এক ওয়াজে বিতর্কের কেন্দ্রে আল্লামা শফী

দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, কর্মজীবী নারীর সংখ্যা এক কোটি ৭০ লাখ। দেশের অর্থনীতিতে নারীরা বড় ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। গার্মেন্ট শিল্পের প্রায় ৮০ শতাংশ কর্মীই নারী।
আবার দেশের প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা দুজনই নারী। জাতীয় সংসদের স্পিকারও নারী। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে পালা করে নারী নেতৃত্বেই দেশ পরিচালিত হচ্ছে। সেই নারীদের সম্পর্কে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শফীর অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য নিয়ে নিন্দার ঝড় বইছে দেশে। বিভিন্ন মহল থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হচ্ছে, সমগ্র নারীসমাজকে অপমান করা হয়েছে এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আল্লামা শফীর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
তবে হেফাজতে ইসলাম দাবি করেছে, আহমদ শফীর বক্তব্য নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তাঁর বক্তব্য কুরুচিপূর্ণ নয়। ওয়াজের তেঁতুল প্রসঙ্গটিকে 'গ্রামাঞ্চলের মানুষের বোধোদয়ের জন্য ওয়াজে বিভিন্ন উদাহরণ দেওয়ার কৌশল' হিসেবে গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে সংগঠনটি উল্লেখ করেছে। এতে আরো বলা হয়, 'আহমদ শফী নারীদের ঘরে বন্দি রাখার কথা বলেননি। তবে পরিবারে নারীদের প্রধান দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।'
অন্যদিকে আল্লামা শফীর সংগঠন হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টির টানাটানি নিয়েও সমালোচনা কম হচ্ছে না। এসব দলের নেতারা সম্প্রতি পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাঁদের সমর্থিত প্রার্থীকে হেফাজতে ইসলাম সমর্থন দিয়েছে বলে প্রচার করেছেন। প্রশ্ন উঠেছে, 'মায়ের জাতি' নারীকে নিয়ে এমন বক্তব্য দিতে পারেন যে আল্লামা শফী, তাঁর সংগঠন হেফাজতের সমর্থন নিতে কেন যাবে রাজনৈতিক দলগুলো? তাহলে কি মায়ের সম্মানের চেয়ে ভোটের রাজনীতিই তাদের কাছে বড়?
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শফীর এক ওয়াজের ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে ছড়িয়ে পড়ার পর বিভিন্ন মহল থেকে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। ওই ওয়াজে আল্লামা শফী বলেন, 'মহিলারা তেঁতুলের মতো। ছোট্ট একটা ছেলে তেঁতুল খাইতেছে, আপনে দেখতেছেন, আপনার মুখ দিয়া লালা বাইর হবে।... মার্কেটে যেখানে তেঁতুল বিক্রি করে, ওদিকে যদি আপনি যান, আপনার মুখ থেকে লালা বাইর হয়। মহিলারা তার থেকেও বেশি খারাপ। মহিলাদের দেখলে দিলের মইধ্যে লালা বাইর হয়...।'
গতকাল গণভবনে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'আল্লামা শফীর একটা বক্তব্য দু-এক দিন ধরে টেলিভিশনে দেখছি। তিনি যা বলেছেন, তা অত্যন্ত জঘন্য বলে আমি মনে করি। উনি মেয়েদের সম্পর্কে অত্যন্ত নোংরা ও জঘন্য কথা বলেছেন।' শেখ হাসিনা বলেন, 'ওনার কি মা নেই? উনি কি মায়ের পেট থেকে জন্মাননি? ওনার কি বোন-স্ত্রী নেই? আমাদের মা-বোন-স্ত্রীদের সম্মান তো আমাদের রক্ষা করতে হবে।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম ধর্ম প্রথম যিনি গ্রহণ করেছিলেন, তিনি বিবি খাদিজা। আর কেউ সাহস করে তা করেননি। এটা ওনার (শফী) মনে রাখা উচিত ছিল।' এ সময় প্রধানমন্ত্রী ইসলামে নারীর ভূমিকা সম্পর্কে বলেন, 'ইসলাম ধর্মে যে জেহাদ হয়, সেই জেহাদে প্রথম যিনি শহীদ হন, তিনি বিবি সুমাইয়া।' গণজাগরণবিরোধী হেফাজতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, 'এই নারী নেতৃত্বকে মেনে নিয়েই আবার তাদের সম্পর্কে এই নোংরা আর জঘন্য কথা বলা!'
তবে আল্লামা শফী সৌদি আরবে থাকায় এ বিষয়ে তাঁর কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
নারী নেত্রীরা বলছেন, এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া অসভ্যতা ও বর্বরতা। অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, এটা কোনোভাবেই ধর্মের কথা হতে পারে না। কারণ ইসলাম নারীদের নিয়ে কখনোই এ ধরনের কথা বলেনি, ইসলাম নারীকে অসম্মান করেনি। বরং কোরআন শরিফে নারীকে সম্মান, মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। শফী সাহেব তাঁর মাকে অপমান করেছেন, কারণ তাঁর মা-ও একজন নারী। নারী কখনো তেঁতুল হতে পারে না। নারী মানুষ এবং মানুষকে দেখে কখনো কোনো মানুষ লোভাতুর হতে পারে না।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, 'এমন অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য আর হতে পারে না। এ বক্তব্য এ দেশের শাসনতন্ত্রের নীতিমালাবিরোধী। আমরা বিস্মিত হয়েছি, কিভাবে একটা ধর্মের কথা বলে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিচ্ছেন শফী।' তিনি বলেন, 'এ বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীও নিন্দা জানিয়েছেন। বিরোধীদলীয় নেত্রীর কাছেও আমাদের প্রশ্ন, আল্লামা শফীর এমন কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যে তাঁর মন্তব্য এবং বক্তব্য কী? গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে তাঁরা রাজনৈতিক স্বার্থে এদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন। ফলে আজ শফী এমন নোংরা বক্তব্য দিয়ে নারীদের কটাক্ষ করার সাহস দেখাচ্ছেন।'
গত ৬ এপ্রিল ঢাকায় এক সমাবেশে হেফাজতে ইসলাম ১৩ দফা দাবি পেশ করে। এসব দাবির মধ্যেও ছিল নারী যেন ঘরের বাইরে গিয়ে কাজ করতে না পারে। সরকারের পক্ষ থেকে সে সময় বলা হয়েছিল, পর্যায়ক্রমে হেফাজতের দাবি মেনে নেওয়া হবে। সরকারের এ রকম নরম অবস্থানের কারণেই হেফাজতে ইসলাম দিনকে দিন পরোক্ষভাবে রাজনীতিতে প্রভাবশালী সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। সর্বশেষ সদ্যসমাপ্ত পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বলেছেন, হেফাজতে ইসলাম তাঁদের পক্ষে আছে। এভাবে বড় দুটি দল হেফাজতকে নিজেদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করেছে।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'যারা নারীদের নিয়ে এ ধরনের কথা বলে, আমি বলব তাদের চোখ, মন ও রসনার পর্দা করা উচিত। আল্লাহর চোখে মেয়েরা কখনোই খাটো নয়, শফীর মতো মানুষের চোখেই নারীরা খাটো।'
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, 'নারীদের নিয়ে এ ধরনের কটূক্তি নারীর অগ্রগতিকে থামিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা। নারীদের নিয়ে আল্লামা শফীর এ ধরনের বক্তব্যের নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই।'
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আল্লামা শফি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা আমি সরাসরি শুনিনি। তবে পত্রিকায় যা দেখেছি তা ভ্রান্তনীতি ছাড়া কিছুই নয়। একবিংশ শতাব্দীতে নারীরা সামনে এগিয়ে যাবে- এটাই স্বাভাবিক। ইসলামেও নারীদের পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া আছে। সেখানে নারীদের নিয়ে শফীর এ ধরনের মন্তব্য করা ঠিক হয়নি।' তিনি বলেন, গার্মেন্টের নারী শ্রমিকদের নিয়ে যেসব কথা বলা হয়েছে তা হেফাজতের ভ্রান্তনীতি ছাড়া কিছুই নয়। কারণ গার্মেন্টের মেয়েরা চাকরি বাদ দিয়ে শুধু রান্নাঘরে থাকবে, এটাও তাদের ভ্রান্তনীতি। ইসলামে নারীদের পুরুষের সমান অধিকার দেওয়া আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, হজরত আয়েশা (রা.) ইসলামের পক্ষে যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন।
নারীদের নিয়ে এসব কথা বলার পরও কেন হেফাজতকে কাছে টানছেন এবং বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কী করবেন জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান বলেন, 'বাংলাদেশ ইসলাম ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর দেশ। ইসলামের আদর্শে বিশ্বাস করি আমরা। ইসলামের নীতি অনুযায়ী হেফাজতকে সমর্থন করেছি। এর বাইরে আর কিছু নেই। বিএনপি যদি ক্ষমতায় যায়, তখন এ ব্যাপারে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে। তবে হেফাজত যদি এভাবে বক্তব্য দিয়েই যায়, তাহলে হেফাজত সম্পর্কে সারা বিশ্বে ভ্রান্ত ধারণা জন্ম নেবে।' হেফাজতের ১৩ দফা দাবির সঙ্গেও বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, নারীরা মায়ের জাতি। তাদের মহানবী (সা.) পর্যন্ত মর্যাদা দিয়েছেন। তাই তাদের ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। তাদের প্রতি সম্মান দেখানোই হবে মানুষকে প্রকৃত ইসলামের অনুসারী করা।
তবে ধর্মভিত্তিক দলগুলো বলছে, বেখেয়ালে আল্লামা শফী এমন ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন সংগঠন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুস গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, আল্লামা শফীর বক্তব্যে নেংরামি উদ্দেশ্য ছিল না। এটা কোনো ওয়াজ মাহফিলে বেখেয়ালে তিনি বলে ফেলতে পারেন। তবে আরেকটু ভালো উদাহরণ দিলে ভালো হতো।
আল্লামা শফী তাঁর ওয়াজে গার্মেন্ট শিল্পের নারী শ্রমিকদের সম্পর্কে বলেছেন, 'গার্মেন্টে কেন দিছেন আপনার মেয়েকে? ফজরের পর ৭টা-৮টা বাজলে চলে যায়, রাত ৮টা, ১০টা, ১২টায়ও আসে না। কোন পুরুষের সঙ্গে ঘোরাফেরা করতেছে, তুমি তো জানো না...। জেনা কইরা কইরা টাকা রোজগার করতেছে...।'
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ড. ওয়াজেদ-উল-ইসলাম খান বলেন, 'যেখানে একজন সাধারণ মানুষও এ ধরনের চরম অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ কথা বলতে পারে না, সেখানে যাঁর নামের আগে আল্লামা রয়েছে তিনি কী করে এ কথা বলেন?' তিনি আরো বলেন, 'গার্মেন্টে নারীরা কাজ করে মানসম্মান ও সম্ভ্রম নিয়ে। আমার প্রশ্ন, আল্লামা শফী কী করে জানলেন গার্মেন্টের মেয়েরা পতিতাবৃত্তি করে?'
গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, 'এটা ভয়াবহ আপত্তিকর বক্তব্য। বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা আমরা ঘোরাচ্ছি। শফী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা যদি বাস্তবায়ন করতে হয় তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে। এর আগে হেফাজতে ইসলাম ১৩ দফা দিয়ে নারীদের ঘরে থাকার কথা বলেছিল। আমরা সে সময় বিরোধিতা করেছিলাম, এখনো করছি।'
জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, মাওলানা শফী নারীর প্রতি মানুষের ভয়ানক বিকৃতির উদাহরণ তৈরি করলেন, যেটা মুছে ফেলা দুষ্কর হবে। ৯৪ বছরের বয়স্ক এক লোক যেটা প্রত্যক্ষ করেছেন, সেটার কোনো পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু আমাদের বাবা, স্বামী, ভাই, বন্ধুরা যদি সবাই এমন হতো তাহলে পৃথিবী আজ এখানে আসত না।' সালমা আলী আরো বলেন, 'শফী তো শুধু নারী নয়, পুরুষদেরও অপমান করেছেন। আমি বুঝতে পারছি না, পুরুষরা কেন এর প্রতিবাদ করছে না? প্রতিটি পুরুষকে তিনি লালসাময়ভাবে উপস্থাপন করেছেন। কোনো পুরুষের কি এতে অপমানবোধ হয়নি?'
আল্লামা শফী তাঁর ওয়াজে নারীদের পঞ্চম শ্রেণীর বেশি পড়তে নিষেধ করেছেন। নারীশিক্ষা সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আপনার মেয়ে স্কুল, কলেজ ও ভার্সিটিতে লেখাপড়া করছে। আরে, ক্লাস ফোর-ফাইভ পর্যন্ত লেখাপড়া করান। বিবাহ-শাদি দিলে স্বামীর টাকা-পয়সার হিসাব যাতে কইরতে পারে, অতটুকু শিক্ষা দরকার।'
এ সম্পর্কে নারী নেত্রী সালমা খান বলেন, 'এ ধরনের মন্তব্যের মধ্য দিয়ে কেবল নারীদের হেয় করা হয়নি, ইসলাম ধর্মকে কটাক্ষ করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হচ্ছে, আল্লামা শফীর সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। তাঁর এ ধরনের অশ্লীল বক্তব্যে আমরা মর্মাহত হয়েছি। আমরা নারীসমাজ এ ধরনের বক্তব্যকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি এবং নিন্দা জানাই।'
এদিকে আল্লামা শফী মানসিকভাবে অসুস্থ উল্লেখ করে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছেন নারী নেত্রীরা। গতকাল সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র এবং পেশাজীবী নারীসমাজ আয়োজিত সমাবেশে এ দাবি ওঠে। বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা মিনুর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন পেশাজীবী নারীসমাজের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীনা হাফিজ, সেক্যুলার ইউনিটি বাংলাদেশের সদস্য কানিজ আকলিমা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, শফীর মন্তব্যে সমগ্র নারী জাতিকে অসম্মান করা হয়। তিনি কর্মজীবী নারীকে ঘরে থাকতে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া নারীদের অসভ্য বলেন। নারীকে ঘরের পুতুল বানানোর চেষ্টা কখনোই সফল হবে না।
বক্তারা বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধে নারীর অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। কিন্তু সেদিনও আমাদের ঘরে বসিয়ে রেখে যথারীতি নির্যাতন করেছিল তারা। তারা হচ্ছে এই জাতির প্রধান শত্রু। হেফাজত সৃষ্টির আরেক কারণ হলো নারীদের অধিকার হনন করা। আমরা শফীর এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই। তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাই।'
হেফাজতের বিবৃতি : গতকাল হেফাজতে ইসলামের পক্ষে এক বিবৃতিতে বলা হয়, হেফাজত আমির স্থান-কাল-পাত্রভেদে ওয়াজের কৌশল অবলম্বন করে আসছেন। গ্রামাঞ্চলের মানুষের বোধোদয়ের জন্য ওয়াজে বিভিন্ন উদাহরণ দেওয়ার কৌশলটি অতি পুরনো। যুগ যুগ ধরেই তা চলে আসছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, আল্লামা শফীর নামে প্রচারিত যেসব শব্দ ও ভাষাকে কুরুচিপূর্ণ আখ্যায়িত করা হচ্ছে, এ ধরনের ভাষা বই-পুস্তকে, বিভিন্ন বিজ্ঞাপন চিত্রে, স্বাস্থ্যবিষয়ক লিফলেট, বুকলেটে অহরহ দেখা যায়। এ ধরনের উদাহরণসংবলিত ওয়াজ যুগ যুগ ধরে গ্রামগঞ্জে চলে আসছে। এসব ওয়াজকে কখনো কুরুচিপূর্ণ বলতে শোনা যায়নি।
এতে আরো দাবি করা হয়, আহমদ শফী নারীদের ঘরে বন্দি রাখার কথা বলেননি। তবে পরিবারে নারীদের প্রধান দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তিনি কখনো নারীদের প্রয়োজনীয় শিক্ষার বিরুদ্ধে বলেননি। তবে প্রচলিত সহশিক্ষার কুফলের দিক তুলে ধরে এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন।
হেফাজতের পক্ষে ওই বিবৃতি দেন সংগঠনের সিনিয়র নায়েবে আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, নায়েবে আমির আল্লামা আবদুল মালেক হালিম, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী এবং আল্লামা মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী। আল্লামা শফীর বক্তব্যকে খণ্ডিতভাবে ধারণ করে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে বলেও দাবি করেছেন হেফাজত নেতারা। তাঁরা বলেন, 'গত ৫ মে মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতের ওপর গণহত্যার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে যখন নাস্তিক ও তাদের পৃষ্ঠপোষকতাকারীরা জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হতে শুরু করেছে, তখনই জনমতকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এ অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে।'
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, আল্লামা শাহ আহমদ শফী এ দেশের আলেমকুল শিরোমণি। বাংলাদেশে মুসলমানরা যাতে কোরআন-হাদিস তথা ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী জীবন যাপন করতে পারে, সে জন্য তিনি দিকনির্দেশনামূলক ওয়াজ করে আসছেন। তিনি ইসলামের ফরজ বিধান 'পর্দা' লঙ্ঘনের কুফল তুলে ধরেন সব সময়। নারী-পুরুষের বিবাহবহির্ভূত অবাধ-অবৈধ চলাচল ও মেলামেশার ফলে যে নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয় দেখা দিচ্ছে, তার ব্যাপারে বরাবরই সতর্ক করে আসছেন। পাশাপাশি পাশ্চাত্য বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রভাব ও অন্ধ অনুকরণ করে ইসলামের বিধান লঙ্ঘন করার কারণে সমাজে কোন ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে, তাও নিজস্ব ভঙ্গিতে মানুষের সামনে তুলে ধরে আসছেন।
হেফাজতে ইসলামের প্রতি দেশের মানুষের সমর্থন দেখে ভীত ও দিশাহারা হয়ে শাহবাগী নাস্তিক ব্লগার ও তাদের পৃষ্ঠপোষকরা আহমদ শফী সম্পর্কে অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপকৌশল গ্রহণ করেছে বলে বিবৃতিতে দাবি করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.