ইফতার রাজনীতি-সুসম্পর্কের সূত্র হতে পারে

রাজনৈতিক দলগুলোর আয়োজনে ইফতার মাহফিলকে ঘিরে প্রতিদ্বন্দ্বী নেতাদের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবছর। দৃষ্টি থাকে বড় দলগুলোর দিকে বেশি। প্রত্যেকে চান, বড় দুই দলের শীর্ষ নেতাদের একসঙ্গে দেখার সুযোগ তাঁরা পাবেন।
কিন্তু জাতীয় বিভিন্ন উৎসব, সামাজিক অনুষ্ঠানে তাঁদের এক হতে দেখা যায় না। তাঁদের এই আচরণকে সাধারণ মানুষ কখনোই ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। দেশের সুধীসমাজ ও সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দুই শক্তিকে ন্যূনতম ইস্যুতে এক হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। তাঁদের রাজনীতিকে ব্যক্তির আবরণে না ফেলার আহ্বানও জানানো হয়ে থাকে। তবে কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা যায় ইফতার অনুষ্ঠানে। প্রতিবারই রমজান এলে রাজনৈতিক দলগুলো ঘটা করে ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অন্তত এই একটি সময় তারা পাশাপাশি হওয়ার সুযোগ গ্রহণ করে; যদিও অনুষ্ঠানে দুই প্রধান নেত্রীর উপস্থিতি আমাদের চোখে পড়ে না। শুক্রবার ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে জাতীয় পার্টির আয়োজনে অনুষ্ঠিত ইফতার মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতা ও আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান তাঁদের এই উপস্থিতিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। একইভাবে বিএনপির ইফতার পার্টিতেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ সিনিয়র নেতাদের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। আওয়ামী লীগ শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে, এটা অনাকাঙ্ক্ষিত।
এ ধরনের অনুষ্ঠান প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সামাজিক বন্ধনকে দৃঢ় করে দেয়- এটাই একমাত্র বিষয় নয়। অন্তত তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী ও স্থানীয় নেতাদের মধ্যে এই মুহূর্তে যে অসহনশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা অনেকাংশে প্রশমন হবে। রাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষের অনাস্থার যে আশঙ্কা বিদ্যমান তাও কমে যাবে। এ ধরনের দেখা-সাক্ষাৎ হলে নেতাদের কথা ও কাজে অধিক মিল দেখা যেত। এর সুফল শুধু দলীয়ভাবেই পাওয়া যেত তা নয়। এর প্রভাব পড়ত সমাজজীবনেও। অন্তত স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা দলীয় স্বার্থ চিন্তা করতে গিয়ে যেভাবে অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে, সহিংসতাকেও লালন করে সে ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড কমে আসার সম্ভাবনা সৃষ্টি হতো। রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করবেন। সেখানে ক্ষমতা লক্ষ্য হতে পারে, সেই ক্ষমতা অর্জনের জন্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নেতাদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতার আবহ সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিশ্চয়ই শত্রুতা হতে পারে না। এ ধরনের সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান রাজনীতিবিদদের মধ্যে পারস্পরিক সহনশীলতা বাড়াতে পারে। গণতান্ত্রিক ভিত্তিকে শক্তিশালী করার জন্য এ ধরনের সমাবেশ অনুষ্ঠান তাই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা দিতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.