যশোরে পুলিশের গুলিতে আহত হাফিজুরের মৃত্যু

যশোরে পুলিশের গুলিতে আহত হাফিজুর রহমান (২৮) শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে হার মেনেছেন। টানা ১০ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জালড়ে শনিবার বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি। পরিবারের অভিযোগ, পঙ্গু হাসপাতালে একটি অজানা ইনজেকশন দেয়ার পর হাফিজুরের অবস্থা দ্রুত অবনতি হতে থাকে এবং শনিবার তার মৃত্যু হয়। হাফিজুরের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। নিহত হাফিজুর যশোর শহরের বারান্দিপাড়া এলাকার হারুন মিস্ত্রির ছেলে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর অবস্থার অবনতি হওয়ার পরদিন ১৪ নভেম্বর তাকে যশোরের ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে ১৬ নভেম্বর তাকে পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। ২১ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার বেলা ৩টার দিকে মারা যান তিনি। হাফিজুর পেশায় ইজিবাইকের মিস্ত্রি ছিলেন। যশোরে ১৩ নভেম্বর গভীর রাতে হাফিজুর ও মিজানকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে পায়ে গুলি করে ছিনতাইকারী বানানোর নাটক সাজায় পুলিশ। তাদের আটক করে কোতোয়ালি থানার এসআই সোয়েবের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল। পরে শহরের কালেক্টরেট ভবনের পশ্চিম পাশের নার্সারি পট্টিতে নিয়ে তাদের পায়ে গুলি করা হয় বলে দাবি পরিবারের। চিকিৎসকরা জানান, তার বামপায়ের হাঁটুতে গুলি লেগেছে। মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয়েছে ‘বুলেট ইনজুরি।’ ময়নাতদন্ত শেষে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। হাফিজুর রহমানের বড় ভাই মাসুদুর রহমান যুগান্তরকে জানান, ১৩ নভেম্বর ভোররাতে তার ভাই হাফিজুরের পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে পুলিশ গুলি করে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ কথা বলে। আহত অবস্থায় তাকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশের গুলিতে তার বাম পায়ের দুই শিরা কেটে যায়। ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে অপারেশন করে হাফিজুরের বাম পা কেটে ফেলা হয়। তিনি আরও জানান, অপারেশনের পর হাফিজুরকে একটি ইনজেকশন দেয়া হয়। এরপর তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এর একদিন পর ২১ নভেম্বর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
তার ভাইকে হত্যার অভিযোগে তারা পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করতে চান। কিন্তু তাদের গোটা পরিবার জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। মারা যাওয়ার আগে হাফিজুর জানিয়েছিল, পুলিশ তার বাড়িতে গিয়ে স্ত্রীকে বলে অস্ত্র কই? তার স্ত্রী বলেন, কিসের অস্ত্র। এরপর তারা স্ত্রী ও হাফিজুরকে গালিগালাজ করে। পরে হাফিজুরকে কলেজছাত্র সাইফুল্লাহ হত্যায় জড়িত বলে ধরে নিয়ে যায়। এরপর তারা মিজানের বাসায় গিয়ে তাকে ধরে আনে। হাফিজুর ও মিজানকে ছিনতাইকারী বলে দাবি করে পুলিশ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মোজাম্মেল হক হাফিজুরের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, লাশ ময়নাতদন্ত শেষে যশোরে পাঠানো হবে। যশোর কোতোয়ালি থানার ভরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইনামুল হক জানিয়েছেন, ১৩ নভেম্বর পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ও গুলিবর্ষণের পর ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হাফিজুর ও মিজানুর আহত হয়। তারা চিহ্নিত ছিনতাইকারী।

No comments

Powered by Blogger.