‘ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণে সরকারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই’

বিবিসি বাংলা সংলাপে অংশ নিয়ে প্যানেল আলোচকরা বলেছেন, ছাত্রলীগের সন্ত্রাস ও তাদের নিয়ন্ত্রণে সরকারের দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই। এছাড়া, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনকে আরও কার্যকর করার পরামর্শ দিয়েছেন প্যানেল আলোচকরা। গতকাল বিকালে রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে বিবিসি বাংলা সংলাপের বিরানব্বইতম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। আকবর হোসেনের সঞ্চালনায় এ পর্বে অংশ নেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার (অব.) হান্নান শাহ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানিয়া আমীর ও টেলিভিশন উপস্থাপক কাজী জেসিন। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত এক দর্শকের প্রশ্ন ছিল, ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণে সরকারের দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ কি দেখা যাচ্ছে? আলোচনায় হান্নান শাহ বলেন, ছাত্রলীগের সন্ত্রাস ও এ সংগঠনটিকে নিয়ন্ত্রণে সরকারের দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেই। উল্টো ছাত্রলীগের কোন সন্ত্রাসী ধরা পড়লেই বলা হচ্ছে এরা ছাত্রলীগের কেউ নয়। তিনি বলেন, বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াত সন্ত্রাসী যে দলেরই হোক না কেন সে সন্ত্রাসী। তবে বহিষ্কারই প্রমাণ করে এরা ছাত্রলীগের নেতা ও কর্মী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, মূলত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে মোকাবিলার জন্যই সরকার ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে ব্যবহার করছে। একই প্রশ্নের আলোচনায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘর্ষের ঘটনায় পিস্তলসহ ১৭টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। দুটি মামলা করা হয়েছে, এটা যদি দৃশ্যমান না হয় তবে দৃশ্যমান পদক্ষেপ কোনটা? তিনি বলেন, আমার ধারণা ছাত্রলীগে জামায়াত-শিবিরসহ নৈরাজ্যবাদী সংগঠনের  অনুপ্রবেশ ঘটেছে। ছাত্রলীগ আকাশ থেকে পড়েনি। আমি আশা করবো ছাত্রলীগ তার পূর্ব ঐতিহ্য ও নীতিতে ফিরে আসবে। সুরঞ্জিত আরও বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করলে এ পরিস্থিতি থেকে শতভাগ বের হয়ে আসা যাবে। একই বিষয়ে আলোচনায় তানিয়া আমীর বলেন, ছাত্রলীগের আদর্শ, নীতি ও ঐতিহ্য ছিল। কিন্তু তারা এখন টেন্ডারবাজি, ঠিকাদারি ও মারামারি নিয়ে ব্যস্ত। এবিষয়ে শাসক দলকে অবশ্যই আরও জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি সন্ত্রাসবিরোধী আইনকে আরও কার্যকর করে এর বাস্তবায়ন করতে হবে।
কাজী জেসিন বলেন, শীতবস্ত্র বিতরণ নিয়েও ছাত্রলীগ চাঁদাবাজি করে। যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত তাদের সন্ত্রাসীই বলতে হবে। তিনি বলেন, সরকার সত্যিকারের পদক্ষেপ নিলে কেন তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করবে? আগামীতে সন্ত্রাস বেড়ে যাওয়ার প্রবল ঝুঁকিতে রয়েছে এমন ১৩টি দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ, এ আশঙ্কার কোন ভিত্তি আছে কি-না এক দর্শকের এমন প্রশ্নের জবাবে সুরঞ্জিত বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা। তবে জঙ্গিবাদ যেমন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠছে তেমনি সরকারের তরফে ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। এবিষয়ে সরকার আপোষহীন।
একই বিষয়ে হান্নান শাহ বলেন, জঙ্গিবাদ দমন আমাদের সরকারের মেয়াদেই শুরু হয়েছিল। কিন্তু এই সরকার জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দিয়েছে।  আমাদের ভয় সীমান্তের ওপারে যেভাবে বোমা ফুটছে এবং এখান থেকে গিয়ে যারা তা করছে তাতে এখন যদি ওরা বাংলাদেশে এসে বোমাবাজি শুরু করে দেয় কি-না সেটিই ভয়। অবৈধভাবে ঝুঁকি নিয়ে  দেশের নাগরিকদের বিদেশে পাড়ি দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি সরকারের ব্যর্থতা। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ। তাতে মানুষ অন্য দেশে অবৈধভাবে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করছে।

No comments

Powered by Blogger.