৩০ ঘণ্টায়ও গ্রেফতার হয়নি দুর্বৃত্তরা উল্টো প্রেস কর্মকর্তা ৫ দিনের রিমান্ডে

ঘটনার ৩০ ঘণ্টা পরও নয়া দিগন্ত  কার্যালয় ও ছাপাখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
উল্টো আগুন নেভানোর সময় দিগন্ত প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজারকে গ্রেফতারের পর গতকাল পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। দুষ্কৃতকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা না করে পুলিশ এবং তাদের এজেন্টরা এই ঘটনা নিয়ে নানা গুজব ও মুখরোচক গল্প ছড়াচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুলিশের উপস্থিতিতেই নয়া দিগন্ত কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, দুষ্কৃতকারীরা পুলিশের হাত থেকে লাঠি কেড়ে নিয়ে প্রথমে নয়া দিগন্তের সামনে রাখা গাড়ি ভাঙচুর করে। পুলিশের সামনেই দুষ্কৃতকারীরা সেই গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, পুলিশ চাইলেই তখন তাদের গ্রেফতার করতে পারত। কিন্তু পরিচয় প্রকাশ হতে পারে বলে পুলিশ তা করেনি বলে অভিযোগ।

গত মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে মতিঝিল ইডেন কমপ্লেক্সে পাঠকপ্রিয় জাতীয় দৈনিক নয়া দিগন্ত কার্যালয়ে হামলা চালায় দুষ্কৃতকারীরা। ঘটনার সময় মতিঝিল থেকে আরামবাগের রাস্তায় জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ চলছিল। এ সময় ওই এলাকায় শত শত পুলিশ ছিল। নয়া দিগন্তের  আশপাশেও অসংখ্য পুলিশ ছিল। এরই মধ্যে পুলিশের সামনে একদল দুর্বৃত্ত নয়া দিগন্ত  কার্যালয়ের সামনে এসে প্রথমে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। দুর্বৃত্তরা জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে এই হামলা চালায়। পুলিশ এ সময় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। পুলিশের সামনেই দুর্বৃত্তরা ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে অস্ত্র উঁচিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এ সময় তারা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেয়। আগুন ছড়িয়ে পড়ে নিচতলায় প্রিন্টিং প্রেসেও। অগ্নিকাণ্ডের খবরে নয়া দিগন্তের সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভবনের নিচে নেমে যাওয়ার আগেই দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। দুর্বৃত্তরা এর আগে নয়া দিগন্তের ভেতরে ঢোকারও চেষ্টা করে। কিন্তু নিরাপত্তাকর্মীদের বাধায় তারা ভেতরে ঢুকতে পারেনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাংবাদিক-কর্মচারীরা যখন আগুন নেভানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন, নিজেদের জীবনের মায়া ত্যাগ করে অগ্নিকুণ্ডলিতে পানি ঢালছিলেন, তখন সেখান থেকে পুলিশ কথা আছে বলে দিগন্ত প্রিন্টিং প্রেসের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার মোশাররফ হোসেনকে ডেকে নিয়ে যায়। পুলিশ সেখান থেকে তাকে গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিক কথা হয় মতিঝিল জোনের এডিসি মেহেদী হাসানের সাথে। ঘটনাস্থলে তার নেতৃত্বেই পুলিশ উপস্থিত ছিল। তিনি ওই সময় বলেছিলেন, মোশাররফকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হবে। এরপর মতিঝিল থানার ওসি, ওসি তদন্তসহ অনেক কর্মকর্তার সাথেই মোশাররফকে ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে যোগাযোগ করা হয়। তাদের মধ্যে অনেকেই মোশাররফকে ছেড়ে দেয়ার আশ্বাস দেন, কেউ কেউ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে বলেন, আবার কেউ কেউ ছেড়ে দেয়া হবে বলে কথা দেন। কিন্তু গতকাল দুপুরে হঠাৎ করে শোনা যায় মোশাররফের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় দু’টি মামলা হয়েছে। একটি মামলা হয়েছে পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে এবং অপর মামলাটি হয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ব্যাপারে। অথচ ঘটনার পরপরই মোশাররফকে দেখা গেছে আগুন নেভানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। তার স্টিল ছবি ও ভিডিও ফুটেজও রয়েছে। গতকাল ওই দুই মামলায় মোশাররফকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এবং দুষ্কৃতকারীদের আড়াল করতেই পুলিশ এই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। মোশাররফকে গ্রেফতারের ঘটনায় হতবাক হয়েছেননয়া দিগন্ত পরিবারের সদস্যরাও। আগুনের খবর পেয়েই তা নেভানোর জন্য তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিচে ছুটে গিয়েছিলেন। অথচ তিনি এখন পুলিশ রিমান্ডে।

এর ঘণ্টা দুই-এক পরে জুরাইনেনয়া দিগন্তের ছাপা খানায় একদল অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত ঢুকে কাগজের রোলে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগায়। পরে দুর্বৃত্তরা জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

নয়া দিগন্ত কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ যারা করেছে পুলিশ তাদের চেনে। মঙ্গলবার পুলিশের সাথেই তাদের দেখা গেছে। অথচ ঘটনার ৩০ ঘণ্টা পরেও গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত দুর্বৃত্তদের কেউ গ্রেফতার হয়নি। সূত্র জানায়, পরিকল্পিতভাবেই যে এই ঘটনা ঘটেছে সে সম্পর্কে এখন সাংবাদিকেরা নিশ্চিত। আর এ কারণেই ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহের অপচেষ্টায় নেমেছে পুলিশ প্রশাসন।

No comments

Powered by Blogger.