জামায়াত-শিবিরের সাথে পুলিশের আবারো ব্যাপক সংঘর্ষ- মতিঝিল-পল্টন এলাকা রণক্ষেত্রঃ পুলিশের নির্বিচার গুলি

গতকালও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সাথে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে জামায়াত-শিবিরের। সকালেই রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরাপুল, আরামবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সাথে এ সংঘর্ষ হয়।
ফলে এসব এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। অসংখ্য গুলিবর্ষণের ফলে সর্বত্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। সংঘর্ষে বিভিন্ন স্থানে আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। রাজধানীতে গত দুই দিন জামায়াত-শিবিরের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পৃথক সাতটি মামলা হয়েছে। আরো কয়েকটি মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। গত দুই দিনে পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকালই গ্রেফতার করা হয়েছে ৩০০ জনকে। পুলিশের তালিকা অনুযায়ী এর আগের দিন গ্রেফতার হয়েছেন ৭৩ জন। তবে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে অনেকেই নিরপরাধ পথচারী বলে জানা যায়। বিনা কারণে পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে গেছে।

ডিএমপি মিডিয়া সেন্টার থেকে জানানো হয়েছে, সোমবারের ঘটনায় তেজগাঁও থানায় তিনটি ও মতিঝিল থানায় দু’টি মামলা হয়েছে। ওই পাঁচ মামলায় পাঁচ সহস্রাধিক আসামি রয়েছে। এর মধ্যে গ্রেফতার দেখানো হয় ৭৩ জন। গতকালের ঘটনায় মতিঝিল ও পল্টনসহ বিভিন্ন থানায় তিন শতাধিক জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে সন্ধ্যা ৭টায় পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

পুলিশের একটি সূত্র  জানায়, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত সাতটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে পাঁচ শতাধিক। তেজগাঁও থানা পুলিশ জানায়, মঙ্গলবারে কারওয়ান বাজারসহ আশপাশে বোমাবাজি, ভাঙচুর ও হামলার ঘটনায় তেজগাঁও থানায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। তিন মামলায় এজাহার নামি ২১ জন (ঘটনাস্থল গ্রেফতারকৃত) ও অজ্ঞাত চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। তেজগাঁও থানার পুলিশ বাদি হয়ে এসব মামলা করেছে।

মতিঝিল থানার অপারেশন অফিসার এসআই সাজ্জাদ হোসেন জানান, সোমবারের ঘটনায় দু’টি ও গতকালের ঘটনায় আরো দু’টি মামলা হয়েছে। দুই দিনে চার মামলায় দুই শতাধিক আটক করা হয়েছে। চার মামলায় দুই সহস্রাধিক আসামি করা হয়েছে।

গতকাল সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর মতিঝিল ও এর আশপাশে জামায়াত-শিবির মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশের সাথে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশসহ শতাধিক মানুষ আহত হন। ইসলামী ছাত্রশিবির মতিঝিল সিটি হার্ট, বিজয়নগরের পানির ট্যাংকি ও ফকিরাপুল থেকে মিছিল বের করার চেষ্টা চালালে পুলিশ প্রতিবারই বাধার সৃষ্টি করে। যেসব স্থানে পুলিশ বাধা দিয়েছে, প্রতিটি স্থানে পুলিশের সাথে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় অনেকে আহত হন। পুলিশের মতিঝিল জোনের এডিসি মেহেদী হাসান ছাত্রশিবির কর্মীদের পিটুনিতে আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সকালে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ১৭ জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।

গতকাল বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে পাইকারিহারে গ্রেফতার করে। সকালে সদরঘাট এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় ৪০ জনকে। পুলিশ অভিযোগ করেছে, জামায়াত-শিবির তাদের দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকায় এনেছিল নাশকতা সৃষ্টির জন্য। কিন্তু গ্রেফতারকৃতদের কয়েকজন বলেছেন, তারা কাজের জন্য ঢাকায় এসেছিলেন। গতকাল তাদের বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানায়। গতকাল সকালে যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, গাবতলী ও কমলাপুর এলাকায়ও অভিযান চালায় পুলিশ। ওই সব এলাকা থেকেও সন্দেহভাজন অনেককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা প্রত্যেকে কাজের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় এসেছিলেন বলে জানা যায়।

এ দিকে গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ পাইকারিহারে গ্রেফতার করে। পুলিশ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মেস, বাসাবাড়ি ও ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন হিসেবে অনেককে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে যারা পুলিশকে টাকা দিতে পেরেছেন পুলিশ তাদের ছেড়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে মামলা করে আদালতে পাঠিয়েছে বলে জানা যায়।

নোয়াখালীতে ছাত্রলীগের তাণ্ডব : ৮ জন গুলিবিদ্ধ

নোয়াখালী সংবাদদাতা জানান, নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদীতে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবিরের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনার জের ধরে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ কর্মীরা জামায়াত কার্যালয়, মাদরাসা, ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গতকাল সুধারাম মডেল থানার পুলিশ বাদি হয়ে ৬১ জনের নামে এবং অজ্ঞাত ৪৫০ জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিল ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের মুক্তি দাবিতে গত মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টায় পৌরবাজার থেকে একটি বিােভ মিছিল বের করে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি প্রধান সড়ক প্রদণি শেষে জেলা জামে মসজিদ মোড় ঘুরে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মিছিলে হামলার চেষ্টা চালালে শিবিরকর্মীরা তাদের ধাওয়া করে।

একপর্যায়ে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা পৌরবাজারে গিয়ে মিছিল শেষ করলে পুলিশের সহায়তায় ছাত্রলীগ কর্মীরা আবার তাদের ধাওয়া করে। এ সময় পুলিশ জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি  ছোড়ে। পুলিশের গুলিতে জামায়াত নেতা সাবেক নোয়াখালী আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, শিবিরকর্মী সাইফুল ইসলাম সুমনসহ আট জামায়াত-শিবিরকর্মী গুলিবিদ্ধ হন।

পরে ছাত্রলীগের কর্মীরা জেলা জামায়াত অফিস এবং পাশের মাদরাসাতুল দীনিয়ায় ব্যাপক ভাঙচুর করে এবং মাদরাসার কুরআন হাদিস, শিার্থীদের আসবাবপত্র বইপুস্তকসহ জামায়াত কার্যালয়ের আসবাবপত্রে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় মাইজদী ফায়ার সার্ভিসকে ঘটনাস্থলে যেতে দেয়নি তারা। ছাত্রলীগকর্মীরা ইসলামী ব্যাংক মাইজদী কোট শাখার এটিএম বুথ এবং থানা কাউন্সিলের কাছে শিবিরের মেসে হামলা ও ভাঙচুর করে। আরো দুই-তিন বাসায় ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় তারা। রশিদ কলোনি সংলগ্ন একটি হাউজিং কোম্পানির অফিসে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় এবং অফিসের আসবাপত্র ও চেয়ারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ দিকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার সময় পুলিশ ছিল সম্পূর্ণ নীরব।

চাটখিল (নোয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে চাটখিল উপজেলা জামায়াতের উদ্যোগে চাটখিল আলিয়া মাদরাসা মাঠে বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন উপজেলা সেক্রেটারি মাওলানা মনিরুজ্জামান, পৌরসভা জামায়াতের আমির নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া, পৌরসভা জামায়াত সেক্রেটারি ডা: হারুন উর রশিদ, কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মহিউদ্দিন হাসান ও শিবির সভাপতি আজগর আলী, মমিনুল ইসলাম পাটোয়ারী প্রমুখ। পরে একটি বিােভ মিছিল চাটখিল আলিয়া মাদরাসা প্রাঙ্গণ  থেকে শুরু হয়ে চাটখিল পৌরশহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদণি শেষে দণি বাজার জামায়াত কার্যালয়ে এসে শেষ হয়।

বরিশাল ব্যুরো জানায়, বিশ্বনন্দিত মুফাসসিরে কুরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তির দাবিতে বরিশালে বিক্ষোভ মিছিল করেছে তৌহিদি জনতা। গতকাল বরিশাল নগরীর তিনটি মসজিদের মুসল্লিরা একত্র হয়ে পোর্ট রোড থেকে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলের শেষ দিকে পেছন থেকে অতর্কিত হামলা চালায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডারেরা। এ সময় তারা নগরীর বিভিন্ন অলিগলি থেকে খুঁজে খুঁজে দাড়ি-টুপিওয়ালা লোকদের ব্যাপক মারধর করে। এতে আহত হন সেলিম, আবদুর রহমান, মাহমুদ, রুহুল আমিন, খলিলুর রহমান, আবদুর রাজ্জাকসহ অন্তত ১০ জন। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে হানা দিয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডারেরা ১১ জনকে শিবির সন্দেহে পিটিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। আটকেরা হলেন ইব্রাহিম খলিল, হাবিবুর রহমান, শামীম হোসেন, রফিকুল ইসলাম, হাফেজ মো: সিরাজুল ইসলাম, আবুল হোসেন, মোহাইমিনুল ইসলাম, মো: ইব্রাহিম ও জহিরুল ইসলামসহ ১১ জন।

দিনাজপুর ও চিরিরবন্দর সংবাদদাতা জানান, দিনাজপুর চিরিরবন্দরে জামায়াতে ইসলামীর কর্মসূচি পালনের সময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় ৭২ জন নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। চিরিরবন্দর থানার ওসি জানান, গত মঙ্গলবার চিরিরবন্দরের রানীবন্দরে জামায়াতের বিােভ মিছিল চলাকালে বিজিবির গাড়িতে হামলা ও পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিেেপর ঘটনায় এ মামলা করা হয়।

রংপুর অফিস জানায়, রংপুর মহানগরীর বালাপাড়া এলাকার একটি ছাত্রাবাস থেকে মঙ্গলবার ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৯ কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ সময় একটি ছাত্রাবাসের তালাভেঙে কম্পিউটারসহ বইপত্রও নিয়ে যায় পুলিশ। তছনছ করা হয় কুরআন শরিফসহ বিভিন্ন বইপত্র।

শিবিরের রংপুর মহানগর সভাপতি মোস্তাক আহমেদ জানান, পুলিশ কোনো কারণ ছাড়াই ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৯ কর্মীকে ঘুমন্ত অবস্থায় আটক করে নিয়ে গেছে। তাদের অনেকেরই পরীক্ষা, টিউটোরিয়াল পরীক্ষা আছে।

কালিগঞ্জ (সাতীরা) সংবাদদাতা জানান, সাতীরায় বিােভ সমাবেশে যোগদানের পথে জামায়াত-শিবিরের ১০৩ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে কালিগঞ্জ থানা পুলিশ। কালিগঞ্জ-সাতীরা মহাসড়কের ভাড়াশিমলা এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।

কালিগঞ্জ থানার ওসি আলী আহম্মেদ মাসুদ জানান, জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা ব্যানার, ফেস্টুন, গরানের লাঠি, জালের কাটি ইত্যাদি নিয়ে বাসে সাতীরার উদ্দেশে যাচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে বাসে তল্লাশি চালাতে গেলে তারা দায়িত্বরত পুলিশের ওপর হামলা চালায়। স্থানীয় জনতার সহায়তায় পুলিশ তাদের আটক করে। তবে আটক জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগটি মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক বলে জানিয়েছেন।

তালা (সাতীরা) সংবাদদাতা জানান, সাতীরা তালার পাটকেলঘাটা থানায় সাড়ে ৪০০ জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আটক করা হয়েছে চার জনকে। বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে থানা পুলিশ ও গোয়েন্দারা।

কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট) সংবাদদাতা জানান, শীর্ষ নেতাদের মুক্তি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালসহ বিভিন্ন দাবিতে লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা।

বিকেল সাড়ে চারটা থেকে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা তুষভাণ্ডার মহিলা মহাবিদ্যালয়ের সামনে জমায়েত হতে থাকে। এরপর সেখান থেকে উপজেলা আমির আব্দুল লতিফের নেতৃত্বে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি লালমনিরহাট-বুড়িমারী আঞ্চলিক মহাসড়ক ধরে বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ শেষে রওশন ফিলিং স্টেশনের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে পথসভায় মিলিত হন। বক্তারা বর্তমান সরকারকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, জামায়াত নেতৃবৃন্দের নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া না হলে যে কোনো পরিস্থিতির জন্য সরকারই দায়ী হবে। পাশাপাশি শাহবাগের নাটকীয়তা বন্ধের আহ্বান জানান।

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তির দাবিতে সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড এলাকায় গতকাল ছাত্রশিবির বিক্ষোভ মিছিল করেছে। মিছিল শেষে শিবিরকর্মীরা টায়ার জালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে। এ সময় বেশ কিছু গাড়িও ভাঙচুর করা হয়।

পাবনা সংবাদদাতা জানান, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি প্রবীণ রাজনীতিবিদ মাওলানা আব্দুস সুবহানের বাস ভবনে সন্ত্রাসীদের গুলিবর্ষণ ও জামায়াত নেতা অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহর ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে গতকাল পাবনা জেলা জামায়াত শহরে এক বিােভ মিছিল বের করে। মিছিলে নেতৃত্ব দেন পাবনা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডল, সদর উপজেলা আমির অধ্যাপক আব্দুল গাফফার খান, সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুর রব, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান উজ্জল, পৌর নায়েবে আমির আব্দুর রহমান, সেক্রেটারি মো: ফজলুর রহমান, শিবির শহর সভাপতি আরিফুল ইসলাম, সেক্রেটারি মিনহাজ উদ্দিন, অফিস সম্পাদক গোলাম মোস্তফা প্রমুখ। মিছিল শেষে সমাবেশে নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে মাওলানা আব্দুস সুবহানের বাস ভবনে হামলাকারী ও জামায়াত নেতা অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহর ওপর সন্ত্রাসী হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা জানান, ময়মনসিংহের গৌরীপুরে জামায়াত সন্দেহে রামগোপালপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো: রহিম উদ্দিনকে (৪৫) গত মঙ্গলবার রাতে নিজ বাড়ি থেকে পুলিশ আটক করেছে। গৌরীপুর থানার ওসি মো: হামিদুল ইসলাম জানান, আটককৃত ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে জামায়াতের রাজনীতির সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। তাই নাশকতার সন্দেহে তাকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এ দিকে জামায়াতের আমির মাওলানা আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, আটক ইউপি সদস্য রহিম উদ্দিন তাদের সংগঠনের কেউ নন।

যশোর অফিস জানায়, দেশব্যাপী সরকার সমর্থকদের নৈরাজ্য, নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম-নির্যাতন, হত্যা, হামলা, মামলা, শীর্ষ নেতাদের মুক্তি ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালসহ বিভিন্ন দাবিতে যশোরে শান্তিপূর্ণ বিােভ মিছিল করেছে জামায়াতে ইসলামী।

এতে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাস্টার নুরুন্নবী, শহর আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল ও শিবিরের শহর শাখার সভাপতি জাহিদুল ইসলামসহ কয়েক শ’ নেতাকর্মী অংশ নেন।

লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক এক ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শিবির। কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন শিবির নেতা জালাল উদ্দিন, শামসুদ্দিন, নুরুল আবছার, ইমরানুল হক, মোহাম্মদ হারুন, জামাল উদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ জামায়াতের সব শীর্ষ নেতাকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে দেশকে গভীর সঙ্কটের হাত থেকে রক্ষার দাবি জানিয়েছে রাজশাহী মহানগর জামায়াত।

গতকাল মহানগর জামায়াতের এক জরুরি দায়িত্বশীল বৈঠকে এ দাবি করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি ডা: মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর। বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মণ্ডল, কর্মপরিষদ সদস্য এ কে এম সারওয়ার জাহান, অধ্যাপক মাইনুল ইসলাম প্রমুখ।

খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনার কয়রা উপজেলায় ছাত্রলীগ-পুলিশ ও জামায়াত-শিবির কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ৩২ জনের নাম উল্লেখ করে এক হাজার জনের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করেছে। এসআই রবিউল হোসেন মঙ্গলবার রাতে কয়রা থানায় এ মামলা করেন। ঘটনার পর থেকে পুলিশ কয়রার ১২টি গ্রামে গণগ্রেফতার শুরু করে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৫১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ দিকে সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। অপর দিকে পুলিশের গণগ্রেফতার এড়াতে উপজেলার ১২টি গ্রামের পুরুষেরা পালিয়েছে। এ ঘটনায় খুলনা দণি জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা আ খ ম তমিজ উদ্দিন ও সেক্রেটারি মাওলানা গোলাম সারোয়ার এবং ইসলামী ছাত্রশিবির সভাপতি আবু তালেব,  সেক্রেটারি রুহুল আমীন এক বিবৃতিতে সংগঠনের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের বাড়ি বাড়ি তল্লাশির নামে হয়রানি ও পরিবারের সদস্যদের সাথে দুর্ব্যবহারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। একই সাথে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।

আদালত প্রতিবেদক জানান, ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী সন্দেহে গ্রেফতার ৮৩ আসামির ৬৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকার সিএমএম আদালতের একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। তাদের মধ্যে ১৫ জনকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

গতকাল বুধবার তাদের ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড চায় পুলিশ। শুনানি শেষে মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার মাহমুদ আদনান, মো: হারুন অর রশিদসহ একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট আসামিদের মতিঝিল থানার দু’টি মামলায় পাঁচ দিন করে ১০ দিন ও তেজগাঁও থানার তিনটি মামলায় চার দিন করে ১২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে শিবির সন্দেহে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেফতারকৃত ৩৪ আসামির ৩২ জনকে দু’দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। অপর দুই আসামির জামিনের আবেদন নাকচ করে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট মো: মোস্তাফিজুর রহমান।

কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার দাউদকান্দি থানা পুলিশ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি টোল প্লাজায় জামায়াত-শিবিরের ৩৫ নেতাকর্মীকে আটক করেছে। তাদের বাড়ি কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনী জেলার বিভিন্ন উপজেলায়।

দাউদকান্দি থানার ওসি (তদন্ত) মো: নাসির উদ্দিন মৃধা জানান, চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলা থেকে জামায়াত-শিবিরের এ নেতাকর্মীরা ঢাকা যাওয়ার পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী সেতু টোল প্লাজায় পুলিশ বিভিন্ন বাসে তল্লাশি চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। এমন তল্লাশি অভিযান অব্যাহত রাখবে বলে তিনি জানান। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন : জসিম উদ্দিন ইসমাইল হোসেন জুয়েল (১৯), আ: কাদের নোমান (২০), শাহদাত হোসেন (১৯), মানছুরুল হাসান রাশেদ (২১), মো: হাবিবুর রহমান (১৮), মো: আনিছুর রহমান (২৩), জহিরুল ইসলাম (২২), আবু নাইম (২৩), মো: আরিফুল ইসলাম (১৯), সাফায়েত হোসেন (১৮), আনিছুর রহমান আবু সাইদ (১৯), মো: আল আমিন (১৯), রাশেদুল হাসান (১৯), শরিফুল ইসলাম (১৯), আব্দুলাহ (১৯), মো: ফরহাদ হোসেন জুয়েল (২২), মো: সোহেল আলম (২০), রেজাউল হক রাজু (১৯), নূরে আলম জাবের (২৪), মাইন উদ্দিন (১৮), নূর মোহাম্মদ (১৮), মনির হোসেন (২৩), মো: শাকিক (২১), হেদায়েত উলাহ (১৮), শাহজাহান (১৮), মো: আবুল কাশেম (১৮), ওসমান আলী শাহিন (১৯), ইউসুফ (১৯) মো: নাদিম হোসাইন (২১), সাহেদুল আফছার (২২), মোশারফ হোসেন (১৮), কুতুবউদ্দিন সজীব (২৩) ও মো: সফিউল আলম শিবলু (২৭) পুলিশ তাদের বিশেষ ক্ষমতা আইনে কুমিল্লা জেলহাজতে পাঠিয়েছে। এ দিকে বুড়িচং উপজেলা সদরের ইসলাম কমপ্লেক্স নামের একটি ভবনে দলীয় সভা চলাকালে সেখানে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে। পরে সেখান থেকে উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবদুল আউয়াল ও সেক্রেটারি অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম ও জামায়াত নেতা এ কে এম মীর হোসেন ও হারুনুর রশীদসহ ওই ২০ জনকে আটক করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.