৭ বছরেও চালু হয়নি ডিসিসি’র বহুতল কার পার্কিং by মির্জা মাহমুদ

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)-এর এক হিসাব অনুযায়ী জানা যায়, মতিঝিল এলাকার ৯০ ভাগ ভবনেই গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা নেই। তাই দিনের বেলা ওই এলাকায় আসা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গাড়ি রাস্তার উপরেই পার্কিং করা হয়। এ জন্য মতিঝিল, দিলকুশা ও আশপাশের এলাকায় সৃষ্টি হয় অসহনীয় যানজট। অথচ রাজউকের ইমারত নির্মাণ আইন ও বিধিমালা অনুসারে ৬ তলার উপরে নির্মিত সব ভবনের নকশা অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গায় গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক রাখা হয়েছে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার যানজট কমাতে ২০০৫ সালের শুরুর দিকে সিটি করপোরেশনের ২১ কাঠা জমিতে দেশের বৃহত্তম ৩৭ তলা ভবন নির্মাণ শুরু করে। ২০০৮ সালে ভবন নির্মাণের পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)’র কাছে ভবনের এক থেকে সাত তলার ৩১৬টি পার্কিং স্পেস বুঝিয়ে দিলেও ৭ বছরেও বহুতল পার্কিং সেবা চালু করতে পারেনি ডিএসসিসি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএসসিসি’র প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহমেদ জানান, সিটি সেন্টার ইজারার জন্য সাতবার দরপত্র আহ্বান করেও দরপত্রের কাঙ্ক্ষিত মূল্য পাওয়া যায়নি। শিগগিরই আবার ইজারার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে। বহুতল পার্কিং সুবিধা চালু হলে ঘণ্টাপ্রতি ১০ টাকা হারে চার্জ আদায় করবে ডিএসসিসি। এদিকে ডিএসসিসি’র অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, দরদাতারা যাতে ভবনটি ইজারা নিতে আগ্রহী হন এ জন্য ইজারার মেয়াদ ১ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩ বছর করাসহ দরপত্রের অনেক শর্ত শিথিল করা হয়েছে। তবুও কেউ ভবনটি ইজারা নিতে আগ্রহী হননি। কারণ হিসেবে সূত্রটি জানায়, ভবনটিতে পার্কিং সুবিধা চালু করতে হলে এখন টোল আদায়ের নানা রকম সরঞ্জাম বসাতে, নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগসহ রাজনৈতিক নেতাদের হিস্যা দিতে হবে। তাই ভবনটি ইজারা নিতে কেউ আগ্রহী হচ্ছেন না। ওরিয়ন গ্রুপের কর্মকতা মতিউর রহমান জানান, ডিএসসিসিকে তার প্রাপ্য জায়গা বুঝিয়ে দেয়ার পর ৩৭ তলা ভবনটিতে তারা ২৫টি ফ্লোর পেয়েছেন। ওরিয়ন গ্রুপের প্রাপ্য ২৫টি ফ্লোর তারা গ্রামীণফোন, এইচএসবিসি ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকসহ ১০টি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন।
ওরিয়ন গ্রুপের প্রাপ্য পার্কিংয়ের অংশটুকু এখন ১০টি প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করছে। মতিউর রহমান আরও দাবি করেন, ডিএসসিসি’র ইজারার উচ্চমূল্যের কারণে কেউ ভবনটি ইজারা নিতে আগ্রহী হচ্ছেন না। সরজমিন মতিঝিল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শাপলা চত্বর থেকে দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে কিছু কিছু জায়গায় এক সারি এবং কয়েকটি জায়গায় দুই সারিতে যানবাহন পার্ক করে রাখা হয়েছে। এ জন্য মতিঝিল এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে অসহনীয় যানজট। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান রাস্তায় খুঁটি ও চেইন দিয়ে আটকে তাদের পার্কিং এলাকা চিহ্নিত করে রেখেছে। রাস্তায় বেশির ভাগ অংশই দখল হয়ে গেছে পার্কিংয়ে, বাকি অংশ দিয়ে ধীরগতিতে চলছে যানবাহন। মতিঝিল বেসিক ব্যাংক ভবনের সামনে কথা হয় প্রাইভেট কারচালক মনিরের সঙ্গে। তিনি জানান, রাস্তায় গাড়ি পার্ক করলে সব সময় উৎকণ্ঠায় থাকতে হয় কখন অন্য কোন গাড়ি এসে ধাক্কা দেয় কিনা। গাড়ির যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে যায় কিনা। বহুতল পার্কিং চালু হলে আমাদের জন্য সুবিধা হতো। অপর এক গাড়িচালক শামীম জানালেন, রাস্তায় গাড়ি রাখলে পুলিশ কেস করে মাঝেমধ্যে রেকার দিয়ে গাড়ি থানায় নিয়ে যায়। আবার মিছিল-মিটিং হলে গাড়িতে ঢিল মারে। রাস্তায় পার্কিং-এ অনেক ঝামেলা।

No comments

Powered by Blogger.