নিরাপদে বিমানবন্দর ছাড়লেন লতিফ

ঢাকায় ফিরলেন সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে দেশে ফিরলেও তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। বরং বিমানবন্দর থেকে তাঁকে নিরাপদে চলে যেতে সহায়তা করা হয়েছে। লতিফ সিদ্দিকী আজ রোববার রাত আটটা ৪০ মিনিটে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে কলকাতা থেকে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
বিমানবন্দরে অবতরণের পর তিনি কিছু সময় ভিআইপি টার্মিনালে অবস্থান করেন। সেখানে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার লোকেরা তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। রাত নয়টার কিছু পরে ভিআইপি টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন সংস্থার লোকেরা তাঁকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টার্মিনালের ভেতর থেকে হাঁটিয়ে অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে নিয়ে আসেন। এরপর সেখান থেকে লতিফ সিদ্দিকী গাড়িতে করে চলে যান। তবে কোনো সূত্র নিশ্চিত করতে পারেনি সেখান থেকে লতিফ সিদ্দিকী কোথায় গেছেন।
বিমানবন্দরে অবস্থানকালে প্রথম আলোর প্রতিবেদক লতিফ সিদ্দিকীর মোবাইলে ফোন করলে তিনি তা ধরেন। তবে কোনো কথা বলবেন না বলে জানান।
লতিফ সিদ্দিকী গত ২৮ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে হজ, তাবলিগ জামাত ও প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেন। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিত্ব থেকে তাঁকে অপসারণ করা হয়। অপসারণের আগে তিনি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছিলেন। একই কারণে তাঁকে দলীয় পদ ও দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
১৮ জেলার ২২ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
ধর্মীয় অনভূতিতে আঘাত হানার জন্য লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ঢাকা ও দেশের ১৮টি জেলায় তাঁর বিরুদ্ধে ২২টি মামলা হয়। নির্ধারিত সময়ে আদালতে হাজির না হওয়ায় প্রতিটি মামলায় আদালত তাঁর বিরুদ্ধে প্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
যা বলেছিলেন লতিফ সিদ্দিকী.....
২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি হোটেলে সেখানকার টাঙ্গাইল সমিতির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী। তবে তার চেয়েও হজ ও তাবলিগ জামাতের বেশি বিরোধী।’ তিনি বলেন, ‘এ হজে যে কত ম্যানপাওয়ার (জনশক্তি) নষ্ট হয়। হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরবে গিয়েছে। এদের কোনো কাজ নাই। এদের কোনো প্রডাকশন নাই। শুধু রিডাকশন দিচ্ছে। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা দিয়ে আসছে।’
লতিফ সিদ্দিকীর এই বক্তব্যের পর পুরো দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। এ কারণে নিউইয়র্ক থেকে আর দেশে ফেরেননি। তিনি ভারতের কলকাতায় অবস্থান করছিলেন। প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বারবারই বলেছিলেন, তিনি দেশে ফিরবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঘটনার প্রায় দুই মাস পর দেশে ফিরলেন নানা কারণে বিতর্কিত এই মন্ত্রী।
লতিফ সিদ্দিকীকে নিয়ে যখন দেশে তোলপাড় চলছিল তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ছিলেন না। দেশে ফিরে তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, লতিফ সিদ্দিকী গর্হিত কাজ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন তিনি। এরপর ১২ অক্টোবর তাঁকে মন্ত্রী ও দলীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভায় ‘কেন তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে না’ এই মর্মে একটি শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়। ২২ অক্টোবরের মধ্যে তাঁকে জবাব দেওয়ার নির্দেশ নেওয়া হয়। কিন্তু জবাবে সন্তুষ্ট না হওয়ায় ২৪ অক্টোবর লতিফ সিদ্দিকীকে দলের সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। >প্রথম আলো
বিমানযাত্রীকে লতিফ সিদ্দিকী: ‘ভয় করি না’
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর একই বিমানে আসা এক নারী যাত্রীর প্রশ্নের মুখে লতিফ সিদ্দিকী জানিয়েছেন, তিনি নির্ভয়ে দেশে ফিরেছেন। ওই নারী যাত্রী বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে বলেন, ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া শেষ করার আগে লতিফ সিদ্দিকীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এসময় তিনি লতিফ সিদ্দিকীর উদ্দেশে বলেন, দেশের মানুষ আপনার প্রতি ক্ষুব্ধ। তারপরও আপনি দেশে ফিরেছেন কেন। আপনার কি কোন ভয় নেই। জবাবে লতিফ সিদ্দিকী ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, কিসের ভয়। আমি ভয় করি না। এসময় দুই যুবক তার দিকে অবাক হয়ে তাকালে লতিফ সিদ্দিকী ‘কি দেখছো’ বলে তাদের ধমক দেন। >মানবজমিন

No comments

Powered by Blogger.