ধূসর মুগ্ধতা by মৌলি আজাদ

সারা দিন ধরে টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছে। এই বৃষ্টির মধ্যে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে মফস্বল কলেজের অধ্যাপক রফিক যাত্রীছাউনিতে দাঁড়িয়ে আছেন। বেশ বিরক্তিই বোধ করছেন বলা যায়।
আর বিরক্তি বোধ না করেই বা উপায় কী, বৃষ্টির ছিটেফোঁটা বারবার রফিকের পাঞ্জাবিতে এসে পড়ছে, সেই সঙ্গে যাত্রীছাউনিতে কিলবিল করা লোকজনের ভিড়। কেউ বা পান খেয়ে পিক ফেলছেন, আবার কেউ বা মোবাইলে বিকট শব্দে আঞ্চলিক ভাষায় নানা গালগল্পে ব্যস্ত। ওদিকে বাসের দেখা নেই। এ অবস্থায় অধ্যাপক রফিকের বারবার ঘড়ি দেখা ছাড়া আর কীই-বা করার আছে। ঘড়ির কাঁটা যখন দুই ঘণ্টাও পার করে সামনে এগিয়ে চলছিল, সে সময়ই কাদাপানি ছিটাতে ছিটাতে বাসের আগমন। আর সেই সঙ্গে হুড়মুড় করে সবার বাসে ওঠার প্রয়াস। বাঙালির এ চিরন্তন অভ্যাসের কথা জানেন রফিক, কিন্তু নিজে বাঙালি হলেও তাদের সঙ্গে তাল না মিলিয়ে বেশ একটু ধীরপায়েই বাসে ওঠেন রফিক। ফলাফল বাসে সিট না পেয়ে ঝোলাবাদুড়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকা। বাসের ভেতরে নানা হইহল্লা, ধাক্কাধাক্কি চললেও সেসবে কান না দিয়ে একদৃষ্টিতে বাসের সামনের গ্লাসের দিকে তাকিয়ে থাকেন অধ্যাপক রফিক।
শুনছেন? রিনরিনে গলার আওয়াজে চোখ ফেরান অধ্যাপক রফিক।
গলার স্বরটা কিশোরীর মনে হলেও চেহারায় বোঝা গেল তিনি কিশোরী নন। সবুজ ডোরাকাটা শাড়ি পরা, চোখে চশমা (চশমার ভেতরে কালো কাজল দেওয়া চোখ দুটোই বারবার দৃশ্যমান হচ্ছিল যেন), শ্যামলাবর্ণা, মাঝারি গড়নের হাতখোঁপা করা এক নারী রফিককে সিটে বসতে বলছেন। কোনো কালেই নারীদের বয়স রফিক বুঝে উঠতে পারেননি, এবারও যথারীতি পারলেন না।
কী ব্যাপার, বসুন।
সবুজ শাড়ি পরা মহিলার দ্বিতীয়বার বসার আহ্বান পেয়ে এতক্ষণ ধরে উল্টাপাল্টা কথা চিন্তা করার জন্য ভেতরে ভেতরে লজ্জিত হন রফিক।
দুঃখিত ও ধন্যবাদ বলে মহিলার পাশের সিটটিতে বসেন রফিক।
মেয়েদের বয়স শুধু, মেয়েদের সবকিছুই তো অজানা রয়ে গেল বলেই আজও একা রফিক। এই জনাকীর্ণ পাবলিক বাসে হঠাৎ নারীকেন্দ্রিক কথাবার্তা বারবার মনে পড়ায় নিজেই মনে মনে লজ্জিত বোধ করলেন যেন। যে মহিলা তাঁকে বসার জায়গা করে দিলেন, তাঁকে আড়চোখে একবার দেখেও নিলেন।
বেশ মনে হলো মহিলাকে রফিকের। কারণ, এই মফস্বল শহরে এ রকম শুদ্ধ উচ্চারণের মহিলা গত পাঁচ বছরে রফিক দেখেছেন কি না মনে পড়ে না। কিন্তু কেন যেন রফিকের মহিলাকে বেশ চিন্তাগ্রস্ত মনে হলো। মহিলা একবার এই পাশের জানালা, আরেকবার ওই পাশের জানালায় কিছু একটা খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন যেন।
কিছু মনে করবেন না, আপনি কি কিছু খুঁজছেন? রফিক এই প্রথমবারের মতো মহিলাকে প্রশ্ন করলেন।
জি মানে, জি মানে। আসলে আমি বেগম রোকেয়া মহিলা কলেজটা খুঁজছি। আজই প্রথম আমার এই কলেজের বাংলা বিভাগে জয়েন করার কথা। কিন্তু আমি তো চিনি না, তাই শুধু এপাশ-ওপাশ খুঁজছি।—বললেন মহিলা।
আপনার নাম কি মুগ্ধতা? বললেন রফিক।
জি... যেন অন্তর্যামীর সঙ্গে কথা বলছেন এমন ভঙ্গিতে মহিলা বললেন, মানে আপনি জানলেন কী করে?
একগাল হাসি হেসে রফিক জানালেন তিনিও ওই কলেজেরই বাংলা বিভাগের শিক্ষক। বেশ কদিন ধরেই মুগ্ধতা নামে এই কলেজে একজন জয়েন করবেন বলে তিনি শুনেছেন, তবে তাঁর সঙ্গে যে এমনভাবে দেখা হয়ে যাবে তা তাঁর জানা ছিল না।
দুজনেই বেশ খানিকটা হাসেন। তার পরও মুগ্ধতার মুখে চিন্তার রেখা যেন পুরোপুরি কাটে না। আর তাই রফিক বলেন, এখনো টেনশন করছেন কি? এই অধম অধ্যাপকের ওপর কি একফোঁটাও ভরসা রাখতে পারছেন না?
মুগ্ধতা কিছু বলেন না, শুধু নখ দিয়ে বাসের সিটে দাগ কাটেন।
স্যার নামেন—আপনার কলেজের কাছে আইসা পড়ছি। হেলপারের ডাক শুনে মুগ্ধতার দিকে তাকান রফিক আর সেই সঙ্গে জানালা দিয়ে রফিক মুগ্ধতাকে দেখান কলেজের সাইনবোর্ড। মুগ্ধতা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন।
স্বাবলম্বী মুগ্ধতা নিজের বাক্সপেটরা নিজ হাতেই বাস থেকে নামান। সাধারণত মহিলারা এসব ক্ষেত্রে লাগুক না-লাগুক পুরুষের সাহায্য চান, কিন্তু মুগ্ধতার সাহায্য না চাওয়া রফিকের চোখে ব্যতিক্রমই লাগে।
রাস্তা পেরিয়ে কলেজের প্রশাসনিক ভবন পর্যন্ত আসতে তাঁদের দুজনের তেমন একটা কথা হয় না। প্রশাসনিক ভবনে পৌঁছানোর পর মুগ্ধতা কেবল তাঁর মোটা ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে সামান্য হেসে ধন্যবাদ ও আবার দেখা হবে বলে রফিককে বিদায় জানান।
দিনের শুরুটা যতটা খারাপ হবে ভেবেছিলেন রফিক, অচেনা-অজানা এক শিক্ষিকা মুগ্ধতাকে দেখে রফিকের মনে হলো মফস্বলের এই নিস্তরঙ্গ জীবনে আগামী দিনগুলোও বুঝি খুব একটা খারাপ যাবে না।
দুটো দিন নানা টুকটাক কাজের ভেতর কখন যে কেটে গেছে রফিক তা বুঝতে পারেন না। রফিকের একটা অভ্যাস হলো—প্রতিনিয়ত নিজ ঘরে একাকী উদাত্তভাবে কবিতা পাঠ করা। এতে সাহিত্যের অধ্যাপক রফিকের নানা কবিতাও পাঠ হয় আর সেই সঙ্গে হয় নিজের গলার চর্চাও। বিছানায় হাত-পা ছড়িয়ে রফিক তাই আবৃত্তি করে ওঠে, ‘এবার আমায় সঁপে দিলাম তোমার চরণ তলে তুমি শুধু মুখ তুলে চাও, বলুক যে যা বলে...’
আবৃত্তিটাও পুরো শেষ করে উঠতে পারেন না, এরই মধ্যে মুঠোফোন বেজে ওঠে রফিকের। ফোনসেটে ভেসে আসে এক অজানা নম্বর। নিশ্চয় ভুল নম্বর। আর তাই ফোন ধরেন না রফিক।
কিন্তু নাছোড়বান্দা ফোন বড় উৎপাত চালায়। তাই শেষমেশ ফোনটা ধরেই ফেলেন রফিক। অপর পাশ থেকে ভেসে আসে সেদিনের সেই রিনরিনে গলার স্বর।
কী ব্যাপার, এতবার ফোন করছি, ধরছেন না কেন? চিনতে পারছেন আমাকে? মহিলা একনাগাড়ে কথা বলে গেলেন।
হু, আমি মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন এখনো—বলেন রফিক।
ওপাশে হাসির শব্দ।
তা মুগ্ধতা আমার ফোন নম্বরটা পেলেন কোথা থেকে শুনি, রফিক বলেন। মুগ্ধতা হেসে বলেন, আপনি তো কেবল মোহগ্রস্ত কথা বলতে পারেন কিন্তু মুগ্ধতার খোঁজ নেওয়ার একবারও প্রয়োজন বোধ করেন না।
মুগ্ধতার কথা শুনে রফিক হেসে বলেন, আমি এক অপ্রয়োজনীয় মানুষ, আমাকে কারও প্রয়োজন যে হতে পারে তা আজই প্রথম জানলাম। মুগ্ধতা হেসে বলেন, শুনুন, এ শ্রীনগর এলাকা আমার কাছে সম্পূর্ণ নতুন। দোকানপাট কিছু চিনি না। কলেজের প্রিন্সিপালের ভাড়া বাসায় উঠেছি। নতুন জায়গায় যেহেতু থাকতে হবে এখন থেকে, তা জায়গাটার সঙ্গে পরিচয় হওয়া তো উচিত, নাকি? কিন্তু পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মতো কাউকে পেলাম না আশপাশে, পরক্ষণেই আপনার কথা মনে পড়ল। ওদিকে আপনার নামটাও তো জানা নেই। শুধু জানি আপনি আমার বিভাগের শিক্ষক। তারপর বেশ কয়েকজনকে আপনার চেহারার বর্ণনা দিয়ে মেলালাম ও আপনার মুঠোফোনের নম্বর পেলাম।
উফ, আমার জন্য যে কেউ এত পরিশ্রম করতে পারেন, তা ভেবে রীতিমতো আনন্দিত ও পুলকিত হচ্ছি, বলেন রফিক।
অপর পাশ থেকে মুগ্ধতার প্রশ্ন, আজ বিকেলে চারপাশটা একটু ঘুরব, সময় হবে আপনার?
জরুর, বলেন অধ্যাপক রফিক।
বিকেলে রফিক মুগ্ধতাকে নিয়ে শ্রীনগরের অলিগলি চষে বেড়ান। কোন দোকানে সাহিত্যের বই পাওয়া যাবে, কোন দোকানে পাওয়া যাবে সস্তায় আলু-পটোল আর কোথাই বা পাওয়া যাবে মুগ্ধতার প্রিয় খাবার রসগোল্লা—সবই একে একে চিনিয়ে দেন মুগ্ধতাকে রফিক। ঘুরতে ঘুরতে বেশ কয়েকবার মুগ্ধতার দিকে চোখও যায় অধ্যাপক রফিকের। মুগ্ধতার নজর মনে হয় এড়ায়নি বিষয়টি।
আর তাই মুগ্ধতা বলেন, কিছু বলবেন? রফিক বলেন, মনে হয় সাজগোজের অভ্যাস আছে, তাই না?
মুগ্ধতা হাসেন।
রফিক বলেন, মনে করবেন না যে মফস্বলের শহর বলে এখানে রূপচর্চার কেন্দ্র নেই। সে ব্যবস্থাও এখানে বেশ কয়েকটা আছে। দেখবেন নাকি এখন? রফিকের কথা শুনে খলখল করে হাসেন মুগ্ধতা।
রফিক বলেন, চলুন, সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এটা মফস্বল শহর। এখানে শহরের মতো সন্ধ্যার পর বাইরে স্বল্পপরিচিত নারী-পুরুষের ঘোরাঘুরির খুব একটা রেওয়াজ নেই।
এরই মধ্যে তাঁদের মধ্যে টুংটাং শব্দ করে রিকশা এসে হাজির। মুগ্ধতাই রিকশায় প্রথমে ওঠেন, তারপর রফিক। রিকশায় তাঁদের খুব একটা কথা হয় না। মফস্বলের এবড়োখেবড়ো রাস্তা ভেঙে রিকশা যাওয়ার সময় মাঝেমধ্যে দুজনের মধ্যে সামান্য ঘেঁষাঘেঁষি হয় বৈকি। রফিক নড়েচড়ে বসলেও মুগ্ধতার তাতে কোনো বিকার নেই বলেই মনে হয়। পথে যেতে যেতে মুগ্ধতা কেবল একবারই বলেন, আপনার বাসায় আর কে কে আছে?
একা থাকি, রফিক বলেন।
রফিক বলেন, আর আপনার?
মুগ্ধতা বলেন, এখানে কেউ তো আসেনি, তবে শহরে স্বামী ও একমাত্র মেয়ে আছে।
বাসায় ফিরে অনেক দিন পর ভিন্ন রকম এক বিকেল কাটানোর জন্য বেশ ভালোই লাগে রফিকের। বয়স ৪৭ এখন রফিকের, বহু নারীকেই এ যাবৎ পরখ করে দেখেছেন তিনি। অবশ্য তা পরখ পর্যন্তই। তাঁর মতো সাধারণ এক কলেজশিক্ষকের সঙ্গে উচ্চাভিলাষী সেসব নারী গাঁটছড়া বাঁধতে চাননি। অবশ্য রফিকের তাতে কোনো অতৃপ্তি নেই। কারণ বিয়েতেই যে প্রেমের সফলতা তা মানতে নারাজ রফিক, বরং উথালপাতাল প্রেমের যে আত্মতৃপ্তি, তা-ই রফিকের কাছে বড় মনে হয়। চারপাশে দেখা স্বামী-স্ত্রীদের ক্লান্তিকর একঘেয়ে জীবনযাপনের চেয়ে একলা থাকাকেই শ্রেয় মনে হয়েছে রফিকের বারবার। এ ক্ষেত্রে শরীরটাই বোধ হয় মাঝেমধ্যে কিঞ্চিৎ তাঁকে কষ্ট দিয়েছে। নিজের কথা ভাবতে ভাবতেই রফিকের চোখের সামনে ঝিলিক মারছিল মুগ্ধতার চেহারা। পরক্ষণেই হাসি পেল এ কথা ভেবে যে একজন পরস্ত্রীর কথা ভেবে কী লাভ তাঁর!
নিজের ভেতরে হাসতে হাসতেই আবার মুগ্ধতার ফোন নম্বরটা রফিকের মুঠোফোনে ভেসে উঠল। বহুকাল ধরে এ ফোনটার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন এমন হন্তদন্ত ভঙ্গিতে রফিক ফোন ধরলেন। ওপাশে চিরাচরিত সেই রিনরিনে গলায় মুগ্ধতা বললেন, দুঃখিত, আপনাকে ধন্যবাদ বলা হয়নি, আর তাই ফোন দিলাম।
রফিকের শুধু মুগ্ধতার কথাই শুনতে ইচ্ছে করছিল, কোনো কথা বলতে ইচ্ছে করছিল না।
রফিকের নীরবতা দেখে মুগ্ধতা বলেন, কী হলো? কিছু বলবেন না।
নীরবতা ভেঙে রফিক বলেন, মুগ্ধতা, আপনাকে একটা কবিতার লাইন বলি। কবিতার লাইনটি শুনে কিছু মনে করলেও আমার করার কিছু নেই। বলব?
মুগ্ধতা বলেন, বলুন শুনি।
রফিক বলেন, ‘সেই কবে থেকে জ্বলছি জ্বলে জ্বলে নিভে গেছি বলে, তোমার চোখে পড়িনি।’
রফিকের ভরাট কণ্ঠে এই চমৎকার কবিতার লাইন দুটি শুনে সরাসরিভাবে দুজন কাছাকাছি না থাকলেও মুগ্ধতার শরীরে তারের ও প্রান্ত থেকেই যেন ভালো লাগার আবেশ ছড়িয়ে পড়ে। মুগ্ধতার মন বলে, যে-রকম আবেশ পেলে একজন নারীর শরীর কেঁপে ওঠে, রফিকের আবৃত্তি যেন মুগ্ধতাকে সেই আবেশটাই দিতে পেরেছে। দুজনের কানে যে ফোন ধরা তা বিলক্ষণ মনে থাকে না তাঁদের।
শ্রীনগরের মতো মফস্বল এলাকায় দুজন অধ্যাপক-অধ্যাপিকার কোথাও বসে দুদণ্ড প্রাণভরে কথা বলার জায়গা কই! এ ক্ষেত্রে যোগাযোগের একমাত্র অবলম্বন হয় তাঁদের দুজনের মুঠোফোন। দিবারাত্রি, সময়-অসময়ে মুঠোফোনের মাধ্যমে দুজন দুজনের সকল চাওয়া-পাওয়া, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, ভবিষ্যৎ, আশা-নিরাশাই ব্যক্ত করেন যেন। তাঁদের দুজনের কথা থেকে বাদ যায় না যেমন দেশ-কালের পরিস্থিতি, তেমনি বাদ যায় না মুগ্ধতার কপালে প্রতিদিনকার দেওয়া ছোট টিপটার কথা বা রফিকের প্রায়ই পরা ভাঁজভাঙা পাঞ্জাবির কথা।
কিন্তু শুধু কি কথায় পরিতৃপ্ত হতে পারে দুজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ? আর তাই তাঁরা দুজন সিদ্ধান্ত নেন, শ্রীনগরের বাইরের কোনো এক জায়গায় প্রকৃতির মধ্যে হারিয়ে যেতে। সে উদ্দেশ্যে তাঁরা এক মিষ্টি রোদখেলা বিকেলে ট্যাক্সিক্যাবে চেপে বসেন। রফিক বরাবরের মতো ঘিয়ে পাঞ্জাবি পরা, গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি ও সঙ্গে একটা ঝোলাব্যাগ। মুগ্ধতার পরনে হাওয়াই মিঠাই রঙের শাড়ি। তাঁদের গাড়ি চলতে শুরু করে। দুজনের মনে হয় এ যেন ট্যাক্সিক্যাব নয়, কোনো এক পঙ্খিরাজ, তাঁদের উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বারবার প্রবল বাতাসে মুগ্ধতার খোলাচুল আছড়ে পড়ে রফিকের শরীরে। একটুখানি শিহরিত হন বৈকি রফিক। কথা হয় না দুজনের কোনো। পরিবেশ-পরিস্থিতি, নাকি অন্য কিছু রফিককে প্রবৃত্ত করে মুগ্ধতাকে কাছে টেনে নিতে। অবশ্য মুগ্ধতা তাতে সাড়াই দেন। রফিকের স্পর্শে মুগ্ধতা যে বারবার থরথর কেঁপে ওঠেন তা বুঝতে অসুবিধে হয় না রফিকের। একসময় রফিক উপলব্ধি করেন মুগ্ধতার পা দুটো তাঁর পায়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। ছুটে চলা গাড়ির ভেতর মুগ্ধতা রফিকের কোলে মাথা গুঁজে ফিসফিস করে বলেন: ধন্যবাদ রফিক, নপুংসক স্বামীপ্রবরের সঙ্গে থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম যেন, সেখান থেকে সাময়িকভাবে হলেও মুক্তি দিলে যেন তুমি। আমাদের এ ভালোবাসা শুধু কাগজের সম্পর্কে আবদ্ধ নয়, নয় শুধু শরীরের ব্যাপ্ত, না আছে এতে বহু দিনের লালিত ভালোবাসা। ভালোবাসাটাও যেন দুজন প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারীর বহুদিনের মানসিক-শারীরিক অপ্রাপ্তির পর সামান্য সুখের ছোঁয়া মাত্র। সুখের আবেশে আবেশিত রফিকের মুগ্ধতার কোনো কথাই কানে যায় না, শুধু মুগ্ধতার ঠোঁট দুটি নিজের মুখে পুরে নেন রফিক।

No comments

Powered by Blogger.