বাণিজ্যমন্ত্রীর উপদেশ!-মানুষের দুর্দশা নিয়ে এক নিষ্ঠুর পরিহাস

দুর্দশার অন্ত নেই সাধারণ মানুষের। নিজেদের জীবন সংকুচিত করতে করতে অনেকটাই গুটিয়ে ফেলেছে তারা। প্রতিদিনকার জীবন থেকে, এমনকি খাদ্যতালিকা থেকেও অনেক কিছু ছেঁটে ফেলতে হয়েছে তাদের। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষকে জীবনযাপনের নতুন ফর্মুলা নসিহত করলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। ধন্য এই মহান পুরুষ!


সাধারণ মানুষের এই এক ঝামেলা। ক্ষমতায় যাঁরা থাকেন, তাঁরা সব সময় সাধারণ মানুষকে বোকা বা নির্বোধ ভাবেন। নিজেদের অবস্থানে দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষকে গিনিপিগ ভাবতেও তাঁদের বাধে না। আমাদের মান্যবর বাণিজ্যমন্ত্রীরও বাধেনি। তিনি কম খেয়ে সাধারণ মানুষকে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। কতটা কম খেলে সাধারণ মানুষের খাওয়াটা বাণিজ্যমন্ত্রীর ভাষায় 'কম খাওয়া' হয়, সেটা যদি তিনি দয়া করে জানাতেন, তাহলে তা সাধারণ মানুষের জন্য সত্যিকারের মঙ্গল বয়ে আনত। আমাদের মান্যবর বাণিজ্যমন্ত্রী বোধ হয় জানেন, এ দেশের বহু মানুষ তিন বেলা পেট পুরে খেতে পায় না। এ দেশের অনেক শিশু পুষ্টিহীন। পুষ্টিহীনতার অভাবে তাদের স্বাভাবিক বৃদ্ধিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মায়ের অপুষ্টির কারণে জন্ম নিচ্ছে অপুষ্ট শিশু। অগি্নমূল্যের এই বাজারের কারণে দেশের বেশির ভাগ মানুষ স্বাভাবিক খাবারটাও গ্রহণ করতে পারে না। তিনি তাদের আর কতটা কম খেতে বলছেন, তা আরেকটু পরিষ্কার করে বলবেন কি?
এটাও মানতে হবে, এ দেশে 'বেশি খাওয়া' একটি গোষ্ঠী আছে। এই গোষ্ঠী বেশি বেশি খেতে অভ্যস্ত। বাজারে পণ্যমূল্য দশ গুণ বেড়ে গেলেও তাদের সমস্যা হয় না। তাদের আরাম-আয়েশেরও কোনো কমতি নেই। তাদের পকেট কখনো খালি হয় না। এই গোষ্ঠী কী বেশি খায়, সেটাও বাণিজ্যমন্ত্রীর বিলক্ষণ জানা। তিনি যদি সেই বিশেষ গোষ্ঠীর 'বেশি খাওয়া' বন্ধ করতে পারতেন, তাহলে তা দেশের মানুষের জন্য বিশেষ কল্যাণ বয়ে আনতে পারত। তিনি সেদিকে না গিয়ে যে সাধারণ মানুষ বাজারের অগি্নমূল্যের কারণে নিজের বা সন্তানের মুখে প্রয়োজনীয় খাবারটাই তুলে দিতে পারে না, তাদের কম খাওয়ার উপদেশ দিতে গেলেন কেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী যেখানে সাধারণ মানুষকে কম খাওয়ার নসিহত করেছেন, সেটা ছিল একটি আলোচনা সভা। 'খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে আমাদের করণীয়' শীর্ষক সেই আলোচনা সভায় আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে সাধারণ মানুষকে যে উপদেশ দিয়েছেন, তার কোনো প্রয়োজন ছিল বলে মনে হয় না। এমন একটি আলোচনা সভার আয়োজন কেন করতে হয়েছে? কারণ দেশ থেকে ভেজাল উচ্ছেদ করা যায়নি। ভেজাল দেওয়া থেকে ব্যবসায়ীদের প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। এটা ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতার কথা সরাসরি স্বীকার করে নিলে নিজের অক্ষমতা প্রকাশ হয়ে যাবে, সে কারণেই কি তিনি সাধারণ মানুষকে কম খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন? আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী কতটা সফল? রোজার মাসে জিনিসপত্রের দাম কমানো তো দূরের কথা, স্থিতিশীলও রাখতে পারেননি। তিনি দাম কমানোর কথা বললেই বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়_এমন একটা কথাও চালু আছে। টিসিবিকে শক্তিশালী করা কিংবা বাজার নিয়ন্ত্রণের কোনো কৌশলও তিনি প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। তাই রোজার মাসে বাজারে জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। তেল-চিনি-চাল-ডালসহ নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ে মানুষ দিশেহারা। এ অবস্থায় মানুষকে কম খাওয়ার উপদেশ দেওয়া এক নিষ্ঠুর পরিহাস ছাড়া আর কিছুই নয়।

No comments

Powered by Blogger.