‘খুনি কমিটির ঘাতকদের বাঁচাতে কিছু শিক্ষক মরিয়া’ -ছাত্রলীগ নেতার দাবি by ওয়েছ খছরু

ছাত্রলীগ সভাপতি সোহাগের বক্তব্য মানতে নারাজ সিলেট ছাত্রলীগের একাংশ। নিহত সুমন ছাত্রলীগ কর্মী বলে দাবি করে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সোহাগের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শাবি ছাত্র উত্তম কুমার দাস। একই সঙ্গে সুমন হত্যার ঘটনায় কেন কাউকে বিশ্ববিদ্যালয় বা সংগঠন থেকে এখন পর্যন্ত বহিষ্কার করা হলো না- এ ব্যাপারে প্রশ্ন রাখেন তিনি। গতকাল সিলেটের সাংবাদিকদের কাছে এক খোলা চিঠির মাধ্যমে তিনি এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নিহত ছাত্রলীগ কর্মী সুমন চন্দ্র দাস ও সংঘর্ষ নিয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতির দেয়া বক্তব্য বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেন উত্তম। গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্যে ছাত্রলীগ নেতা উত্তম জানান, ছাত্রলীগ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মেধাবী ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী আমার রাজনৈতিক অনুজ সুমন চন্দ্র দাসের মৃত্যুতে সিলেটসহ সারাদেশ যখন শোকাহত, তখন আমার প্রাণের সংগঠনের অন্যতম অভিভাবক বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ তার আত্মার মাগফেরাত কামনার পরিবর্তে, তার পরিবারের প্রতি সমবেদনার পরিবর্তে তার সমালোচনা করেছেন, যা ছাত্রলীগের জন্য অত্যন্ত বেদনার। এমনকি গত ২৪শে সেপ্টেম্বর জামায়াত-শিবির কর্তৃক আমার এক পা কর্তন হওয়ার পর কোন প্রকার সমবেদনা না জানিয়ে তিনি আমাকে অন্যদের কুমন্ত্রণায় দোষারোপ করছেন, যা সঠিক ছিল না। উত্তম জানান, গত বছরের ৮ই মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার পর সামসুজ্জামান চৌধুরীর ওপর হামলার মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমাকে এক বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। এর মেয়াদ গত ২৩শে জুন শেষ হয়েছে। এখন আমি মাস্টার্স দ্বিতীয় সেমিস্টারের নিয়মিত ছাত্র। ছাত্রলীগসহ নেতৃবৃন্দের কাছে প্রশ্ন রেখে উত্তম বলেন, ‘যেখানে সামসুজ্জামান চৌধুরীর ওপর হামলার কারণে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হলো সেখানে গত ২০শে নভেম্বর আমার ভাই সুমন চন্দ্র দাসের হত্যার ঘটনায় কেন কাউকে বিশ্ববিদ্যালয় বা সংগঠন থেকে এখন পর্যন্ত বহিষ্কার করা হলো না। বরং ওই খুনি কমিটির সকল ঘাতকদের বাঁচাতে আমার প্রিয় সংগঠনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিপথগামী শিক্ষক মরিয়া হয়ে উঠেছেন। খেলা চিঠিতে উত্তম প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুলতা জানিয়ে বলেন, জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা আমার একটি পা কেটে নিয়েছে। আমাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে প্রিয় নেত্রীর সহযোগিতা কামনা করছি। এদিকে ছাত্রলীগ সভাপতির বক্তব্যে সিলেটের ছাত্রলীগের একাংশে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ওই অংশের নেতারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রলীগের বিবদমান দু’টি গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষকালে শাবি ছাত্রলীগের সভাপতি পার্থসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকে প্রকাশ্য অস্ত্র হাতে সংঘর্ষে জড়াতে দেখা দিয়েছে। তারা বলেন, সংঘর্ষকালে উপস্থিত সাংবাদিকরা ফটো তুলেছেন। পরের দিন দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় তাদের ছবি ছাপা হয়েছে। ছাত্রলীগ সভাপতি ঢাকায় বসে মিথ্যাচার করছেন বলে দাবি করেছেন ওই অংশের নেতারা।
গ্রেপ্তার ৩০, মামলা ৪: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ও ছাত্রলীগ কর্মী হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৩০ ছাত্রলীগ কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিহত ছাত্রলীগ কর্মী সুমন চন্দ্র দাসের মা প্রতিভা দাস বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১২০ জনের বিরুদ্ধে জালালাবাদ থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।  বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইশফাকুল হোসেন শনিবার বিকালে জালালাবাদ থানায় আরও একটি মামলা দায়ের করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে হামলা, ভাঙচুর ও ক্ষতি করায় তিনি এ মামলা দায়ের করেন। এ মামলায়ও ২৫০ জন অজ্ঞাতনামাকে আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ অ্যাসল্ট ও অস্ত্র আইনে দু’টি মামলা দায়ের করেছিল শুক্রবার। তবে মামলায় কাউকে সুনির্দিষ্টভাবে আসামি করা হয়নি। এদিকে অস্ত্রসহ আটক ছাত্রলীগ ক্যাডার অনিকসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে শনিবার আদালতে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আতিকুর রহমান শনিবার বিকালে মামলার আসামি ছাত্রলীগ ক্যাডার অনিকসহ ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আজ রোববার আদালতে রিমান্ড আবেদনের শুনানি হবে।
পালিয়ে বেড়াচ্ছে ছাত্রলীগের চিহ্নিতরা: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের পর পালিয়ে বেড়াচ্ছে চিহ্নিত ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। যারা সিলেটে ছিল তাদের মধ্যে আটক হয়েছে ৩০ জন। পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে সিলেট মহানগর পুলিশের ৭টি টিম একসঙ্গে নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু করে। তবে অভিযানকালে তারা কাউকে পায়নি। সিলেটের জালালাবাদ থানার ওসি আক্তার হোসেন গতকাল মানবজমিনকে জানিয়েছেন, যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তারা সবাই চিহ্নিত। তারা ঘটনার দিন ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিল।
নিহত সুমনের খুনিদের গ্রেপ্তার দাবি: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিহত ছাত্র সুমনের খুনিদের গ্রেপ্তার করে আইনের মাধ্যমে শাস্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ। একই সঙ্গে বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে অস্ত্র নিয়ে যারা ঢুকেছিলো তাদের গ্রেপ্তারেরও দাবি জানান তারা। গতকাল সন্ধ্যায় সিলেটে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ এ দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সিলেট মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি রাহাত তরফদার। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বক্তব্যের সঙ্গে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ একাত্ম। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তি ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব প্রশাসনের, ছাত্রলীগের নয়। আর ঘটনার দিন প্রশাসনের ব্যর্থতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের কারণে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকতে পারে না। এ কারণে ছাত্রলীগ দ্রুত ক্যাম্পাস খুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছে। ঘটনার দিন সংঘর্ষে কোন ছাত্রলীগ কর্মী জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও জানান রাহাত তরফদার। সংবাদ সম্মেলনে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদসহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
উত্তমকে নিয়ে বিভ্রান্তি: কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতির বক্তব্যে দুঃখ প্রকাশকারী সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক উত্তম কুমার দাসকে নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। উত্তম নিজেকে মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক বলে দাবি করলেও সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ নেতারা গতকাল সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, প্রায় এক বছর আগে উত্তমকে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সুতরাং বহিষ্কৃত কেউ ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত নয়।

No comments

Powered by Blogger.