অনলাইন থেকে-জাতিসংঘে মালালা

মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা পাকিস্তানি কিশোরী মালালা জাতিসংঘে বক্তব্য উপস্থাপন করলেন গত শুক্রবার। সেদিন ছিল তাঁর ১৬তম জন্মদিন। মেয়েদের শিক্ষার সমসুযোগ চাইছিলেন বলে মালালা তালেবানের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন; কিন্তু মালালা থেমে যাননি তার পরও।
জাতিসংঘের সব সদস্য, সেক্রেটারি জেনারেল, সারা দুনিয়ার বহু শিশু-কিশোরের উপস্থিতিতে তিনি আবেদন জানালেন, প্রত্যেক মেয়ের শিক্ষালাভের অধিকার রয়েছে। স্কুলে যাওয়ার অধিকার রয়েছে। লক্ষণীয় ছিল তাঁর পরিধেয় পোশাকও। গোলাপি রঙের শাল জড়িয়ে নিয়েছিলেন গায়ে। আর এর পেছনের কথা হচ্ছে- পাকিস্তানে দুবার নির্বাচিত মহিলা প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোও এই ধরনের শাল ব্যবহার করতেন, যিনি পাকিস্তানে মালালার মতোই আক্রান্ত হয়েছিলেন, ২০০৭ সালে যাঁকে প্রাণ হারাতে হয়েছিল।
উদ্দীপনামূলক বক্তৃতায় মালালা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করলেন, ২০১২ সালের ৯ অক্টোবর তাঁর স্কুলবাসে মুখোশধারী ঘাতকরা তাঁকে খোঁজাখুঁজি করে। পেয়েও যায় এবং সেখানেই তাঁকে গুলিবিদ্ধ করে। সহযাত্রী আরো দুই শিক্ষার্থীও সেদিন আহত হয়েছিল ওদের গুলিতে। মালালা বলেন, ওরা মনে করেছিল এই বুলেটে বোধহয় আমরা চিরতরে স্তব্ধ হয়ে যাব। ওরা দেখতে পেয়েছে আমাদের কয়েকজনের কণ্ঠ সেদিন বন্ধ হয়েছিল মাত্র সাময়িকভাবে; কিন্তু এই কয়েকটি কণ্ঠ অতি দ্রুত লাখো কণ্ঠে রূপান্তরিত হয়েছিল। মালালা উদারতা দেখিয়েছেন তালেবানকে ক্ষমা করে দেওয়ার মাধ্যমে। তিনি বলেছেন, কোনো সন্ত্রাসী জঙ্গি তালেবানের বিরুদ্ধে বলার জন্য আমি আসিনি। আমি চাই পৃথিবীর সব ছেলে ও মেয়ের শিক্ষার সুযোগ দেওয়া হোক। আমি তালেবানের বিচার চাইতে এখানে আসিনি। আমি বলব, দুনিয়ার সব জঙ্গি ও তালেবানের ছেলে ও মেয়েদেরও প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করার সুযোগ দিতে হবে। শিক্ষালাভ করা তাদের অধিকার। মালালা অহিংসার শিক্ষা পেয়েছেন মার্টিন লুথার কিং, যিশু খ্রিস্ট, নেলসন ম্যান্ডেলা ও মাদার তেরেসার কাছ থেকে। তিনি বলেন, হিংসা নয়, আমি শান্তি চাই। এই শিক্ষা আমার মা-বাবাও আমাকে দিয়েছেন। ২০০৯ সালে ব্লগের মাধ্যমে মালালা পাকিস্তানি তালেবানের দ্বারা নারী শিক্ষার পথ রুদ্ধ করে দেওয়ার প্রতি সারা দুনিয়ার মানুষের দৃষ্টি আনেন। পশ্চিমের সাংবাদিকরা অধিকতর উৎসাহী হয়ে দৃষ্টি দেন পাকিস্তানের সোয়াত অঞ্চলে তালেবান অধ্যুষিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার দিকে। মালালা ২০০৯ সালে যেমন বলেছেন, গত শুক্রবারও জাতিসংঘে এসে তাই বললেন। তিনি বললেন, আমার শিক্ষা গ্রহণ করার অধিকার আছে, আমার খেলার অধিকার আছে, স্বাধীনভাবে আমি গাইতে পারি, সেই অধিকারও আমার আছে, স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার, মুক্ত মানুষ হিসেবে বাজারে যাওয়ার অধিকার থেকেও কেউ বঞ্চিত করতে পারে না আমাকে। তালেবান মনে করেছিল আমার কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে যাবে; কিন্তু আমার উদ্দম বেড়েছে, শক্তি বেড়েছে, আমার সাহস বেড়েছে অনেক। আমি মরিনি।
লেখক : অ্যাসলে ফানজ
সিএনএন থেকে ভাষান্তর মোস্তফা হোসেইন

No comments

Powered by Blogger.