চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে দুটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার ওপর জোর দিয়ে সরকারের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। শনিবার শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত আউটডোর কমপ্লেক্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, মানুষকে উন্নত সেবা দিতে চাইলে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে আরেকটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে আরও দুটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করব। ইতিমধ্যে সে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
চিকিৎসকদের গবেষণার ওপর জোর দেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোগীর ভোগান্তি কমাতে, অল্প খরচে চিকিৎসার জন্য গবেষণার কোনো বিকল্প নেই, তাই আপনারা গবেষণার ওপর জোর দিন। সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ডিভিশনের মেডিকেল কলেজ স্থাপনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন এলাকায় আমাদের সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ডিভিশন আছে, সেখানে হাসপাতাল আছে। তাদের আমি নির্দেশ দিয়েছি যেখানে ৫০০ বেডের ওপর হাসপাতাল আছে সেখানে তারা মেডিকেল কলেজ তৈরি করতে পারবে।
মেডিকেল কলেজগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অ্যাফিলিয়েটেড (অধিভুক্ত), তেমনি আমাদের সরকারি মেডিকেল কলেজগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অ্যাফিলিয়েটেড হতে হবে। আমরা বিভিন্ন বিভাগীয় যেসব বিশ্ববিদ্যালয় করব সেগুলোর সঙ্গে এগুলো অ্যাফিলিয়েটেড থাকতে হবে। যাতে তাদের ডিগ্রিগুলো উচ্চমানের হয়। এ বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ আপনাদের তরফ থেকে আমরা চাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্টদের কমলাপুরে রেল হাসপাতালকে জেনারেল হাসপাতালে পরিণত করার উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেন। ঢাকাকে উত্তর, দক্ষিণ জোনে ভাগ করে হাসপাতাল নির্মাণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
চিকিৎসকদের রোগীদের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করাটা বেশি দরকার। একজন ডাক্তার যতই ওষুধ খাওয়ান, তার চেয়ে রোগী বেশি ভালো হয় একটু আলাপ করলে, কথা বললে, তাদের বুঝিয়ে দিলে। ব্যবহারের ওপর রোগী অনেক ভরসা পায়। রোগীর মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে তার আরোগ্য লাভের ক্ষেত্রে সুবিধা হয়।
ভবিষ্যৎ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী জাতি গড়তে সরকার কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সেবাসহ মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সরকার পরিকল্পিতভাবে মানুষকে সেবা দেয়ার জন্য কাজ করছে। হাসপাতালগুলোতে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ও মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে আধুনিকায়নের কথা তুলে ধরেন তিনি। নার্সদের মর্যাদা বৃদ্ধিসহ তাদের প্রশিক্ষণে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
চিকিৎসক নিয়োগের বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে ৮ হাজার ৮৫৭ জন সহকারী সার্জন ও সহকারী ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া এডহক ভিত্তিতে ৪ হাজার ১৩৩ জন সহকারী সার্জন নিয়োগ করা হয়েছে। অতীতে এত নিয়োগ কেউ দেয়নি। বিএনপি আমলে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম কমিউনিটি ক্লিনিকের বিভিন্ন সুবিধার কথা তুলে ধরে বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক কনসেপটা একদিন সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়বে।
বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় পেপারলেস ম্যানেজমেন্টের দিকে যাচ্ছে জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও অনুষ্ঠানের সভাপতি অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, সব তথ্য ডিজিটালাইজড করে ওয়েবসাইটে দেয়া হবে। যাতে মানুষ আরও সহজে সেবা পেতে পারে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালিক, স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.