থাইল্যান্ডে সেনাদের দমনাভিযান অব্যাহত, আরও ছয়জন নিহত

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের পরিস্থিতি এখনো অশান্ত। থাকসিনপন্থী লালশার্ট পরা বিক্ষোভকারীদের আন্দোলন পুরোদমে চলছে। বসে নেই নিরাপত্তা বাহিনীও। তারাও কঠোর হাতে দমন চালিয়ে যাচ্ছে। গতকাল শনিবার সেনাদের গুলিতে আরও ছয়জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত তিন দিনে সেনাদের গুলিতে ২৩ জন নিহত ও দেড় শতাধিক আহত হয়েছেন।
রাজধানী ব্যাংকক থেকে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দিতে সেনাবাহিনী আরও কঠোর দমন অভিযান চালানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে। তবে কবে, কখন ওই অভিযান শুরু হবে, সে সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। এদিকে লালশার্ট পরা বিক্ষোভকারীদের নেতা জতুপর্ন প্রমপান থাইল্যান্ডের বর্তমান পরিস্থিতিকে গৃহযুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
ব্যাংককের যে বাণিজ্যিক এলাকায় বিক্ষোভকারীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, তার পাশে অবস্থিত রাচাপ্রাসং রোড এলাকা থেকে গতকাল তিনটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিদেশি নাগরিক এএফপিকে জানান, থাইল্যান্ডের জাতীয় পতাকা নিয়ে ২০ জন লালশার্ট বিক্ষোভকারী সেনাদের দিকে এগিয়ে গেলে সৈন্যরা তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে ওই ছয়জন নিহত হন।
ওই বিদেশি জানান, মাত্র ২০ মিটার দূর থেকে কোনো রকম হুঁশিয়ারি ছাড়াই তাঁদের গুলি করা হয়। ওই এলাকার একটি হাসপাতাল সূত্রে বলা হয়েছে, শনিবার ছয়টি মৃতদেহ তাদের হাসপাতালে আনা হয়েছে। কিন্তু সেগুলো ওই বিদেশির বর্ণনা করা মৃতদেহ কি না, সেটা তাদের কাছে স্পষ্ট নয়।
এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর ওই এলাকায় আরেকজনকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। তিনি মারা গেছেন কি না, তা জানা যায়নি। বাণিজ্য ও পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিত সিলমেও সৈন্যরা গুলি ছোড়ে। সেখানে দুজন গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ সময় বিক্ষোভকারীরা সেনাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। ব্যাংককের আশপাশের শহরগুলোতেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে সেনাদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে।
এদিকে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র সানসান কাওকুমনার বলেছেন, বিক্ষোভকারীরা বিক্ষোভের অবসান না করলে তাঁদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে সেনাবাহিনীর। তবে তারা ওই অভিযান চালানোর জন্য কোনো সময় ঠিক করেনি। কারণ অভিযান শুরু হলে অনেক প্রাণহানির আশংকা রয়েছে।
ব্যাংককের সিলম এলাকা বিক্ষোভকারীরা দুই মাস ধরে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। এতে ব্যাংককের এক কোটি ২০ লাখ লোকের জীবনযাত্রা কার্যত থমকে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়েছে। কমে গেছে পর্যটক। ওই এলাকায় বড় বড় বিপণিকেন্দ্রে, পাইকারি দোকান, বিলাসবহুল হোটেলসহ পর্যটন-সংশ্লিষ্ট নানা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এদিকে লালশার্ট বিক্ষোভকারীদের নেতা জতুপর্ন প্রমপান বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতি আর গৃহযুদ্ধের মধ্যে কোনো তফাত নেই। এই সংঘাতের অবসান কীভাবে হবে, সেটা তিনি বুঝতে পারছেন না।
নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভকারীরা এম-৭৯ গ্রেনেডের সাহায্যে তাঁদের ওপর হামলা চালাচ্ছেন।
থাইল্যান্ডের বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও সিঙ্গাপুর। দেশগুলো উভয়পক্ষকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.