তিনশ ডলার মূল্যের বেশি মাল আনলেই গ্রেফতার

ফ্লাইটে গিয়ে ৩শ ডলারের বেশি মালামাল নিয়ে দেশে ফিরলেই গ্রেফতার হবেন বিমানকর্মী। এ নিয়ে কাউকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। সংশ্লিষ্ট বিমানকর্মীকে বিমানবন্দর থেকে তাৎক্ষণিক গ্রেফতার করে আইনের হাতে তুলে দেয়া হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেবিন ক্রু, পাইলটসহ সংশ্লিষ্ট বিমানকর্মীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ চাকরিচ্যুত করারও নির্দেশনা আসছে।
বিমানের মাধ্যমে সোনা চোরাচালান বেড়ে যাওয়ায় এবং সম্প্রতি বিমানের চিফ অব সিডিউলিং ক্যাপ্টেন আসলাম শহীদ, জিএম এমদাদসহ ৪ জন গ্রেফতার হওয়ায় বিমান কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। বিমান চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) জামাল উদ্দিন শনিবার যুগান্তরকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বিষয়টি তিনি বিমানের ভারপ্রাপ্ত এমডি ক্যাপ্টেন (অব.) মোসাদ্দেক আহমদকেও জানিয়েছেন। একই সঙ্গে বিষয়টি মনিটরিং করার জন্য বিমানের সিকিউরিটি বিভাগের প্রধান জেনারেল ম্যানেজার মমিনুল ইসলামকে নির্দেশ দিয়েছেন।
জেনারেল ম্যানেজার (সিকিউরিটি) মমিনুল ইসলাম যুগান্তরকে এর সত্যতা স্বীকার করে বলেন, চেয়ারম্যানের নির্দেশনা পেয়ে তিনি সিডিউলিং বিভাগের কেবিন ক্রু ও ককপিট ক্রুদের ফ্লাইট বণ্টনে সতর্ক করে দেন সংশ্লিষ্ট বিভাগকে। তিনি বলেন, আড়াই কেজি সোনা নিয়ে বিমানের কেবিন ক্রু রাসেল গ্রেফতার হওয়ার ২ দিন আগেও বিমান চেয়ারম্যান তাকে টেলিফোনে ঠিকাদার পলাশ সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্য সব বিভাগকে জানিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। গত ১১ নভেম্বর যুগান্তরে ফ্লাইট বেচাকেনা সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশের পর তিনি দ্বিতীয় দফায় চেয়ারম্যান ঠিকাদার পলাশ যাতে সিডিউলিং বিভাগে প্রবেশ করতে না পারে, সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেন। একই সঙ্গে বিমানের সবগুলো বিভাগ ও বিমানবন্দরে প্রবেশের পাস বাজেয়াপ্ত করারও নির্দেশ দেন। পলাশকে সিডিউলিং বিভাগসহ কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর কক্ষে দেখলে তার সম্পর্কে জানাতেও জেনারেল ম্যানেজার মমিনুলকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি বিমান এমডি ক্যাপ্টেন মোসাদ্দেক আহমদকে অবিলম্বে সিডিউলিং বিভাগকে অটোমেশনের আওতায় আনার জন্য বলেন। পলাশ যাতে বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য তিনি সিভিল এভিয়েশনকেও তার নিরাপত্তা পাস বাজেয়াপ্ত করার সুপারিশ করেন।
বিমান চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন শনিবার যুগান্তরকে বলেন, নিজেকে ফ্লাই ক্লাবের বোর্ড মেম্বার পরিচয় দিয়ে পলাশ সর্বপ্রথম বিমান অফিসে এসে তার সঙ্গে দেখা করেন। এরপর চতুর ও দুর্ধর্ষ পলাশ তার নাম ব্যবহার করে বিমানে এত ভয়াবহ কর্মকাণ্ড করছে এটা বিমানের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী কখনোই তার নজরে আনেননি। এ ধরনের কোনো তথ্য তার জানা থাকলেই তিনি পলাশকে বিমানে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতেন। সাকুর্লার দিয়ে বের করে দিতেন। তিনি বলেন, চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি মাসে ৫/৬ দিন অফিস করেন। এ কারণে অনেক তথ্যই তার জানার কথা নয়। এর সুযোগ নিয়ে পলাশ ও তার সিন্ডিকেট বিমানের বিভিন্ন বিভাগে গিয়ে ফায়দা নিত। চোরাচালান করত। পলাশ কখনোই তার ধর্মপুত্র নন এবং ছিলেন না বলেও জানান জামাল উদ্দিন।
তিনি জানান, বিমানের বোর্ড মেম্বার হিসেবে যোগদানের পর থেকে এ সময় পর্যন্ত তিনি বিমান বহরে চারটি অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজ সংযোজন করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলে উড়োজাহাজের জন্য সভেরেন্ট গ্যারান্টি জোগাড় করেছেন। এটা বাংলাদেশ বিমানের জন্য অনেক বড় পাওনা। বিমানের ওয়েবসাইট অত্যাধুনিক করেছেন। এখন মানুষ অনলাইনে বিমানের টিকিট কাটতে পারছেন। বিমানের সব বিভাগ অটোমেশন হয়েছে। সিবিএ ও পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের অসন্তোষ দূর করেছেন। গত ২-৩ বছর ধরে সুন্দরভাবে বিমানের হজ অপারেশন হচ্ছে। আগে লোকসানে থাকলেও গত তিন মাস ধরে বিমান লাভে চলে আসছে। এই অবস্থায় বিমানকে ধ্বংস করার জন্য একটি সিন্ডিকেট উঠেপড়ে লেগেছে। তিনি এসব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।

No comments

Powered by Blogger.