ঘুমধুম পাহাড়ে ২৫ একর ভূমিতে গড়ে উঠেছে কুমিরের খামার লোনা পানির কুমির ডিম দিচ্ছে উঁচু পাহাড়ে by আব্দুল কুদ্দুস

লোনা পানির কুমির ডিম দিচ্ছে উঁচু পাহাড়ে। কুমিরের দৌড়ঝাঁপ দেখতে লোকজন ভিড় জমাচ্ছেন সেখানে। পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দুর্গম ঘুমধুম পাহাড়ে প্রায় ২৫ একর ভূমিতে গড়ে ওঠা ‘আকিজ ওয়াইল্ড লাইফ ফার্ম লিমিটেড’ নামের কুমির প্রজননকেন্দ্রে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
গত সোমবার দুপুরে এখানে গিয়ে দেখা গেছে উঁচু পাহাড়ে তৈরি খামারের বিভিন্ন বেষ্টনীতে ঘুরে বেড়াচ্ছে শতাধিক কুমির। পাহাড়ের নিচে হ্রদের তীরেও দু-একটি কুমির চোখে পড়ে। খামারের কর্মচারীদের কেউ ডিম সংগ্রহ করছেন, কেউবা কুমিরকে মুরগি খাওয়াচ্ছেন। বেড়াতে আসা পর্যটকেরা নিরাপদ দূরত্বে থেকে এসবেরই ছবি তুলছিলেন ।
খামারের প্রকল্প পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ২০১০ সালে মালয়েশিয়া থেকে আনা ৫০টি লোনা পানির কুমির দিয়ে এই প্রকল্পের যাত্রা শুরু। খামারের ৫০টি কুমিরের মধ্যে ৩১টি স্ত্রী কুমির। এখন পর্যন্ত স্ত্রী কুমিরেরা যে ডিম দিয়েছে সেসব ফুটে ১০০টির মতো বাচ্চা হয়েছে।
খামারের কর্মকর্তারা জানান, গত ১৫ জুন কেবল একটি কুমিরই ৪২টা ডিম দিয়েছে। আরও ১৪টি স্ত্রী কুমির ডিম দেওয়ার অপেক্ষায় আছে। কুমির একসঙ্গে ৩০ থেকে ৫০টা পর্যন্ত ডিম দেয়। তাও বছরে একবার। ডিম ছাড়ার সময় হলে কুমির ডাঙায় উঠে এসে লতাপাতা দিয়ে বাসা বানায়। তারপর ওই বাসায় ডিম দেয়। সেখান থেকে ডিমগুলো সংগ্রহ করে প্রকল্পের কর্মচারীরা প্রজননকেন্দ্রে সংরক্ষণ করেন। তারপর বৈদ্যুতিক উপায়ে তাপ দিয়ে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো হয়। বাচ্চা ফোটাতে সময় লাগে ৮০ থেকে ৯০ দিন অর্থাৎ প্রায় তিন মাস। খামারের ১২ জন কর্মচারী এসব কুমিরের দেখাশোনা করেন।
আরও জানা গেল, ১০ বছর বয়সে স্ত্রী কুমির ডিম দেওয়ার উপযুক্ত হয়। বাচ্চার বয়স দুই বছর হলে লিঙ্গ শনাক্ত করা যায়। লোনা পানির এই কুমির সর্বোচ্চ ১০০ বছর পর্যন্ত বাঁচে।
কুমির সংরক্ষক সুমন মিয়া বলেন, মুরগি আর গরুর মাংস কিমা করে বাচ্চাগুলোকে দিনে একবার এবং বড়গুলোকে সপ্তাহে একবার খেতে দেওয়া হয়। এক-একটির জন্য আড়াই কেজি করে মাংস অথবা মাছ প্রয়োজন হয়। তবে পূর্ণবয়স্ক কুমিরকে বেশি খেতে দেওয়া হয় না। বেশি খেতে দেওয়া হলে কুমিরের শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমে। তখন স্ত্রী কুমিরেরা ডিম দিতে পারে না।
প্রকল্প পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেই দেশের বৃহৎ এই কুমির প্রজননকেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে সাত কোটি টাকা। কুমিরের বাচ্চার বয়স ছয় বছর হলে বিক্রির উপযুক্ত হবে। ইউরোপে এই কুমিরের চাহিদা অনেক। প্রতিটি বাচ্চা কুমির বিক্রি হবে লাখ টাকায়।
এ ছাড়াও প্রকল্প ঘিরে পৃথক পাখি পার্ক ও প্রজাপতি পার্ক তৈরি করা হচ্ছে। বন্য পশুপাখি নিয়ে এখানে একটি মিনি চিড়িয়াখানা তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে বলে তিনি জানান। পাহাড়ে ও হ্রদের পানির মুক্ত পরিবেশে কুমির দেখতে আসা ঢাকার মগবাজারের পর্যটক দিলসাদ বেগম ও মনছুর আলম বলেন, দুর্গম পাহাড়ের চূড়ায় পানির কুমিরের দৌড়ঝাঁপ দেখে মনটা ভরে গেল। কিন্তু যোগাযোগব্যবস্থা খারাপ বলে অনেকে এখানে চাইলেই আসতে পারবে না।
কক্সবাজার শহর থেকে (কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক দিয়ে) প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে উখিয়া টেলিভিশন সম্প্রচারকেন্দ্র। এর পূর্ব দিকে পাহাড়ি পথে প্রায় দুই কিলোমিটার গেলেই কুমির প্রকল্পে পৌঁছানো যাবে। যাওয়া যায় রামু হয়েও। কক্সবাজার থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে রামু এবং রামু থেকে আরও ৫০ কিলোমিটার দূরে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর। নাইক্ষ্যংছড়ি সদর হয়ে কিছুদূর এগোলেই কুমির প্রজননকেন্দ্র। কক্সবাজার থেকে সকালে যাত্রা করে কুমির প্রজননকেন্দ্র দেখে আবার বিকেলে ফিরে আসা যায়।

No comments

Powered by Blogger.