শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা -অনিয়ম ও দুর্নীতি যেন জেঁকে না বসে

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদ গঠন নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। পরিচালনা পর্ষদ স্থানীয় সাংসদ ও জনপ্রতিনিধিনির্ভর নাকি প্রশাসনিক কর্মকর্তানির্ভর হবে, তা নিয়ে বিতর্কও চলেছে। এসবের মূলে ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার সুযোগে যে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়, তা দূর করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সব মহলে সমাদৃত শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের পরিচালনার দায়িত্বে নিয়ে আসার ব্যবস্থা এখনো করা যায়নি। ফলে পরিচালনা পর্ষদের ওপর প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা দেখা যায়। এ কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার পরিবেশ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনি দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়।
গতকাল প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নিয়মনীতি উপেক্ষা করে বরিশাল শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একটি বিদ্যালয়ের সভাপতি করা হয়েছে দণ্ডপ্রাপ্ত একজন আসামিকে এবং বরিশালের অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদে ব্যবসায়ী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সভাপতি হিসেবে নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, কোনো ফৌজদারি অপরাধের কারণে দণ্ডিত কেউ পর্ষদের সদস্য হতে পারবে না। কিন্তু অর্থ আত্মসাত্ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে একটি পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি করা হলো। গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর নিয়ম না মেনে বরিশালের অধিকাংশ বিদ্যালয়ে পরিচালনা পর্ষদ করা অত্যন্ত দুঃখজনক।
অতীতে আমরা দেখেছি, রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে দলীয় নেতা ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে এসব পর্ষদ গঠন কার্যত অনিয়ম, দুর্নীতি ও দলীয়করণের সুযোগ করে দেয়। শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষার্থী ভর্তি, প্রতিষ্ঠানের জন্য কেনাকাটা—অনেক ক্ষেত্রেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দলীয়করণ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার সুযোগ নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতি যেন কোনোভাবেই জেঁকে বসতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
স্থানীয় সাংসদের সুপারিশে এখন এসব পর্ষদ গঠিত হচ্ছে। তাই তাদের আরও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়া উচিত। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সমাজসেবী, বিদ্যানুরাগী তথা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের জড়িয়ে এ ধরনের পর্ষদ করার কথা ভাবতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.