মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর প্রটোকলে নতুন নিয়ম, ডিসি-এসপি’র সময় নষ্টের শঙ্কা by দীন ইসলাম

মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীদের দেশ-বিদেশ সফরে নতুন প্রটোকল (রাষ্ট্রাচার) নির্দেশাবলী জারি করা হয়েছে। তাদের ঢাকা ত্যাগ-প্রত্যাবর্তন ও বিদেশ যাত্রা অভ্যর্থনায় নতুন নিয়ম করা হয়েছে। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপার (এসপি)-দের দায়িত্ব কঠোরভাবে পালন করতে হবে। পাশাপাশি তাদের দায়িত্বও বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে সফরকালীন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অধীন বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সরকারি কর্মকর্তাদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে নিজ নিজ মন্ত্রীদের প্রটোকল করেই তাদের বেশি সময় পার করতে হবে। পর্যটন এলাকা বেষ্টিত ও এর আশপাশের কয়েকটি জেলার ডিসিরা এ নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন। তারা বলছেন, প্রটোকল করেই সময় পার হবে। কাজ করবো কখন? এসব জেলার তালিকায় রয়েছে- কুমিল্লা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, বান্দরবানসহ কয়েকটি জেলা। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সিনিয়র কর্মকর্তা মানবজমিনকে জানান, ২০০১ সালের ১৮ই নভেম্বর জারি করা প্রটোকল নির্দেশনা যুগোপযোগী করা হয়েছে। সময় দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই এতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর বাইরে কিছুই করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত ২০শে নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা স্বাক্ষরিত প্রটোকল সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
মন্ত্রী বা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রীরা যে প্রটোকল পাবেন: মন্ত্রী বা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রীরা দেশ-বিদেশ সফরে সমান প্রটোকল পাবেন। তাদের বিদেশ সফরকালে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বা যুগ্ম সচিব বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকবেন। তাদের দেশের অভ্যন্তরে সফরের ক্ষেত্রে নতুন প্রটোকল নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মন্ত্রী বা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রীদের দেশের অভ্যন্তরে সফরকালে তাদের অভিপ্রায় অনুযায়ী তার ঢাকা ত্যাগ ও প্রত্যাবর্তনস্থলে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া জেলা সদরে যথাসম্ভব জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপার (এসপি) এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের স্থানীয় পর্যায়ের জ্যেষ্ঠতম কর্মকর্তা মন্ত্রীকে আগমন ও বিদায়ের স্থানে অভ্যর্থনা ও বিদায় সংবর্ধনা জানাবেন। এতে বলা হয়েছে, জেলা সদরে উপস্থিত থাকার জন্য ডিসি বা এসপির নিজের সরকারি সফর বাতিল বা পরিবর্তন করার প্রয়োজন হবে না। এরূপ ক্ষেত্রে সিনিয়র জেলা প্রশাসক বা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মন্ত্রীকে অভ্যর্থনা ও বিদায় সংবর্ধনা জানাবেন। তবে, ডিসি আগেই নিজের সফরসূচি জারি করে থাকলে মন্ত্রীর সফরসূচি পাওয়ার পরই মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হবেন যে, ডিসির সদরে থাকা আবশ্যক কিনা। মন্ত্রী এমন ইচ্ছা প্রকাশ করলে সেক্ষেত্রে ডিসি তার সফরসূচি বাতিল করবেন। উপজেলা সদর বা উপজেলার অন্য কোন স্থানে মন্ত্রীর সফরকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও), সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের স্থানীয় পর্যায়ের সিনিয়র কর্মকর্তা মন্ত্রীকে অভ্যর্থনা ও বিদায় সংবর্ধনা জানাবেন। আবশ্যক না হলে ডিসি বা এসপি এক্ষেত্রে উপস্থিত থাকার প্রয়োজন নেই। তবে মন্ত্রীর আগমন ও প্রস্থানের সময় আবশ্যক না হলে বিমানবন্দর বা রেলওয়ে স্টেশনে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ডিসির উপস্থিত থাকার প্রয়োজন নেই। বিভাগীয় কমিশনার, মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার এবং সংশ্লিষ্ট রেঞ্জের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (ডিআইজি)-এর ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। তবে বিভাগীয় কমিশনার সদর দপ্তরে উপস্থিত থাকলে মন্ত্রীর আগমনের পর তিনি তার সঙ্গে সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ করতে পারবেন। প্রটোকল নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মন্ত্রীদের সফরসূচি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জেলার এসপি নিরাপত্তার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরে মন্ত্রী রেলে ভ্রমন করলে তার সফরসূচি পাওয়ার সঙ্গে রেলওয়ে এসপি তৎক্ষণাৎ সংশ্লিষ্ট রুটের সকল পুলিশ স্টেশন বা ফাঁড়িকে অবহিত করবেন। যে স্টেশনে মন্ত্রী ট্রেন থেকে নামবেন এবং ট্রেনে পুনরায় উঠবেন বা কোন জংশনে যে স্থানে ট্রেন বদলের প্রয়োজন হবে ওইসব স্থানে পুলিশের একজন পরিদর্শক বা উপ- পরিদর্শক উপস্থিত থাকবেন। মন্ত্রীদের রেলযোগে চট্টগ্রামে গমন ও প্রস্থানের সময় সেখানে চট্টগ্রাম রেলওয়ের এসপি উপস্থিত থাকবেন।
প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা যে প্রটোকল পাবেন: প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর বিদেশ সফরকালে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব বা উপসচিব বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকবেন। তাদের দেশের অভ্যন্তরে সফরের ক্ষেত্রে নতুন প্রটোকল নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর দেশের অভ্যন্তরে সফরকালে তাদের অভিপ্রায় অনুযায়ী তার ঢাকা ত্যাগ ও প্রত্যাবর্তনস্থলে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন। জেলা সদরে ডিসি বা এডিসি ও এসপি বা এডিশনাল এসপি এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তারা প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর আগমন ও বিদায়ের স্থানে অভ্যর্থনা ও বিদায় সংবর্ধনা জানাবেন। উপজেলা সদরে ইউএনও বা তিনি উপস্থিত না থাকলে তার পরবর্তী সিনিয়র কর্মকর্তা ও একজন সহকারী পুলিশ সুপার বা তিনি উপস্থিত না থাকলে তার পরবর্তী সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তারা প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীদের অভ্যর্থনা ও বিদায় সংবর্ধনা জানাবেন। প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীদের সফরসূচি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জেলার এসপি নিরাপত্তার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীদের রেলযোগে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী রেলে ভ্রমণ করলে তার সফরসূচি পাওয়ার সঙ্গে রেলওয়ে এসপি তৎক্ষণাৎ সংশ্লিষ্ট রুটের সকল পুলিশ স্টেশন বা ফাঁড়িকে অবহিত করবেন। যে স্টেশনে প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী ট্রেন থেকে নামবেন এবং ট্রেনে পুনরায় উঠবেন বা কোন জংশনে যে স্থানে ট্রেন বদলের প্রয়োজন হবে ওইসব স্থানে পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শক উপস্থিত থাকবেন। মন্ত্রীদের রেলযোগে চট্টগ্রামে গমন ও প্রস্থানের সময় সেখানে চট্টগ্রাম রেলওয়ের এসপি বা এডিশনাল এসপি বা পরবর্তী সিনিয়র কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন।
মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী/উপমন্ত্রীর প্রটোকলে সাধারণ নির্দেশাবলি: মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী/উপমন্ত্রীর সফরে কিছু সাধারণ নিয়ম-কানুন মেনে চলার কথা বলা হয়েছে নির্দেশাবলিতে। এতে বলা হয়, মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর সফরসূচি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে যথাসময়ে পাঠাতে হবে। সফরসূচি কোন পরিবর্তন হলে তাও যথাসময়ে সবাইকে অবহিত করতে হবে। সফরসূচি তৈরির সময় সফরটি সরকারি, না ব্যক্তিগত তা মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী/উপমন্ত্রিদের দপ্তর থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে অবহিত করতে হবে। সরকারি সফরের সময় মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী/উপমন্ত্রীদের জন্য যানবাহন ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। ব্যক্তিগত সফরের জন্য যানবাহন ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হলে মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী/উপমন্ত্রীদের প্রচলিত নিয়মে ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। নির্দেশাবলিতে বলা হয়েছে, একান্ত ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক সফরের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। স্বাভাবিক সরকারি কাজকর্মের পাশাপাশি একজন মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী/উপমন্ত্রী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, জনসভা ইত্যাদিতে যোগদান করতে পারেন। তবে প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনী প্রচার অভিযানের অংশ হিসেবে জনসভায় ভাষণ দান ও রাজনৈতিক কর্মীদের সভায় যোগদান ব্যক্তিগত ভ্রমণ হিসেবে গণ্য হবে।

No comments

Powered by Blogger.