'বিসিএস পরীক্ষায় কোটা সংস্কার হওয়া উচিত'

সরকারি কর্ম কমিশন পরিচালিত বিসিএস পরীক্ষায় কোটা পদ্ধতি পুনর্নির্ধারণ হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসির) সাবেক চেয়ারম্যান ড. সা'দত হোসাইন।
তিনি বলেন, 'আগে অনুন্নত জেলা হিসেবে মেহেরপুর মুজিবনগর থেকে শুরু করে অনেক অনগ্রসর জেলার শিক্ষিত বেকারদের সরকারি চাকরিতে যোগদানের সুযোগ দেওয়ার জন্য জেলা কোটা প্রবর্তন করা হয়েছিল। এখন আধুনিক যুগে অনেক জেলাই উন্নত বলে স্বীকৃত হয়েছে। আর এ কোটা পদ্ধতির কারণে অনেক পরীক্ষার্থী ৭৫ পেয়েও সুযোগ পায় না। আবার শুধু কোটার কারণে অনেকে মাত্র ৫৫ পেয়েও চাকরি পেয়ে যাচ্ছে।' তিনি বলেন, 'মেধার প্রকৃত বিকাশের স্বার্থে পিএসসির এ কোটা পদ্ধতি পুনর্মূল্যায়ন করা দরকার। এটা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে নেই। এ জন্য আমরা এ বিষয়টি সরকারের পুনর্বিবেচনার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। কিন্তু সরকার তা বিবেচনা করেনি। করলে আজকে শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে নামতে হতো না।'
শুক্রবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশনের সংবাদ পর্যালোচনাভিত্তিক টক শো নিউজ অ্যান্ড ভিউজ অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
সাংবাদিক গোলাম মোর্তজার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে পিএসসির সাবেক এ চেয়ারম্যান বিসিএস পরীক্ষার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনার শুরুতে সঞ্চালক জানতে চান, বিসিএস পরীক্ষার ফল নিয়ে ছাত্ররা যে আন্দোলন শুরু করেছে, এর শেষ কোথায় বা এ মুহূর্তে সরকারের কী করা উচিত?
জবাবে ড. সা'দত হোসাইন বলেন, 'পিএসসি তো বলেছে, তারা রেজাল্ট পুনর্বিবেচনা করবে। দেখা যাক, তারা শেষ পর্যন্ত কী করে। কিন্তু আসলে পিএসসি কোটা পদ্ধতি পরিবর্তন না করে যে কী সংস্কার করবে বা তাদের এ মুহূর্তে কি-ই বা করার আছে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কিছু করতে হলে আগে তাদের কোটা পদ্ধতি পুনর্বিবেচনা করতে হবে।' তিনি বলেন, 'শুধু কোটা পদ্ধতির কারণে মাত্র ৪৫ শতাংশ মেধাবীদের দ্বারা পূরণ করা হয়, আর ৫৫ শতাংশই কোটার ভিত্তিতে পূরণ করা হচ্ছে।' তিনি বলেন, 'আর যা-ই হোক স্ট্রেট জেলা কোটা বাদ দেওয়া উচিত। কারণ এখন আর কোনো জেলা অনুন্নত নেই। তাহলে মেধাবীদের জন্য ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।' পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, 'কোটা থাকতে পারে, কিন্তু মেধার চেয়ে কোটা বেশি থাকবে- এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।' এ বিষয়ে তিনি ড. আকবর আলি খান ও আবদুর রকিব কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে অনুরোধ করেন। আলোচনার এ পর্যায়ে সঞ্চালক গোলাম মোর্তজা জানতে চান, আন্দোলনকারীদের জন্য কিছু বলুন। তারা এখন কী করতে পারে?
জবাবে ড. সা'দত হোসাইন বলেন, 'অনেকে পরীক্ষা দিয়েছে। তারা এখন অপেক্ষায় আছে। এর মধ্যে কেউ পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে সরকারি চাকরিতে যোগদান করবে। আবার কেউ হয়তো কোট পদ্ধতির কারণে কাঙ্ক্ষিত পদে পৌঁছতে পারবে না। এ মুহূর্তে সরকার যেহেতু একটা উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে আরো কিছু সময় অপেক্ষা করা যেতে পারে। তবে কথা হলো, বিসিএস পরীক্ষা একটি চলমান প্রক্রিয়া। কেউ এক পরীক্ষায় ভালো করতে না পারলে আরেক পরীক্ষায় ভালো করবে। এ নিয়ে মন খারাপের কিছু নেই। কারণ হতাশ হলে তো আর সামনে এগোনো যাবে না।' তিনি বলেন, 'প্রতি মাসেই জেলা-উপজেলা থেকে কর্মকর্তারা অবসরে যাচ্ছেন। সে হিসাবেই পদ খালি হয় এবং এসব পদের বিপরীতে লোকবল নিয়োগের জন্য বিসিএস পরীক্ষা আহ্বান করা হয়। কিন্তু কথা হলো, যেসব উপজেলা ও থানার পদ খালি হয়, সেসব জায়গায় ঠিকমতো পদ পূরণ হয় না।' তিনি বলেন, 'যেসব থানা বা উপজেলায় পদ শূন্য হয়, সেসব উপজেলা বা থানায় যদি সময়মতো লোকবল নিয়োগ করা না যায়, তবে সেসব এলাকায় অনেক অসুবিধা হয়। লোকজন সাফার করে। সরকারের উচিত সেসব অসুবিধা বিবেচনায় নিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে থানা ও উপজেলার কর্মকর্তা নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়া। তাহলেই সুষম উন্নয়ন সম্ভব। প্রশাসনে গতিশীলতা আসবে।'
এদিকে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলার টক শো লিড নিউজ অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে সাংবাদিক সেলিম সামাদ বলেছেন, 'তিনি ব্যক্তিগতভাবে কোটা পদ্ধতির বিপক্ষে।' তিনি বলেন, 'আমাদের দেশে লাখ লাখ মুক্তিযোদ্ধা আছেন। কতজনের সন্তান চাকরি পায়।' তিনি বলেন, 'আদীবাসীরাও তো এ দেশের সন্তান। তারা ভালো চাকরি পাক, তা আমরা চাই। কিন্তু দেখুন, আদিবাসীদের অনেকে উচ্চশিক্ষাই পায় না। তাহলে আর তাদের জন্য কোটা পদ্ধতি রেখে লাভ কী!' কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন বিষয়ে বলেন, 'আন্দোলন প্রথমে ঠিক ছিল। কিন্তু পরের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে ঢিল ছোড়া, মঙ্গল শোভাযাত্রার উপকরণে আগুন দেওয়া ইত্যাদির কারণে আন্দোলন অন্যদিকে মোড় নিয়েছে। তাই এ আন্দোলন ফলপ্রসূ হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে।' অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক মানস ঘোষ।

No comments

Powered by Blogger.