বিএডিসির অদক্ষতা-বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে হবে

যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে বিএডিসি নামক প্রতিষ্ঠানটির জন্ম দেওয়া হয়েছিল তা বলতে গেলে ভেস্তে গেছে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের অদক্ষতা, অদূরদর্শিতা আর যথাযথ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে না পারার কারণে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) জন্মের উদ্দেশ্য ছিল কৃষিপ্রধান এ দেশটির এ খাতটিকে কিভাবে আরো গতিশীল কিংবা চাঙ্গা করা যায়।
মূলত মানসম্পন্ন কৃষিপণ্যের বীজ কৃষকের মধ্যে সরবরাহ করে বিএডিসির মাধ্যমে বীজ সরবরাহ করে উৎপাদন বাড়ানোর যে স্বপ্ন ছিল, তা হোঁচট খেয়েছে। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২, কালের কণ্ঠে 'বিএডিসির অদক্ষতায় ৬০ কোটি টাকা জলে' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যে তথ্যচিত্র উপস্থাপিত হয়েছে তা প্রশ্নবোধক। কেন বিএডিসির অধীনে ১৭টি জেলার বিভিন্ন গুদামে এখনো অবিক্রীত পড়ে আছে প্রায় ৪২ হাজার টন বীজ- এ প্রশ্নের জবাব দেওয়ার দায় অবশ্যই সংশ্লিষ্ট মহলের।
উন্নত বীজের অভাবে কৃষক লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি উৎপাদন করতে পারছে না এ সম্পর্কিত নানা কথা আছে। যথাসময় উপযুক্ত মূল্যে বিএডিসির সংরক্ষিত বীজ বিক্রির কথা থাকলেও তা করা হয়নি। কৃষক যেখানে মানসম্পন্ন বীজ পায় না, সেখানে বিএডিসির বিপুল পরিমাণ বীজ অবিক্রীত থাকে কী করে? এখন দফায় দফায় পত্রপত্রিকায় বীজ বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। সময়ের কাজ সময়ে করতে না পারার কারণে ক্ষতি হয়েছে নানা দিকে। একদিকে কৃষক যথাসময়ে মানসম্পন্ন বীজ পেল না এবং এর ফলে উৎপাদন ব্যাহত হবে, অন্যদিকে বীজ বিক্রির সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ায় সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ পানিতে যাবে। বিএডিসির দায়িত্বশীলদের অদক্ষতা আর উদাসীনতার খেসারত দিতে হচ্ছে সরকার ও কৃষককে। মহাজোট সরকার কৃষি খাতকে এত গুরুত্ব দেওয়ার কথা বারবার বলে এলেও বিএডিসির দায়িত্বশীলরা বিষয়টি যে আমলে নেননি বিদ্যমান পরিস্থিতি এরই সাক্ষ্যবহ। আলু, পাট, আমন ধান, গম, বোরো ধানের বীজের সংকট বাজারে থাকায় একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী কৃষকের গলায় ছুরি চালিয়ে নিজেদের উদর পূর্তি করার সুযোগ নেয়। তা ছাড়া এসব বীজের গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন আছে। বিএডিসি অধিক মুনাফার লোভে যথাসময়ে নির্ধারিত মূল্যে বীজ বিক্রি করেনি। এ অভিযোগ আছে। কিন্তু অধিক মুনাফার ভূত বিএডিসির ঘাড়ে চেপে থাকার তো কথা নয়। এখন নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক কম দামেও বিএডিসি বীজ বিক্রি করতে পারছে না। সময়ে বীজ না বিক্রি করলে অসময়ে তা কোন কাজে আসবে- এ প্রশ্নের জবাব জটিল কিছু নয়।
দেশে বীজের সংকট মেটাতেই পর্যাপ্ত পরিমাণ বীজ বিএডিসির গুদামে মজুদ করা হয়েছিল। বিএডিসির কর্মকর্তারা বীজ বিক্রি না হওয়ার পেছনে যেসব যুক্তি দাঁড় করাচ্ছেন, তা অত্যন্ত খোঁড়া যুক্তি। এখন লোকসান দিয়ে বীজ বিক্রি করে গুদাম খালি করে আবার আগামী মৌসুমের জন্য গুদাম ভর্তি করে রাখার প্রচেষ্টা সরকারের ক্ষতির দিকটাই স্ফীত করার শামিল। কোনো কোনো বীজ বিক্রির সময়সীমা প্রায় শেষ। কৃষক মৌসুমের ফসল যথাসময়ে উৎপাদনের লক্ষ্যে নানাভাবে বীজ সংগ্রহ করেছে। কেন বিএডিসি তাদের বীজ কৃষকের কাছে যথাসময়ে বিক্রি করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। একদিকে কৃষি খাতকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বারবার বলা হবে, উৎপাদনের চাকা আরো গতিশীল করার তাগিদ দেওয়া হবে আর অন্যদিকে জিইয়ে থাকবে বৈরী চিত্র, তা তো হতে পারে না। বিএডিসির সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রতিষ্ঠানকে অধিকতর গতিশীল ও কার্যকর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা সময়ের দাবি।

No comments

Powered by Blogger.