শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের ডাক-কোটাবিরোধীদের নামে চারজনের কাজ, শিবিরও আছে! by নূরে আলম দুর্জয়

বিসিএসসহ সব সরকারি নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা বাতিলসহ পাঁচ দফা দাবিতে আজ রবিবার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে এবং এ উদ্যোগ নিয়েছেন মাত্র চারজন শিক্ষার্থী।
কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এ চারজনের একজন শিবিরের সঙ্গে জড়িত। বাকি তিনজনের বিরুদ্ধেও শিবির করার অভিযোগ আছে। ধর্মঘট আহ্বানকারী চারজনের একজন কালের কণ্ঠের কাছে স্বীকার করেছেন, একটি কেন্দ্রীয় কমিটির নামে এ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হলেও আদৌ কোনো কমিটি হয়নি।
গতকাল শনিবার বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে পাঠানো এক ই-মেইল বার্তায় এ 'ধর্মঘটের' ডাক দেওয়া হয়। ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে চারজনের নাম থাকলেও তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করার কোনো সূত্র দেওয়া হয়নি। বিজ্ঞপ্তির শেষে উল্লেখ আছে, 'শাহবাগ মেধা চত্বর/পক্ষে ইসমাইল, লিংকন, রনি, মামুনসহ কেন্দ্রীয় কমিটি।'
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইসমাইল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের শিক্ষার্থী, লিংকন বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী, রনি ও মামুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থী।
শিবিরের একটি ফেসবুক গ্রুপের নাম 'বাঁশের কেল্লা'। এ গ্রুপ থেকেই কোটাবিরোধী আন্দোলনের মূল কলকাঠি নাড়া হচ্ছে বলে খোদ আন্দোলনকারীদের অনেকেই কালের কণ্ঠকে জানিয়েছে। ই-মেইল ঠিকানার সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উলি্লখিত মামুন (মামুন মাহমুদ) 'বাঁশের কেল্লা'র একজন সক্রিয় কর্মী। শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে বাকি তিনজনের বিরুদ্ধেও।
কোটা বাতিলের আন্দোলন ঘিরে কোনো কমিটি হয়েছে কি না- টেলিফোনে জানতে চাইলে গতকাল বিকেল সাড়ে ৬টায় রনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'না, কোনো কমিটি হয়নি।' সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে 'কেন্দ্রীয় কমিটি' শব্দটি উল্লেখ আছে বলে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে একটু থেমে তিনি বলেন, 'এটা আসলে কমিটি না। এ দাবি আদায়ে আন্দোলনে কোনো ডিসিপ্লিন না থাকায় আমরা এটা করেছি।' এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ভুল হলো কি না- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'না, এটা ভুল করে না। আমরা কয়েকজন একত্রে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই অর্থে।' কোনো সাংগাঠনিক কাঠামোর কথা অস্বীকার করেন তিনি।
আজকের ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে রনি বলেন, 'আমরা এক জায়গায় হতে পারছি না। এক জায়গায় হলে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। সে জন্য কয়েকজন মিলে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'
সব সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা পদ্ধতি একেবারেই তুলে দেওয়ার যৌক্তিকতা কী জানতে চাইলে রনি বলেন, 'আমরা এটা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছি। কোটা প্রথা বাতিল করতে হবে। এ দাবিতে আমরা অনড়।'
আপনাদের বিরুদ্ধে শিবির করার অভিযোগ রয়েছে- এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, 'আমাদের কারো বিরুদ্ধে এ রকম অভিযোগ নেই। আমাদের কারো বিরুদ্ধে এ অভিযোগ পেলে সে সম্পর্কে ব্যবস্থা নেব।'
কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের মধ্যেই অনেকে বলছে সব কোটা বাতিল নয়, বরং সংস্কার দরকার- প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রনি প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান।

No comments

Powered by Blogger.