কোটি ডলারের ভবন ধুলায় মেশাবে যুক্তরাষ্ট্র!

ফুটবল মাঠের চেয়ে বড় জায়গাজুড়ে দোতলা একটি ভবন। প্রায় তিন কোটি ৪০ লাখ ডলার ব্যয়ে নির্মিত ভবনটির ভেতরে সারি সারি চেয়ার-টেবিলে সাজানো বিরাট এক অপারেশন সেন্টার, সভাকক্ষ, কর্মকর্তাদের বসার জন্য বড় বড় কক্ষ, শক্তিশালী শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও অত্যাধুনিক সব আসবাব।
যুদ্ধ চালানোর মতো অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি রয়েছে ক্যাম্প লেদারনেক নামের এই স্থাপনায়। আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিন বাহিনীর সদরদপ্তর হিসেবে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে চলতি বছরের শুরুতে। কিন্তু একটি জিনিসেরই ঘাটতি আছে সেখানে। যাদের জন্য তৈরি হয়েছে, এখন পর্যন্ত তাদের পায়ের চিহ্ন পড়েনি ভবনটিতে। মার্কিন বাহিনী দেশে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে পুরোদমে। ভবিষ্যতে মানুষের পদচারণা দূরে থাক, ভবনটির অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আফগানিস্তানের আরো কয়েকটি জায়গায় এরকম মার্কিন স্থাপনাকে পেন্টাগনের অব্যবস্থানার নমুনা বিবেচনা করা হচ্ছে।
গত মাসের মাঝামাঝি ন্যাটো বাহিনী আফগান নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর হাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব হস্তান্তর করে। আফগানিস্তানে রয়ে যাওয়া ৬৮ হাজার মার্কিন সেনারও ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। ২০১৪ সালের শেষ নাগাদ সব সেনা আফগানিস্তান ছেড়ে যাবে। আফগান বাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও সহায়তার জন্য ২০১৪ সালের পরও বিদেশি সেনা রয়ে যাওয়ার যে সম্ভাবনা ছিল, কারজাই সরকারের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কে অবনতির কারণে তাও যেতে বসেছে। এই অবস্থায় আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর জন্য অত্যাধুনিক স্থাপনাগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে সেনাসংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। পেন্টাগনের কর্মকর্তারা ওই এলাকায় মেরিন বাহিনীর জন্য একটি আধুনিক পরিচালনা কেন্দ্রের প্রয়োজন বোধ করেন। সেই অনুযায়ীই হেলমান্দে ক্যাম্প লেদারনেক স্থাপনের কাজ শুরু হয়। ব্রিটিশ এক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ২০১১ সালের নভেম্বরে এর কাজ শুরু করে। কিন্তু তত দিনে ওবামা সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে ফেলেছেন। ২০১২ সালে হেলমান্দে সেনার সংখ্যা ২০ হাজার থেকে সাত হাজারে নেমে আসে। প্রায় দেড় হাজার কর্মকর্তার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ক্যাম্প লেদারনেকের কাজ এ বছরের শুরুতে যখন শেষ হয়, তখন হেলমান্দে মার্কিন সেনার সংখ্যা চার শরও নিচে।
কান্দাহারে মার্কিন সেনাদের জন্য সাড়ে চার কোটি ডলার ব্যয়ে একটি ভবনের কাজ শেষ হয়েছে সম্প্রতি। এখন ভবনটি ব্যবহৃত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠাতে যানবাহন ও অন্য সরঞ্জামের গুদাম হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরও অর্থ অপচয়ের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখেছে আফগানিস্তানে। দেশটির উত্তরাঞ্চলে একটি দূতাবাস স্থাপনের জন্য আট কোটি ডলারে ১০ বছরের জন্য একটি ভবন লিজ নেয় তারা। কিন্তু খুব সহজেই জঙ্গি হামলার শিকার হতে পারে উল্লেখ করে সেখানে দূতাবাস স্থাপনের সিদ্ধান্ত বাতিল করে তারা।
ক্যাম্প লেদারনেক সম্পর্কে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই তারকা মেরিন জেনারেল বলেন, 'বিশ্বের যেকোনো জায়গার মেরিন সদর দপ্তরের চেয়ে এটি সুসজ্জিত। কিন্তু বিলাসী এই ভবন নির্মাণের যৌক্তিকতা কখনোই ছিল না। কি ভেবে কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিল?'
ক্যাম্প লেদারনেক সম্পর্কে তদন্তের জন্য আফগানিস্তান পুনর্গঠনের দায়িত্বে নিয়োজিত মার্কিন মহাপরিদর্শক জন এফ সোপকো গত সোমবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হেগেল বরাবর এক চিঠি পাঠিয়েছেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের অপচয় ঠেকানোর বিষয়ে ভাবার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। তবে ক্যাম্প লেদারনেকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিতই রয়ে গেছে। এটি আফগান বাহিনীর হাতে হস্তান্তরের সম্ভাবনা খুবই কম। আফগান বাহিনীগুলো এটি পরিচালনার সামর্থ্য রাখবে কিনা, মার্কিন কর্মকর্তারা সে ব্যাপারে সন্দিহান। আফগান সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কও এর ওপর প্রভাব রাখবে। হস্তান্তর করতে না পারলে ভবনটি ধ্বংস করে রেখে যাওয়াকেই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত মনে করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট।

No comments

Powered by Blogger.