‘চমকে উঠেছি বিস্মিত হইনি’ by চৌধুরী মুমতাজ আহমদ

সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলার সম্পূরক চার্জশিটে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নাম অন্তর্ভুক্তির পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান- এমন ফিসফিসানি কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে সিলেট নগরীতে। সিটি নির্বাচনে আরিফের কাছে হারের শোধ তুলতেই তাকে মামলার ফাঁদে ফেলেছেন কামরান- এমন সন্দেহ অনেকের। তবে সব কানাঘুষা এক বাক্যে উড়িয়ে দিলেন সিলেটের সাবেক নগরপিতা কামরান। তিনি বলেন, এ ধরনের মানসিকতা আমার নেই। আর জাতীয় নেতা কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের আলোচিত মামলায় কাউকে জড়ানোর মতো ক্ষমতা আমার আছে বলেও মনে করি না। তার মন্তব্য, সব কিছুই হয়েছে আইনি প্রক্রিয়ায়।
মামলার চার্জশিটে এককালের সহকর্মী আরিফের নাম দেখে বিস্মিত হয়েছেন কিনা জানতে চাইলে কামরানের জবাব- চমকে উঠেছি তবে বিস্মিত হইনি। কেন বিস্মিত হননি- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ হত্যাকাণ্ডটি যখন ঘটে তখন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায়। দেশজুড়ে তখন ত্রাসের রাজত্ব তৈরি হয়েছিল। মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল জঙ্গিবাদ-বোমাবাজি। মেয়র কামরান বলেন, বোমাবাজির সে রাজনীতিতে সিলেট বারবারই ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। আমিও দু’বার বোমা হামলার শিকার হয়েছি। আমি বেঁচে গেলেও আমাদের সহযোদ্ধা মো. ইব্রাহীমকে প্রাণ দিতে হয়েছে, আহত হয়েছিলেন দলের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। হামলার শিকার হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, বৃটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী। এসব বোমাবাজির প্রতিবাদেই ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট রাজধানীতে র‌্যালির আয়োজন করা হয়। বোমা হামলার ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে সেখানেও। সেই হামলায় শেখ হাসিনা রক্ষা পেলেও নিহত হন আইভি রহমানসহ ২৪ জন। তখন সব কিছুই হাওয়া ভবন থেকে নিয়ন্ত্রিত হতো। হাওয়া ভবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কারও বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে তাতে অস্বাভাবিকতার কিছু নেই। আরিফের সঙ্গে হাওয়া ভবনের সম্পৃক্ততা ছিল কিনা সে সম্পর্কে অবশ্য কোন ধারণা নেই সাবেক মেয়রের। তবে তিনি বলেন, দলের একজন প্রভাবশালী নেতা হিসেবে হাওয়া ভবনের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা থাকারই কথা।
মেয়র আরিফ কি কোন ষড়যন্ত্রের শিকার? সেটা মনে করেন না সিলেট নগরের রাজনীতিতে আরিফের প্রধান প্রতিপক্ষ কামরান। তিনি বলেন, কোন প্রমাণ ছাড়া নিশ্চয়ই তাকে চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করেননি তদন্ত কর্মকর্তা। সরাসরি না হলেও যত দূর জানতে পেরেছি হত্যা পরিকল্পনায় আরিফেরও অংশগ্রহণ ছিল। তদন্ত কর্মকর্তা যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কাউকে অন্তর্ভুক্ত করেন সে জন্য তাকেও জবাবদিহি করতে হবে। কামরান বলেন, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন।
মেয়র আরিফের এখন কি করণীয় হতে পারে, অভিজ্ঞতা থেকে সাবেক মেয়র কামরানের পরামর্শ- তিনি যদি দোষী না হন তবে তা আইনি প্রক্রিয়ায়ই মোকাবিলা করা উচিত। কোনভাবেই তার আত্মগোপনে চলে যাওয়া উচিত নয়। এমনটি হলে মানুষের মনে সন্দেহ জাগতে পারে। তিনি নির্বাচিত প্রতিনিধি। তার ওপর সাধারণের অনেক প্রত্যাশা। সে সব পূরণের লক্ষ্যে তাকে সাধারণের কাছাকাছিই থাকা উচিত। আমার ওপর যখন মামলার অভিযোগ উঠেছিল তখন আমি সাধারণের পাশ ছেড়ে যাইনি। কেউ আমাকে এ অপবাদ দিতে পারবে না। গ্রেপ্তার হয়েছি; কিন্তু পালিয়ে যাইনি।
আরিফও কি গ্রেপ্তার হতে পারেন? মেয়র কামরান বলেন, আদালতে যেহেতু অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছে সে ক্ষেত্রে তিনি গ্রেপ্তার হতেই পারেন। গ্রেপ্তার হলে কি আরিফ মেয়র পদে থাকবেন? কামরানের মন্তব্য, আরিফ কেন যে কোন সরকারি কর্মকর্তাই ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে গ্রেপ্তার হলে পদ থেকে বরখাস্ত হবেন। নির্দোষ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত ফিরে যেতে পারবেন না স্বপদে। আর দোষী প্রমাণিত হলে তার পদই চলে যাবে। তিনি বলেন, আরিফ নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারলে আমার ভালই লাগবে।

No comments

Powered by Blogger.