বিশ্বকাপের মতোই

সিরিজ জয়ের মোক্ষম একটা সুযোগ হাতছাড়া করার হতাশা এখন ভারতজুড়ে। নিজেদের মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে সর্বশেষ যখন হারিয়েছিল ভারত, তখন এই দলের রায়না-জাদেজা-ইশান্ত-কোহলিদের জন্মই হয়নি। চোখে অপার স্বপ্ন নিয়ে শিবাজি পার্কে প্র্যাকটিস করেন ১৩ বছরের শচীন টেন্ডুলকার। দীর্ঘদিনের আক্ষেপ ঘোচানোর সুযোগ ছিল এবার। অথচ ২-১-এ এগিয়ে গিয়েও সিরিজ হারল ধোনি-বাহিনী। ভারতজুড়ে অবশ্য জোর সমালোচনা চলছে উইকেটের। কিন্তু উইকেটকে রক্ষাকবচ বানানোর চেষ্টা করেননি মহেন্দ্র সিং ধোনি, ‘উইকেটে এমন কিছু ছিল না। শুরুতে একটু স্যুইং করেছে, সে তো করতেই পারে। এমন নয় যে খুব বেশি সিম মুভমেন্ট ছিল। একটু সহায়তা পেয়েই সেটিকে কাজে লাগিয়েছে ওদের পেসাররা। পরে উইকেট ভাঙবে বলেই টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছিলাম। আধঘণ্টা দেখে খেললেই হতো।’
এটা না হয় গেল পরশুর ম্যাচ হারার কারণ। আর সিরিজ হার? ‘আমরা ধারাবাহিক হতে পারিনি। এক ম্যাচ ভালো খেলেছি তো পরের ম্যাচেই খারাপ। সুযোগ এসেছিল, আমরা কাজে লাগাতে পারিনি’—নিজেদের ব্যর্থতা মেনে নিলেন ভারত অধিনায়ক।
অন্যদিকে সিরিজ জিতে যেন হাওয়ায় ভাসছেন রিকি পন্টিং। শুধু ভারত নয়, হাজারো প্রতিকূলতাকে জয় করেছেন বলেই পন্টিংয়ের উচ্ছ্বাসটা হলো বাঁধভাঙা, ‘ভারতের মাটিতে আমরা অনেক সিরিজ জিতেছি, কিন্তু এই জয়টা বিশেষ কিছু। আমি এটাকে বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের পাশেই রাখতে চাই। এতসব প্রতিবন্ধকতার মাঝেও ছেলেদের একটা দল হিসেবে খেলতে দেখাটা তৃপ্তিদায়ক। ভারতে খেলাটা সব সময়ই কঠিন, এতগুলো খেলোয়াড়কে না পাওয়া ব্যাপারটাকে আরও কঠিন করে তুলেছিল। কিন্তু কেউ এসব নিয়ে ভাবেনি, দায়িত্ব এড়িয়ে চলেনি। আমরা শুধু মাঠে গিয়ে আমাদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’
২০০৩ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ঠিক আগে ডোপ পরীক্ষায় পজিটিভ হয়ে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হলেন শেন ওয়ার্ন। ২০০৭ বিশ্বকাপের আগে ইনজুরিতে পড়লেন ব্রেট লি। এ ছাড়া অনেক সময়ই অনেক সমস্যা পার করতে হয়েছে। কিন্তু ছয় বছরের অধিনায়কত্ব জীবনে এমন সমস্যায় খুব কমই পড়েছেন পন্টিং। ইনজুরির জন্য দেশে রেখে এসেছেন চারজনকে। ভারতে এসেও পিছু ছাড়েনি ইনজুরি। একজন দেশে ফিরে যাচ্ছেন তো পরের ফ্লাইটেই আরেকজন ভারতে এসে ভ্রমণক্লান্তি কাটার আগেই নেমে পড়ছেন মাঠে। কে আসছে, কে যাচ্ছে মুশকিল হয়ে পড়ছিল এই হিসাব রাখাই।
এর পরও কি না এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয়! অধিনায়ক হিসেবে দুটি বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতেছেন, ছিলেন আরও একটি বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য। এই জয়টাকেও ওইসব সাফল্যের পাশে রাখাই বলে দিচ্ছে, সিরিজ জয়টা পন্টিংয়ের কাছে কতটুকু। এমন দল নিয়েও জয় পাওয়াটাকে ভবিষ্যতের জন্যও ইতিবাচক মনে করছেন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক।

No comments

Powered by Blogger.