গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচননা থেকেও মাঠের দখল জাহাঙ্গীরের by হায়দার আলী, শরীফ আহমেদ শামীম ও শাহীন আকন্দ

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টা। গাজীপুর নগরীর বাসন রোডে ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ির সামনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অর্ধশত যুবক।
অনেকেই বাড়ির ভেতরে ঢুকছে, বেরোচ্ছে। চারতলা বাড়িটির নিচতলায় ঢুকেই দেখা যায়, কর্মী-সমর্থকরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে কথা বলছে, প্রসঙ্গ তাদের নেতা জাহাঙ্গীর আলম। ওদের কারো মুখেই হাসি নেই।
দেয়ালে টানানো জাহাঙ্গীর আলমের ছবির দিকে তাকিয়ে আছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব হাসিনা আক্তার। জাহাঙ্গীর কি বাসায় আছেন- জানতে চাইলে হাসিনা বলেন, 'সকালে এই বাসায় আইছি।
এখনো কেউ বলতে পারে নাই আমাদের নেতা কোথায় আছেন।' ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, 'আমাদের নেতা জাহাঙ্গীরকে নির্বাচন থেকে জোর করে সরালেও তাঁর মার্কা সরাতে পারেনি। নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে গিয়ে তাঁর আনারস মার্কায়ই ভোট দেব।'
পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা যুবক রফিকুল ইসলাম বাদল নগরীর গাছারকুনিয়া এলাকার ভোটার ও জাহাঙ্গীরের সমর্থক। রফিক বলেন, 'পত্রিকা আর টিভিতে শুনছি, আমাগো নেতারে জোর করে ভোটের মাঠ থেইকা আউট কইরা দিছে। এইড্যা আমরা বিশ্বাস করি না। আজও সকাল থেইকা দুপুর পর্যন্ত এলাকায় এলাকায় গিয়া ভোট চাইছি।' তিনি আরো বলেন, 'নেতা নির্দেশ না দিলে আমরা মানুষের কাছে ভোট চাইয়া যামু। শুধু আমি না, আমার এলাকার ছোট-বড় সবাই নেতার জন্য ভোট চাইতাছে।'
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গেলে কর্মী-সমর্থকরা এভাবেই কালের কণ্ঠকে জানায়, জাহাঙ্গীর নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে যেতে পারেন, এটা তারা বিশ্বাস করছে না। জাহাঙ্গীর যতক্ষণ পর্যন্ত গাজীপুরে এসে ঘোষণা না দেন ততক্ষণ পর্যন্ত তারা নির্বাচনের মাঠ ছাড়বে না। তারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে। বাড়ি থেকে তারা পোস্টার, বিলবোর্ডসহ বিভিন্ন নির্বাচনী উপকরণ যার যার এলাকায় নিয়ে যাচ্ছে। তাদের কথা, 'জাহাঙ্গীর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন- এমন কথা প্রচার করে আমাদের মাঠ থেকে সরাতে পারবে না। মাঠ আমাদের দখলেই আছে।'
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাহাঙ্গীর আলম নির্বাচনের মাঠে নেই, নগরীর বাসন রোডের বাড়িতেও নেই। কোথায় আছেন কেউ সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছে না। তাঁর মোবাইল ফোন দুদিন ধরে বন্ধ। তবে তাঁর কর্মী-সমর্থকরা নির্বাচনী প্রচার, গণসংযোগ বন্ধ রাখেনি। গতকাল সকাল থেকে নগরীর ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের টঙ্গীর এরশাদনগর, দত্তপাড়া, বোর্ডবাজার এলাকায় জাহাঙ্গীরের জন্য ভোট চেয়ে গণসংযোগ করেন আবদুল আলিম, জাকির হোসেন, রুবেল হোসেন, জামালউদ্দিন আহামেদ, রুহুল আমিন ও মো. সম্রাট মিয়া। আবদুল আলিম বলেন, 'নেতা মাঠে উপস্থিত নাই কিন্তু মাঠ ছাড়ি নাই।' ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইটাহাটা ও কড্ডা এলাকায় আনোয়ার হোসেনসহ ১০-১৫ জনের একটি দল জাহাঙ্গীরের পক্ষে গণসংযোগ করে। ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের বনমালা আর হায়দ্রাবাদ এলাকায় গণসংযোগ করেন মোতাহার হোসেন, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের শালনা ও পোড়াবাড়ী এলাকায় রিপন মিয়া। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের দিঘীরচালা ও বারবইকায় হাসিনা আক্তার ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের টেকনগপাড়া ও মাড়িয়ালি এলাকায় গণসংযোগ করেন শাহিন আহামেদ।
টঙ্গীর এরশাদনগর এলাকার সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'ভোট ঠিকই দিতে যাব, তবে জাহাঙ্গীরের মার্কা আনারসেই ভোট দিয়ে আসব।' বোগড়া এলাকার রিকশাচালক আবদুর রইছ (৩২) বলেন, 'ভাড়ায় রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতে পারতাম না। জাহাঙ্গীর ভাইয়ের কাছে বললে তিনি আমাকে নতুন রিকশা কিনে দিয়েছেন। দুই দিন বাড়ির সামনে অনেকবার আসছি, কিন্তু নেতার দেখা পাইনি।'
জাহাঙ্গীরের বাসন রোডের বাড়িতে তাঁর মা-বাবা, ভাই কেউ ছিলেন না। তবে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই মো. আল আমীন বলেন, 'ভাইয়ের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না হওয়ায় মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এখন আমরা ঢাকার এক আত্মীয়ের বাসায় আছি। কিন্তু ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের এখন পর্যন্ত কোনো যোগাযোগ হয়নি।' তবে জাহাঙ্গীরের বাবা মিজানুর রহমান মোবাইল ফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বাবা, আমার স্ত্রী খুবই অসুস্থ। ছেলের কী অবস্থা, জানি না। তবে গাজীপুরের মানুষের কাছে আমার অনুরোধ, আমার স্ত্রী এবং ছেলের জন্য যেন দোয়া করে সবাই।'
মহাজোট সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমর্থক এমপি জাহিদ আহসান রাসেল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশে দলের বৃহত্তর স্বার্থে জাহাঙ্গীর আলম নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। গাজীপুর সিটি নির্বাচনের মাঠ এখন আমাদের দখলে। আমাদের প্রার্থীর বিজয় সুনিশ্চিত।'
জাহাঙ্গীরের সমর্থকরা এখনো গণসংযোগ করে যাচ্ছেন- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কয়েক দিনের মধ্যে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। জাহাঙ্গীরের কর্মী-সমর্থকরাও মহাজোটের প্রার্থীর হয়ে প্রচারণা চালাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

No comments

Powered by Blogger.