বিক্ষোভে উত্তাল ব্যাংকক গুলিতে নিহত ১০

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক গতকাল শুক্রবারও সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল ছিল। সেনারা বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে ১০ জন নিহত ও তিন সাংবাদিকসহ ১২৫ জন আহত হন। সরকারবিরোধীদের বড় অংশটি যে স্থানে জমায়েত হয়েছে, সেখানকার পানি ও বিদ্যুত্ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে সেনারা। টেলিফোন ও মোবাইল নেটওয়ার্কও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আরও সংঘর্ষের আশঙ্কায় ব্যাংককের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার অনেক দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে। অফিস-আদালতে উপস্থিতিও হ্রাস পেয়েছে।
গতকাল রাত যত বাড়তে থাকে, বিক্ষোভকারীদের স্থান ঘিরে গুলির শব্দও অব্যাহতভাবে শোনা যেতে থাকে। সর্বশেষ পাওয়া খবরে জানা যায়, গুলিতে নয় পুরুষ ও একজন নারী নিহত হয়েছেন। তাঁরা সবাই বেসামরিক নাগরিক। গুলি ছাড়াও সেনাবাহিনী বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।
ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের পর জাপান, নিউজিল্যান্ড ও ডেনমার্ক ব্যাংককে তাদের দূতাবাস বন্ধ করে দিয়েছে। বিক্ষোভকারীরাও খণ্ড খণ্ডভাবে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছে। এ সময় তারা পুলিশ ও সেনাদের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে, টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং সরকারবিরোধী স্লোগান দেয়। গত বৃহস্পতিবার সেনাদের গুলিতে আহত হওয়া সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলনের নেতা ও সাবেক জেনারেল কাত্তিয়া সাওয়াসদিপলের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেছে, চলমান আন্দোলনকে নিস্তেজ করার জন্য সরকারের গুপ্তঘাতক বাহিনী তাঁর ওপর হামলা চালায়।
বৃহস্পতিবারের সহিংসতার পর থাই সরকার ব্যাংকক ও ১৫টি প্রদেশে জারি করা জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরও বাড়িয়েছে। থাই প্রধানমন্ত্রী আপিসিত ভেজ্জাজিওয়া গত ৭ এপ্রিল এই জরুরি অবস্থা জারি করেন।
এদিকে থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা গতকাল ব্যাংককের রাজপথ থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর সমর্থক লাল শার্ট পরা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করার জন্যও তিনি সরকারের প্রতি অনুরোধ করেছেন। সিনাওয়াত্রা গতকাল ব্যাংককে তাঁর আইন উপদেষ্টার মাধ্যমে এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান। বিবৃতিতে থাকসিন বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, রাজনৈতিকভাবে বর্তমান সংকট নিরসন করা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছে করলে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়িয়ে দেশকে রক্ষা করতে পারেন।
সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, ব্যাংককের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকায় জড়ো হওয়া দুই হাজার লাল শার্ট পরা বিক্ষোভকারীকে ওই এলাকা থেকে হটিয়ে দিতে সেনারা অভিযান শুরুর পর দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় সেনারা গুলিবর্ষণ শুরু করলে ১০ জন নিহত হন।
মার্কিন ও জাপানি দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভকারীরা মিছিল বের করলে সেনারা তাদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। সুয়ান লুম নাইট বাজার এলাকায় সেনারা গুলি চালালে ফ্রান্সের ২৪ চ্যানেলের দুই সাংবাদিক আহত হন। তাঁদের একজন কানাডার, অন্যজন থাইল্যান্ডের। তাঁদের পায়ে গুলি লাগে।

No comments

Powered by Blogger.