবিধা।

No comments

Powered by Blogger.