সরকারের নির্বাচনভাবনা by কাজী সাইদ

ওয়ান ইলেভেনের অস্ত্রধারী কুশীলবদের  কূট চাল, ইঙ্গ-মার্কিন-ভারতের নীলনকশা এবং তাদের এ দেশীয় এজেন্ট তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০০৮-এর নবম সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের বিপুল বিজয় আওয়ামী লীগকে মতাসীন করার পর চার বছর কেটে গেছে।
দেশের যে সংবিধানকে সমুন্নত রাখার শপথ নিয়ে দলটি শাসনকাজ শুরু করেছিল সে সংবিধানকে  তারা দলীয় স্বার্থে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে এবং ‘বাঙ্গালকে হাইকোর্ট’ দেখিয়ে নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছে। সবচেয়ে ন্যক্কারজনক পরিবর্তনটি এসেছে পঞ্চদশ সংশোধনীতে। এতে মতায় অধিষ্ঠিত থেকে আগামী নির্বাচন করে যাতে মতাকে আবারও কুগিত করা যায় তারই বিধিবদ্ধ সংস্কার আনা হয়েছে। আগামী দশম সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান, নির্বাচন কমিশন এবং সম্ভাব্য গৃহপালিত বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার খায়েশে বিভোর জাতীয় পার্টির সাম্প্রতিক বিভিন্ন ভাষণ, বক্তৃতা, বিবৃতি বিশেষ ভাবে প্রণিধানযোগ্য।

রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকার প্রধান

২৭ জানুয়ারি ২০১৩, জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতি মো: জিল্লুর রহমান তার প্রদত্ত ভাষণে বিরোধী দলের সমালোচনায় বলেছেন, জনগণের প্রতিনিধি ও সেবক হিসেবে বিরোধী দলের কর্তব্য ছিল সংসদে এসে তাদের দায়িত্ব পালন করা এবং সংসদের ভেতরে ও বাইরে সংবিধান সংশোধনসহ প্রতিটি েেত্র গঠনমূলক আলোচনায় অংশগ্রহণ করে মতামত ব্যক্ত করা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, প্রধান বিরোধী দল গত চার বছরে সংসদীয় কর্মকাণ্ডে নিয়মিতভাবে অংশগ্রহণে বিরতে থেকে তাদের সাংগঠনিক ও গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি সংসদ ও সরকারের মেয়াদের সমাপনী বছরে বিরোধী দলকে বয়কট ও জ্বালাও-পোড়াওÑ সঙ্ঘাত নৈরাজ্যের পথ পরিহার করে যাবতীয় অভিযোগ, প্রস্তাব, সুপারিশ, মতামত সংসদের ভেতরে এসে বলার আহ্বান জানান।

বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়ে রাষ্ট্রপতি তার ভাষণের উপসংহারে বলেন, প্রধান বিরোধী দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠকের পর একটি নিরপে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে ও আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা আগামীতে একটি অবাধ ও নিরপে এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সংসদীয় নির্বাচন উপহার দিতে সম হবো।

একই দিন জাতীয় সংসদ ভবনের সরকারদলীয় সংসদীয় দলের সভাকে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আগামী বছরের ২৫ জানুয়ারি বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এর আগেই নির্বাচন হবে। কোনো প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন আমরা করব না। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেও এই নির্বাচন অত্যন্ত অবাধ, নিরপে ও সুষ্ঠু হবে। তিনি বলেন, বিশ্বের যেসব দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র চালু আছে সেখানে যেভাবে নির্বাচন হয় বাংলাদেশেও তাই হবে। এ বৈঠকে বিরোধী দলের আন্দোলন নিয়ে কোনো আলোচনা না হলেও প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের শেষ বছরে রাজপথে কিছু ভাঙচুর ও উত্তেজনা হবেই।

এর আগে রাশিয়া সফরের গুরুত্ব দেশবাসীকে জানাতে গত ২৩ জানুয়ারি তার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জানান, আগামী বছর জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে বিরোধী দলের দাবির পরিপ্রেেিত কোনো ধরনের সমঝোতার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বারবার জানান দিচ্ছেন, তার সরকারের আমলে ত্র“টিমুক্ত নির্বাচন হয়েছে। সংসদ, উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের একাধিক নির্বাচনে তার দলীয় প্রার্থী হারলেও কোনো নির্বাচন নিয়েই প্রশ্ন ওঠেনি।

জাতীয় পার্টির অবস্থান

২৫ জানুয়ারি একটি টেলিভিশন টকশোতে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, একা নির্বাচন করার পরিকল্পনা করছি। জনগণের সমর্থন আছে। দেশের দায়িত্বশীল নাগরিকের সমর্থন পেলেই শত ভাগ আসনে প্রার্থী দেয়া হবে। সবাই মিলেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন শুধু পল্লীবন্ধু এরশাদের সিদ্ধান্তের অপো। রাজনৈতিক বিষয়ে ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে দোদুল্যমানতা, রাজনীতির হাওয়া বুঝে পাল ওড়ানোয় অপ্রতিদ্বন্দ্বী এরশাদ কখনো বলছেন তিনি মতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন, একা নির্বাচন করবেন, ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হলে তিনি সে সুযোগে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মওকা কখনো ছাড়বেন না, জনগণ তাকে মতায় দেখতে উন্মুখ হয়ে বসে আছে এবং তার দল কখনো মতার সিঁড়ি হবে না। এরশাদের মতে, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ওয়ান ইলেভেনের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে জাতীয় পার্টি তাতে সমর্থন দেবে। তার মতে, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী জানুয়ারিতে নির্বাচন হলে সে নির্বাচনে বিএনপি না এলে তা গ্রহণযোগ্য ও টেকসই হবে না। নির্বাচনের প্রায় এক বছর বাকি থাকতেই গত ২৮ জানুয়ারি সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে  ৩২ জনকে এরশাদ মনোনীত ঘোষণা করেছেন।  এসব প্রার্থী মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রচার প্রচারণা চালাতে পারবেন। এ ছাড়া পূর্বঘোষিত অন্য প্রার্থীরাও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে কাজ করবেন। তারা মনোনীত প্রার্থী পরিচয়ে কোনো প্রচার করতে পারবেন না। ইতোমধ্যে এরশাদ তার জাতীয় পার্টির আরো ৬১ জনকে নির্বাচনের জন্য মনোনীত করে ফেলেছেন বলে খবরে প্রকাশ।

নির্বাচন কমিশন

সংসদ রেখে জাতীয় নির্বাচন করা হলে আইনি জটিলতা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জেনা. (অব:) মো: জাবেদ আলী। তিনি বলেন, ‘সংসদ ভেঙে বা সংসদ রেখে দুই পরিস্থিতিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।’ ইসি সচিবালয়ে গত ২৮ জানুয়ারি তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সংসদ না ভেঙে লাভজনক পদ হিসেবে এমপিরা নির্বাচন করতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) কোনো নির্দেশনা না থাকায় আইনি জটিলতা হতে পারে।’ সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে কি না; এমন প্রশ্নে  জাবেদ আলী বলেন, ‘কোনো দল নির্বাচনে আসা না আসার সাথে নির্বাচন ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার হওয়ার সম্পর্ক কী? কেউ এলো বা এলো না, তাতেও নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। আইন মোতাবেকই নির্বাচন হবে। তবে আমরা চাই সব দল আসুক। তাহলে নির্বাচন স্বতঃস্ফূর্ত হবে, গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।’ তিনি বলেন, ‘উত্তরাধিকার সূত্রে আমরা আইন পেয়েছি। সেগুলোতে যেসব সংস্কার আনছি, তাতে নির্বাচনের সময় সব দলের জন্যই লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি হবে। সব কর্মকর্তা নিরপেভাবে কাজ করতে বাধ্য হবেন, এমনিভাবে আইনি সংস্কার আনা হচ্ছে । নির্বাচনের সময় যেসব সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীর সহায়তা নেয়া হয়, তাদের এবং রিটার্নিং অফিসার হিসেবে ডিসিদের নিরপেতা নিশ্চিত করতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে নতুন বিধান করা হবে।’ (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২৮ জানুয়ারি ২০১৩)

নির্বাচনী বাজেট

একটি অনলাইন সংবাদমাধমে ২৮ জানুয়ারি ২০১৩ এ প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, দশম সংসদ নির্বাচন এবং উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে আগামী অর্থবছরে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চাইবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের একজন উপসচিবকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়, এর মধ্যে সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হচ্ছে ৫০০ কোটি টাকা। উপজেলা নির্বাচনেও প্রায় সমান অর্থ ব্যয় হবে বলে কমিশনের ধারণা। সম্ভাব্য এ ব্যয় অতীতের যেকোনো নির্বাচনকে ছাড়িয়ে যাবে। সর্বশেষ নবম সংসদ নির্বাচনে ব্যয় হয়েছিল ১৬৫ কোটি ৫০ হাজার ৬৮৭ টাকা। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলায় সশস্ত্র বাহিনীর দৈনিক ভাতা, কন্টিনজেন্সি, জ্বালানি ও অতিরিক্ত সময়ের জন্য মোতায়েন বাবদ ব্যয় হয় ১০ কোটি ৩৩ লাখ ৭২ হাজার ৩৮৪ টাকা। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অধীনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য ৮৭ কোটি ৪৫ লাখ ৭৩ হাজার ৬০৩ টাকা ব্যয় হয় । আইনশৃঙ্খলায় ব্যয় হওয়া এই ৯৮ কোটি টাকার মধ্যে এক কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে গোয়েন্দা কার্যক্রমেই।

গত চার বছরে স্বাধীনতার প্রথম বংশীবাদক প্রেসিডেন্ট জিয়াকে এবং যার কণ্ঠে স্বাধীন পূর্ব বাংলার প্রথম আওয়াজ বুলন্দ হয়েছিল সেই মজলুম নেতা মওলানা ভাসানীকেও মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শত ভাগ আওয়ামীকরণ বিনা বাধায় সম্পন্ন হয়েছে। রাষ্ট্রপতির ভাষণ থেকে পরিষ্কার তিনি এখনো মনেপ্রাণে মতাসীন দলেরই একজন। রাষ্ট্রপতি নিজেই বিরোধীদলকে তাদের ব্যর্থতার জন্য দায়ী করেছেন, বয়কট, জ্বালাও পোড়াও- সঙ্ঘাত নৈরাজ্যের পথ পরিহার করার জন্য নসিহত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নিজে গদিনশিন থেকে তার সাজানো বাগানে নির্বাচনী ‘গোলাপ’ তুলতে চান।

আর বিরোধী জোট! নির্দলীয় নিরপে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা না হলে ‘নির্বাচন হতে দেয়া হবে না’ বলে কঠিন সিদ্ধান্তে অটল। গত চার বছরে কী কী দাবি নিয়ে বিরোধী জোট আন্দোলন করছে, দফাওয়ারি জনগণ কি এখনো জানতে পেরেছে? সময় নির্ধারণ করে কোনো আলটিমেটাম কি সরকারকে কখনো দেয়া হয়েছে? এসব ভাঙা হাটের আন্দোলন দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আওয়ামী লীগের মতো একটি ‘আন্দোলন চ্যাম্পিয়ন’ দলের কাছ থেকে আদায় করা যাবে বলে যেসব নেতানেত্রী অলীক কল্পনার জাল বুনছেন, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন।

‘রোড ম্যাপ’ চূড়ান্ত করে সুনির্দিষ্ট ইস্যুতে আলটিমেটাম ছাড়া এ ধরনের জোয়ার-ভাটার আন্দোলন তৃণমূল কর্মীদের শুধু ফ্যাসিবাদের বন্দুকের খোরাকেই পরিণত করবে, দাবি আদায়ে কোনো কার্যকরী ভূমিকা রাখবে না। নির্দলীয় নিরপে সরকারের অধীন ছাড়া জাতীয়তাবাদী এবং ইসলামি মূল্যবোধ লালনকারী কোনো দল নির্বাচনে অংশ নিলে তা হবে তাদের জন্য এক ধরনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। সরকারের নির্বাচনের চূড়ান্ত নীলনকশা প্রস্তুতের আগেই জনগণের দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠায় সর্বশক্তি নিয়ে লাগাতার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়া ছাড়া বিরোধী দলের আর কোনো বিকল্প ভাববার অবকাশ নেই। জনমতকে উপো করে কোনো সরকার  বিরোধী দল নির্মূলের সর্বাত্মক কার্যকরী ব্যবস্থায় উৎসাহী হয়ে উঠলে, গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে আন্দোলন, সংগ্রাম আর গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সে ফ্যাসিবাদী সরকারকে মতা থেকে বিদায় করা বিরোধী দলের পবিত্র কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। এটাই গণতন্ত্রের নির্যাস। প্লেটো যথার্থই বলেছিলেন, ÔThe punishment of wise man who refuse to take part in the affairs of government, is to live under the government of unwise man.Õ অর্থাৎ  ‘সরকারের কার্যক্রমে অংশ নিতে যেসব জ্ঞানী ব্যক্তি অপারগতা দেখান তাদের শাস্তি হলো মূর্খদের দ্বারা গঠিত সরকারের অধীনে বাস করা।’ গণতন্ত্রপ্রিয় বিবেকবান বুদ্ধিজীবীদের জন্য ইশারাই কাফি।

kazi_sayed@yahoo.com

pan>�1n s��tyle=’font-family:Vrinda;mso-hansi-font-family:SutonnyMJ;mso-bidi-language: BN’>স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ববিরোধী শক্তির আগ্রাসন ও আস্ফালন থেমে যাক। জাতিকে বিভক্তকারী সব রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির উপসর্গের পতন ঘটুক। দ্রোহের আগুন দুর্নীতিকে ভাসিয়ে নিক। মানবতা, মানবাধিকার ও স্বাধীন বিচারকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত রাখুক। জালেমের মোকাবেলায় মজলুমের বিজয়কে নিশ্চিত করুক। তবেই না নতুনের কেতন উড়বে। সেই জনতা জাগবে। তার ওপর সত্য সমাগত হবে। অসত্য বিতাড়িত হবে। সত্যের জয়গানে কোটি জনতার প্রাণ বন্যা সব কিছুকে ছুঁয়ে যাবে।



কারো ভুলে যাওয়া উচিত নয়, বাতাসে দাহ্য পদার্থ না থাকলে দিয়াশলাই জ্বালালেও আগুন জ্বলে না। সাগর-রুনির আত্মা কাঁদছে। বিশ্বজিতের মায়ের হাহাকার থামেনি। রেলের কালো বিড়াল এখনো সুযোগ বুঝে মিউ মিউ করে। পদ্মা সেতু নিয়ে নোংরা খেলা বন্ধ হয়নি, ইলিয়াস আলীর কন্যার মাতম ও দীর্ঘশ্বাস এখনো বাতাসকে ভারী করে রাখছে। ব্যাংক লুণ্ঠন, দুর্নীতির বিষাক্ত ছোবলের দগদগে ক্ষত, শেয়ারবাজারের দীর্ঘশ্বাস চোখ বন্ধ করলেও মনে ভেসে ওঠে। অথচ সরকার ভাবছেÑ তারা এভাবেই কিস্তিমাত করবে। সরকার ফ্যাসিবাদ দিয়ে ক্ষমতার স্বপ্ন কোন দিন অর্জন করতে পারবে না। তাছাড়া রাজপথে কোনো আন্দোলনের সুফল সরকার পায় না, বাঁক ঘুরে সেটা বিরোধী দলের ঘরেই উঠে যায়। ব্যাপারটা শুধু অপেক্ষার।

আগামি নির্বাচনকে সামনে রেখে যারা মাঠ সাজিয়ে তুষ্ঠি পাচ্ছেন তাদের জন্য কোনো সুসংবাদ অপেক্ষা করবে না। যারা হঠকারি হয়ে সময় জ্ঞান হারিয়ে রাষ্ট্র শক্তির অপব্যবহার করছেন কিংবা তার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে পথ চলতে চাচ্ছেন তাদেরকেও অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ ভাবতে হবে। জনগণের অর্জন, তারুণ্যের উচ্ছ্বাসকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া যায় না। যদিও সেই অর্জন ও উচ্ছ্বাস ছিনতাই করার জন্য রাজনৈতিক তস্কররা ওৎ পেতে বসে আছে। সরকার বগল বাজিয়ে বলছে ও ভাবছে তাদের অ্যাজেন্ডা তরুণ সমাজ বাস্তবায়ন করে দিচ্ছে। আর প্রতিপক্ষ ভাবছে সব ঝুটা হ্যায়। কোনো মূল্যায়ন ও ভাবনাই সঠিক নয়। মিডিয়ায় হামলা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। একটা শেষের পর আরো শেষ আছে। সেই ‘শেষ’ রাজনীতিবিদদের খোড়া গর্তে রাজনীতিবিদরাই পড়তে যাচ্ছেন। ঘাড়ে তোলা সত্য ঘাড় মটকায়। যেমন ওঝা মরে সাপ খেলায় বিষধর সাপের দংশনে। রাজনীতিকে যেভাবে বিষাক্ত ও অসহিষ্ণু করে তোলা হচ্ছে তার বিপরীতে রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের জন্য শুধু দুঃসংবাদই অপেক্ষা করছে।

digantaeditorial@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.