সাভারে ‘মাদকের হাট’ by অরূপ রায়

ঢাকার সাভার থানা থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে ছোট বলিমেহের ও মজিদপুর এলাকায় চলছে মাদক বেচাকেনা।


অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক মাদকসেবী ছোট বলিমেহের ও মজিদপুর এলাকা থেকে হেরোইন আর ইয়াবা সংগ্রহ করে। পুলিশ মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে মাদকসেবী ও বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করলেও মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে মজিদপুর ও ছোট বলিমেহের এলাকা।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রের ভাষ্যমতে, ওই এলাকার পাশের ইমান্দিপুর গ্রামের আলমগীর হোসেন বছর বিশেক আগে এখানে মাদক কেনাবেচা শুরু করেন। তাঁর সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন মুন্না ও ইনসু নামের দুই ব্যক্তি। ১২ বছর আগে আলমগীর সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হন। এর কয়েক বছর পর র্যা বের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান ইনসু। এরপর মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ চলে যায় মুন্নার কাছে।
মাদকসেবী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথমে মুন্না ও তাঁর লোকজন ফেনসিডিল বিক্রি করতেন। কিন্তু ফেনসিডিল পরিবহনে ঝামেলা আর লাভ কম হওয়ায় হেরোইন বিক্রির দিকে ঝুঁকে পড়েন তাঁরা। পরে হেরোইনের সঙ্গে ইয়াবাও বিক্রি শুরু করা হয়। সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে মুন্না এই এলাকায় মাদকের ব্যবসা করে যাচ্ছেন।
মুন্নার পাশাপাশি কহিনুর, শহীদ ও মুক্তি নামের তিন ব্যক্তি ওই এলাকায় মাদক বিক্রি করেন। ওই তিনজন একসময় মুন্নার সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। মাদক কেনাবেচার কারণে মজিদপুর ও ছোট বলিমেহের এলাকা সাভারবাসীর কাছে ‘মাদকের হাট’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
সূত্রের ভাষ্যমতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সখ্য গড়ে মাদক ব্যবসা করে কয়েক বছরের মধ্যেই অনেক টাকার মালিক হয়ে যান মুন্না।
পুলিশ সূত্র জানায়, মুন্নার বিরুদ্ধে ডজন খানেক মাদকের মামলা আর একটি জোড়া খুনের মামলা রয়েছে।
সম্প্রতি এক ভোরে সরেজমিনে মজিদপুর ও ছোট বলিমেহের এলাকায় মাদকসেবীদের আনাগোনা দেখা যায়। সকাল আটটার মধ্যে কমপক্ষে ৫০০ মাদকসেবী যায় ওই এলাকায়। সকাল সোয়া আটটার দিকে সেখানে উপস্থিত হন অর্ধশতাধিক তরুণ-তরুণী। পরে তাঁরা হেরোইন আর ইয়াবা সংগ্রহ করে সটকে পড়েন।
এরপর সারা দিন মাদকসেবীরা সেখানে এলেও সংখ্যায় ছিল কম। তবে বিকেল পাঁচটার পরে আবারও মাদকসেবী আর বিক্রেতাদের পদচারণে ওই এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে।
আট বছরেরও বেশি সময় ধরে হেরোইন সেবন করে আসছেন সাভার পৌর এলাকার এক ব্যক্তি। হেরোইন সংগ্রহ করেন কোথা থেকে—জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুন্না আর কহিরের (কহিনুর) স্পট থিকা।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, সাভারের ব্যাংক টাউন ও ব্যাংক কলোনিসহ বিভিন্ন এলাকায় মুন্নার লোকজন ছদ্ম পরিচয়ে একাধিক বাসা ভাড়া নিয়ে রেখেছেন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হেরোইন আনার পর সেগুলো ওই সব বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে সেখানে পুরিয়া বানানোর পর তা পৌঁছে দেওয়া হয় বিক্রেতাদের হাতে।
মাস খানেক আগে সাভার থানায় যোগদান করেছেন উপপরিদর্শক (এসআই) এমদাদুল হক।
গত ৩০ অক্টোবর ওই কর্মকর্তা মজিদপুরে অভিযান চালিয়ে মুন্নার আত্মীয় আমিনুল ইসলামসহ লিটন, খোরশেদ, হুমায়ুন কবীর ও শিল্পী নামে পাঁচ মাদক বিক্রেতাকে আটক করেন।
এ ব্যাপারে ওই কর্মকর্তা সাভার থানায় মাদক আইনে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় মাত্র ৫০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার দেখানো হয়।
সূত্রের ভাষ্যমতে, নতুন কোনো পুলিশ কর্মকর্তা সাভার থানায় যোগদান করার পর ওই দুই জায়গায় অভিযান চালান। দু-একবার অভিযান চালানোর পর মুন্নার সঙ্গে সখ্য হয়ে গেলে পুলিশ কর্মকর্তারা থেমে যান। স্থানীয়দের মতে, পুলিশের সহযোগিতা ছাড়া থানার এত কাছে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করা সম্ভব নয়।
এসআই এমদাদুল হক বলেন, সাভারে অসংখ্য তরুণ-তরুণী হেরোইন আর ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়েছেন। এ কারণে ব্যবসায়ীরা অতি সহজেই তাঁদের ব্যবসা চালাতে পারছেন। পুলিশেরও কিছু দুর্বলতা রয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
সাভার মডেল থানার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. মশিউদ্দৌলা মনে করেন, মূল হোতাদের গ্রেপ্তার করা না হলে মাদক বেচাকেনা বন্ধ হবে না।
তিনি বলেন, মুন্না সাভার থানার পুলিশের তালিকাভূক্ত মাদক ব্যবসায়ী। মুন্নাসহ মূল মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তাঁদের গ্রেপ্তার করতে পারলেই সাভারে মাদক নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
পুলিশের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের সখ্যের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এএসপি মো. মশিউদ্দৌলা।

No comments

Powered by Blogger.