এমভি হোপ দুর্ঘটনা: অন্তত লাশের অপেক্ষায় স্বজনেরা ছয় নাবিকের পরিবারে উৎকণ্ঠা-ক্ষোভ by মাসুদ মিলাদ

আন্দামানে দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজ এমভি হোপের জীবিত উদ্ধার হওয়া নয় নাবিককে কাছে পেয়ে স্বজনেরা খুশিতে আত্মহারা। কিন্তু উল্টো চিত্র ছয় নাবিকের পরিবারে। নিখোঁজ আটজনের মধ্যে দুজনের মরদেহ খুঁজে পেলেও বাকি নাবিকদের এখনো খোঁজ নেই।
স্বজনেরা এখনো অপেক্ষায় অন্তত লাশের।
তবে তাঁদের উৎকণ্ঠা এখন ক্ষোভ হয়ে ঝরছে কণ্ঠে। টানা ১০ দিন পর গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত কোনো খোঁজ না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন তাঁরা। থাইল্যান্ডের নৌবাহিনীর উদ্ধার তৎপরতা বন্ধ। স্থানীয় নৌযানগুলো থেকে পাওয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করছে উদ্ধারের প্রক্রিয়া। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করার কথাও ভাবছেন নাবিকের স্বজনেরা।
নিখোঁজ নাবিক আলী হোসেনের ছেলে মো. জাকারিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এতদিন হয়ে গেল বাবার কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। জাহাজ মালিকের কোনো দেখা পাইনি।’ মালিক পক্ষ শুরুতে উদ্ধারে পদক্ষেপ নিলে তাঁর বাবার সন্ধান পাওয়া যেত বলে মনে করেন জাকারিয়া।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর নিজ বাড়ি থেকে আলী হোসেন প্রতিদিন বাবার খোঁজে চলে আসেন আগ্রাবাদে জাহাজ মালিকের মুখপাত্রের কার্যালয়ে। জাহাজ মালিক ট্রেডব্রিজ শিপিং কোম্পানির কোনো কর্মকর্তা নিখোঁজ নাবিকদের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিতেও দেখা করেননি বলে অভিযোগ তাঁদের।
এমভি হোপের নিখোঁজ নাবিক নাসির উদ্দিনের ভাই মো. মাসুদ হতাশ কণ্ঠে জানালেন, কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। উদ্ধার তৎপরতার কিছুই জানতে পারছি না। এমভি হোপের দ্বিতীয় প্রকৌশলী মো. নেজাম উদ্দিনের বাবা নূর মোহাম্মদ ছেলের খোঁজে অস্থির হয়ে পড়েছেন। জানালেন, ছেলের সন্ধানে যাতে তৎপরতা বাড়ানো হয়, সে জন্য সংবাদ সম্মেলন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এই তিন জনের মতো নিখোঁজ জাহাজের ক্যাপ্টেন রাজীবচন্দ্র কর্মকার, ইলেকট্রিশিয়ান সাদিম আলী এবং নাসির উদ্দিনের পরিবারেও একই অবস্থা।
এদিকে মৃত উদ্ধার হওয়া দুই নাবিকের পরিবার এখন মরদেহের অপেক্ষায় দিন গুনছে। জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা মাহবুব মোরশেদের পরিবারের অভিযোগ, মালয়েশিয়া ছেড়ে আসার সময় মাহবুব মোরশেদ মুঠোফোনে তাঁদের জানিয়েছেন, শিপিং জীবনে এত জরাজীর্ণ জাহাজ তিনি দেখেননি। আগে জানলে এমন জাহাজে উঠতেন না বলেও তিনি পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ৪ জুলাই প্রথম প্রহরে আন্দামান সাগরে এমভি হোপ জাহাজ দুর্ঘটনার পর দুই দিনের মধ্যে নয়জনকে জীবিত এবং দুজনকে মৃত উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে গত সপ্তাহে থাইল্যান্ডের ফুকেট উপকূলে লাইফ জ্যাকেট পরা চারজনের মরদেহ ভাসতে দেখেছেন স্থানীয় জেলেরা। তবে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এই চারজনের দেহ স্রোতের টানে ভেসে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জাহাজ মালিকের মুখপাত্র ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন আবদুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের মূল তৎপরতা ছিল নাবিকদের জীবিত বা মৃত উদ্ধার। এ জন্য নিখোঁজ নাবিকদের সন্ধানে পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে।’ কোনো খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় প্রতিনিধির মাধ্যমে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর জন্য প্রস্তুতি আছে বলে জানালেন তিনি।
জাহাজ মালিকের প্রতিনিধিরা জানান, থাইল্যান্ডে মৃত দুই নাবিকের ময়নাতদন্তসহ আনুষ্ঠানিক কাজ শেষ হওয়ার পর লাশ দেশে আনা হবে।

No comments

Powered by Blogger.