পরিবর্তন আসছে ইরানে?

ইরানের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দেশের মানুষকে বড় ধরনের এক চমক উপহার দিয়েছে। এ চমক মধ্যপন্থী নেতা বলে পরিচিত হাসান রুহানির বিজয়। শুরুতে সংস্কারপন্থী বা মধ্যপন্থী রাজনীতিকদের পছন্দের তালিকায় প্রথম এমনকি দ্বিতীয় স্থানেও ছিলেন না তিনি।
কিন্তু পরিস্থিতি তাঁকে সমর্থন দিতে বাধ্য করেছে মধ্যপন্থী বা সংস্কারপন্থীদের। সেই সমর্থন নিয়ে রুহানি যা করলেন, তা এখন ইতিহাস। প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদের আট বছরের কট্টর শাসনব্যবস্থা থেকে বাঁচতে রুহানিকে বেছে নিয়েছেন ইরানিরা।
রুহানির কাছে ইরানিদের চাওয়া অনেক। নির্বাচনী প্রচারাভিযানে তিনি নিজেও বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেই চাহিদা বাড়িয়ে দিয়েছেন। পারমাণবিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ইরানের ওপর যে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তার প্রভাবে দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক। দারিদ্র্য ও বেকারত্ব বাড়ছে। সরকারবিরোধীদের ওপর দমন-পীড়নও বেড়েছে। সব মিলিয়ে রুহানিতেই মুক্তি খুঁজেছে ইরানের মানুষ। তাই প্রথম দফা নির্বাচনেই প্রয়োজনীয় ৫০ শতাংশের বেশি ভোট দিয়ে তাঁকে পরিবর্তন আনার জন্য বেছে নিয়েছে দেশের মানুষ। তবে
রুহানি মধ্যপন্থী হলেও গ্রিন মুভমেন্টের নেতা মির হুসেইন মুসাভি বা মেহদি কারুবির মতো ‘সত্যিকার সংস্কারপন্থী’ নন। এই দুই নেতাই এখন গৃহবন্দী। গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁরা মাহমুদ আহমাদিনেজাদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
রুহানির ওপর প্রত্যাশার বিষয়ে একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আকবর বলেন, ‘তাঁর জয়ে আমি অত্যন্ত খুশি। আমি এটা ভাবছি না যে রুহানি সব কিছু বদলে দেবেন। কিন্তু জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে নিজের মত প্রকাশ করতে পেরেছে। এটা আমরা কেউ ভাবতেই পারিনি।’
ইস্পাহান নগরের বিজ্ঞান গবেষক মাসুদ (২৮) বলেন, তাঁর আশা রুহানি ইরানের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করাতে পারবেন। তিনি বলেন, ‘আমার প্রথম প্রত্যাশা হলো রুহানি পারমাণবিক কর্মসূচির নীতিতে পরিবর্তন আনবেন। ইরানের মানুষ পারমাণবিক বোমা চায় না। পাকিস্তানের মতো যেকোনো কিছুর বিনিময়ে পারমাণবিক বোমা চাই না আমরা। পাকিস্তানের পারমাণবিক বোমা আছে, কিন্তু বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের সামর্থ্য নেই। আমরা তাদের মতো হতে চাই না।’
ইরানের গণমাধ্যমেও রুহানির জয়কে কট্টরপন্থীদের প্রতি জবাব বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
কিন্তু আসল কথা হলো, রক্ষণশীল দেশটির কট্টরপন্থীরা কি জনগণের পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষার এই বার্তা মেনে নেবে?
নির্বাচনী প্রচারণায় রুহানি বিভিন্ন সময় যে প্রতিশ্রুতিগুলো দিয়েছেন তার মধ্যে রয়েছে: আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিলে কাজ করা, রাজবন্দীদের মুক্তি, নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা এবং ‘মর্যাদাপূর্ণ জাতির’ ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার। এমনকি ইরানের পুরোনো শত্রু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের কথাও আছে।
তবে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ নীতি-নির্ধারণী সব ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তাই রুহানি প্রেসিডেন্ট হলেও গুরুত্বপূর্ণ নীতিতে কতটা পরিবর্তন আনতে পারবেন বা জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে পারবেন, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
 মাহফুজার রহমান

No comments

Powered by Blogger.