সময়মতো উদ্যোগ ধর্মঘট এড়াতে পারত -ভোগান্তির নৌপরিবহন ধর্মঘটের অবসান

যেকোনো পরিবহন ধর্মঘট নাগরিক জীবনে চরম ভোগান্তি ডেকে আনে। সোমবার নৌপরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের আগে হাজারো যাত্রী দুই দিন ধরে অবর্ণনীয় সমস্যার মুখে পড়েছিল। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের একাংশের ডাকে রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের প্রথম দিন সারা দেশের নৌযোগাযোগ কার্যত অচল হয়ে পড়ে। এ সময় চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য ওঠানামা ও কর্ণফুলীর ১৬টি বেসরকারি ঘাটে পণ্য খালাস বন্ধ থাকে। অনেকে লঞ্চঘাটে এসে গন্তব্যে পৌঁছানোর কোনো বিকল্প না পাওয়ায় দুর্ভোগে পড়ে।
নৌযান শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, নতুন বেতনকাঠামো ঘোষণা, নৌপথে ডাকাতি বন্ধসহ নৌ-নিরাপত্তা বাড়ানো, মাস্টার-চালকদের সনদের মেয়াদীকরণ, মেরিন আইনের সঠিক বাস্তবায়নসহ ২২ দফা দাবিতে এ ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এসব দাবি আদায়ে শ্রমিক-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে যাচ্ছেন। কিন্তু এত দিনেও তাঁদের দাবিগুলোর বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় তাঁরা ধর্মঘটের মতো কর্মসূচি দিয়েছিলেন। শ্রমিক-কর্মচারীদের এসব দাবি যৌক্তিক কি না তা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু দেশবাসীকে ধর্মঘটের দুর্ভোগই নিতে হলো।
শ্রমিক-কর্মচারীরা বলছেন, দাবি মেনে নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে বেশ কয়েক দিন আগে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। আমাদের প্রশ্ন, এই সময়ে বিষয়টি নিষ্পত্তির কোনো উদ্যোগ নেওয়া হলো না কেন। ধর্মঘট ডাকার পর দুই দিন ধরে যে আলাপ-আলোচনার উদ্যোগ দেখা গেছে, সেটা যদি আগে নেওয়া হতো তাহলে হয়তো শ্রমিকদের এ ধর্মঘট ডাকার প্রয়োজন পড়ত না; কর্তৃপক্ষ, নৌযানের মালিক ও শ্রমিক-কর্মচারী মিলে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হতো এবং যাত্রীদেরও এ দুর্ভোগে পড়তে হতো না। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমরা আরও তত্পর দেখতে চাই।
জনসাধারণের ভোগান্তি ও দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির কথা বিবেচনা করে এ ধরনের ধর্মঘট যেন ভবিষ্যতে এড়ানো যায়, সে দিকে নজর দেওয়া জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.