বাসন্তী রঙে বর্ণিল বইমেলা শুক্রবারও শিশুপ্রহর by শফিকুল ইসলাম

গতকাল বুধবার ছিল পয়লা ফাল্গুন। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিনে বাসন্তী সাজে বর্ণিল হয়ে ওঠে অমর একুশে বইমেলা। বিভিন্ন বয়সী মানুষ প্রিয় মুহূর্তগুলোকে স্মরণে রাখতে এ দিন বর্ণাঢ্য পোশাক পরে মেলায় ভিড় জমান।
বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা মেলায় এসেছিলেন ঘুরতে। বাদ যায়নি স্কুলশিক্ষার্থীরাও। এ ছাড়া বইমেলার পাশের রাস্তায় গতকাল আবারো দেখা যায় পুরনো চিত্র। হকারেরা বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে বসেছিলেন। ফলে মেলায় প্রবেশ করতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় অনেককেই।

অভিভাবকদের সাথে নিয়ে শিশুদের সুবিধামতো বই কেনার জন্য আগামীকাল শুক্রবারও আড়াই ঘণ্টা শিশুপ্রহর থাকবে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শিশুরাই বইমেলায় প্রবেশ করতে পারবে।

এ দিকে গতকালের বইমেলায় প্রেমিক জুটির উপস্থিতি ছিল লণীয়। তারা একে অপরের হাত ধরে বইমেলায় এসে বিভিন্ন স্টলে পছন্দের বই কেনেন। ঘুরে দেখেন মেলার বিভিন্ন আঙিনা। মেলায় আসা এক জুটির সাথে কথা বললে জানান, ‘প্রতি বছর ফাল্গুনের জন্য অপো করি। কখন বসন্ত আসবে আর আমরা একত্রে বইমেলায় ঘুরে ঘুরে সময় কাটাব।’ তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী মেলায় বিক্রি হয়নি বলে জানান বিক্রেতারা।

বসন্তে বর্ণিল বইমেলা : গতকাল ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিনেই উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে একুশে গ্রন্থমেলা। শুধু বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণ নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও লেগেছিল বসন্তের রঙ। একুশে গ্রন্থমেলায় প্রবেশের জন্য রাস্তার দুই দিকেই আর্চওয়েতে দীর্ঘ লাইন ছিল আগতদের। সারিবদ্ধভাবে মেলায় প্রবেশ করেন তারা।

শাহবাগের ঢেউ বইমেলায় : রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে মানবতাবিরোধীদের ফাঁসির দাবিতে অব্যাহত আন্দোলনের ঢেউ এসে পড়ে বইমেলায়। আন্দোলনে সংহতি জানাতে আসা বেশির ভাগ মানুষই সময় কাটাতে বইমেলায় আসেন। এ দিকে গতকাল পয়লা ফাগুন হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে লোকজনের ছিল দৃষ্টি কাড়ার মতো। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এতই লোকসমাগম হয় যে, ট্রাফিকব্যবস্থা বেসামাল হয়ে পড়ে। শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর, টিএসসি, দোয়েল চত্বর, রাজু ভাস্কর্য এলাকা, শহীদ মিনার, ভিসি চত্বরসহ বিভিন্ন এলাকায় কয়েক ঘণ্টাব্যাপী যানজটের সৃষ্টি হয়। লোকসমাগম বেশি হওয়ায় লোকারণ্য হয়ে পড়ে এসব এলাকা। এ ছাড়া মেলার বাইরের রাস্তায় আবারো বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে রাস্তা বন্ধ করে রাখেন হকারেরা। মুড়ি, মুড়কি, পাইরেটেড বইসহ বিভিন্ন দোকান বসে পড়ে রাস্তায়।

বিক্রিতে অসন্তোষ : এ দিকে পয়লা ফাগুনে প্রত্যাশা অনুযায়ী বই বিক্রি হয়নি বলে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বেশির ভাগ বিক্রেতা। গতকাল ছিল অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৩তম দিন। পয়লা ফাল্গুন হওয়ায় মেলার ভেতরে লোকসমাগম ছিল এর আগের দিনের চেয়ে কম। ঐতিহ্য প্রকাশনীর স্টল ইনচার্জ আমজাদ হোসেন কাজল বলেনÑ লোকও নেই, বিক্রিও নেই। তিনি বলেন, ভেবেছিলাম পয়লা ফাগুন লোকসমাগম বাড়বে, বিক্রিও বাড়বে। কিন্তু তা হয়নি। কাকলী প্রকাশনীর প্রধান সেলিম বলেন, পয়লা ফাগুন উপলক্ষে যেমন বিক্রি হওয়া দরকার ছিল, তা হয়নি। তবে সন্ধ্যার পর কিছুটা হয়েছে বলে তিনি জানান। আহমদ পাবলিশিং হাউজের ম্যানেজার শাহআলম বলেন, বিক্রি নেই। যা হওয়া দরকার ছিল, তা হয়নি। তবে আগামী প্রকাশনীর মালিক ওসমান গণি বলেন, ‘বসন্তের প্রথম দিনে বিক্রি ভালোই। লোকসমাগম বেশি হলেই যে বই বেশি বিক্রি হবে, তা নয়। এর পরও বিক্রি ভালো হচ্ছে।

মেলার নতুন বই : বুধবার একুশে গ্রন্থমেলার ১৩তম দিনে ১১৮টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়ভিত্তিক বইয়ের মধ্যে গল্প ১৪টি, উপন্যাস ২৪টি, প্রবন্ধ ৯টি, কবিতা ২৯টি, ছড়া ছয়টি, শিশুতোষ সাতটি, জীবনী তিনটি, বিজ্ঞান দু’টি, ইতিহাস একটি ও অন্যান্য ১৪টি। নতুন বইয়ের মধ্যে ১৭টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

নতুন বইয়ের মধ্যে অনন্যা থেকে মৃণ¥য় মিজানের উপন্যাস নীল ডুমুরের খেয়া। চার প্রজন্মের বিভিন্ন কাহিনী বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া ঐতিহ্য প্রকাশনী থেকে মাহবুব মোর্শেদের গুরু ও চণ্ডাল, ডা: আবু সাঈদ শিমুলের শিশুর সুস্থতায় কী করবেন কী করবেন না, তাপস রায় সঙ্কলিত রসিক হুমায়ূন, অনিন্দ্য থেকে অনীশ দাস অপু অনূদিত ইফ টুমরো কামস, আহমদ থেকে ওয়াকিল আহমদ রচিত বিদ্রোহী নবাব শামসউদ্দৌলা ও ঢাকার অন্যান্য প্রসঙ্গ, অনুপম থেকে ড. তপন কুমার বিশ্বাস রচিত লোককবি লালন, মো: এনামুল হক রচিত চাঁপাইনবাবগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধ, ড. কানাই লাল রায় রচিত অশ্বঘোষের বুদ্ধচরিত, কাকলী প্রকাশনী থেকে মাইনুল এইচ সিরাজী রচিত অংক স্যার+একদল দুষ্টু ছেলে, সূচীপত্র থেকে আশা নাজনীনের শাশুড়িপুরাণ, অন্য প্রকাশ থেকে ফরিদুর রেজা সাগরের এবারও হাফডজন ছোট কাকু, শাকুর মজিদ রচিত নূহাশ পল্লীর এইসব দিনরাত্রি ইত্যাদি।

গতকালের অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে ‘কামরুদ্দীন আহমদ : সমাজ ও জীবনদর্শন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার শুরুতে লেখক-সাংবাদিক আবদুল মতিনের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক মাহবুবা নাসরীন। আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, ড. মুহাম্মদ সামাদ, ড. জালাল ফিরোজ ও লেখক আহমাদ মাযহার। সভাপতিত্ব করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান।

সভাপতির বক্তব্যে ড. আকবর আলি খান বলেন, কামরুদ্দীন আহমদ ছিলেন একজন রেনেসাঁমানব। তার প্রাগ্রসর ও দায়বদ্ধ বুদ্ধিবৃত্তিকতা এখনো সমান প্রাসঙ্গিক। মুক্তিযুদ্ধোত্তরকালে প্রকাশিত রচনাগুলোয় স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়, চালচলন ও অভিযাত্রা সম্পর্কে তার নির্মোহ বিশ্লেষণ সমকালে দুর্লভ। জন্মশতবর্ষে তাকে স্মরণ করে বাংলা একাডেমী আমাদের ধন্যবাদার্হ হয়েছেন। সন্ধ্যায় মূলমঞ্চে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

মেলামঞ্চে আজ : আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে ‘তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জাকির তালুকদার। আলোচনায় নেবেন করবেন রশীদ হায়দার, আবুল মোমেন, মুহম্মদ শহীদ উজ জামান ও কাঞ্চন কুন্তলা মুখোপাধ্যায়। সভাপতিত্ব করবেন হাসনাত আবদুল হাই। সন্ধ্যায় থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

No comments

Powered by Blogger.