আলো বেশি খরচ কম by হাসান ইমাম

যে উদ্ভাবনের কথা আলোচনা করা হবে, সেটা মৌলিক নয়। তবে মৌলিক উদ্ভাবনটা বেশ কার্যকর। বলছি এলইডি (লাইট এমিটিং ডায়োড) বাতির এক নতুন কার্যক্ষমতার কথা। যে কার্যক্ষমতার প্রায়োগিক দিকের উদ্ভাবন করেছেন ঢাকার ছেলে সৈয়দ রাইয়ান।
এলইডি বাতি ব্যবহার করে আলো পাওয়া যায়—এ আর নতুন কী? তবে সেই বাতি যদি একটু গোছগাছ করে জ্বালানো যায়, তাহলে পাওয়া যায় আরও বেশি আলো অথচ বিদ্যুৎ খরচ হবে কম। তাহলে আর মন্দ কী! রাইয়ান তাঁর এই বাতির নাম দিয়েছেন ‘সূর্যবাতি’।
কেন নাম সূর্যবাতি, সেই আলাপচারিতার কথা না-হয় পরেই শুনি। তার আগে জেনে নিই এই সূর্যবাতির অন্য সব গুণাগুণ। রাইয়ান জানালেন, সাধারণ এলইডি বাতি এমনভাবে সাজানো থাকে যে তা শুধু একদিক থেকেই আলো দেয়। চীনের তৈরি রিচার্জেবল বাতিগুলোতেও সেভাবে সাজানো থাকে। তাই এটাকে অন্যভাবে তুলে ধরতে চেয়েছি। বললেন, ‘নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সার্কিট বোর্ডের ওপরে জ্যামিতিক নকশা আঁকি। তারপর সেখানে বাতিগুলো এমনভাবে সাজাই যেন আলো পাওয়া যায় সব দিক থেকে। ফলে কম এলইডি ব্যবহার করে একটা ঘর আলোকিত করে তোলা যায় সহজে।’
এখানে ব্যবহূত সরঞ্জামগুলো সহজেই বাজারে পাওয়া যায়। ফলে খরচও একদম কম।১৩০ থেকে ১৫০ টাকায় বাজারজাত করা যাবে এই সূর্যবাতি। এটা সরাসরি বিদ্যুৎ-সংযোগে অথবা চার্জারের মাধ্যমে ঘরকে আলোকিত করে তুলতে পারে। এরই মধ্যে নিজের বাড়িতে এবং আশপাশের দোকানে পরীক্ষামূলকভাবে সেটা চালিয়ে হয়েছেন সফল। একজনের কাছে দেখে অন্যরাও চাচ্ছে এই বাতি। তাই বাজারজাত করার কথা ভাবছেন সৈয়দ রাইয়ান।
রাজধানীর মতিঝিল মডেল স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিকের পর রাইয়ান ভর্তি হন উচ্চশিক্ষার জন্য। কম্পিউটার বিজ্ঞান ও তথ্য-ব্যবস্থা বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছেন ২০০৮ সালে। বিজ্ঞান বা ইলেকট্রনিকসের প্রতি ঝোঁক তাঁর স্কুল-কলেজ থেকেই। জানা গেল, এর আগে স্কুল-কলেজে থাকতে অংশ নিতেন বিভিন্ন বিজ্ঞান মেলায়। পেয়েছেন নানা পুরস্কার। হাতের কাছের টুকটাক জিনিস দিয়েই তাই বানিয়ে ফেলেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিমোট কন্ট্রোল যন্ত্র, কম খরচের ইন্টারনেট-অলটারনেট চেঞ্জার, শক প্রটেক্টর, কেব্ল চেকারসহ নানা কিছু। নিজের দৈনন্দিন জীবনে এগুলো তিনি ব্যবহারও করেন।
তবে সূর্যবাতি নিয়ে তাঁর আশা অনেক বেশি। ৫ ওয়াটের একটি সূর্যবাতি যে পরিমাণ আলো দেবে, তা একটি সাধারণ ২৪ ওয়াটের এনার্জি সেভিং বাতির সমান—এমনই দাবি তাঁর।
এ বাতি উৎপাদনে রাইয়ান ব্যবহার করেছেন ১০ মিলিমিটার আকারের কিছু এলইডি বাতি, পিসিবি, অ্যাডাপ্টর। এ ছাড়া চার্জে চালানোর জন্য উপযোগী কন্ট্রোলার। নামকরণের কারণ হিসেবে রাইয়ান বলেন, ‘সূর্যকে পৃথিবী থেকে অনেক ছোট মনে হলেও এটা অনেক বড় ও কার্যকর। তেমনি আমার সূর্যবাতি দেখতে ছোট হলেও এর আলো যেমন বেশি তেমনি বিদ্যুৎসাশ্রয়ী। তাই এর নাম দিয়েছি সূর্যবাতি।’

No comments

Powered by Blogger.