তীরে এসে নৌকা ডোবাবেন না- মসিউরের ছুটি উপাখ্যান

পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনের সর্বশেষ শর্ত ছিল প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমানের ছুটিতে যাওয়া। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের অপসারণসহ অন্যান্য শর্ত সরকার আগেই মেনে নিয়েছিল।


শর্ত অনুযায়ী এক মাস আগে মসিউর ছুটিতেও যান, যার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংকের একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত দল গত মাসে বাংলাদেশে এসে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। সে সময় বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি অ্যালেন গোল্ডস্টেইন মন্তব্য করেছিলেন যে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁদের সফল আলোচনা হয়েছে। এরপর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাপানে বিশ্বব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে দেশবাসীকে এই বলে আশ্বস্ত করেছিলেন যে অচিরেই পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হবে।
এই প্রেক্ষাপটে ১ নভেম্বর মসিউর রহমানের ফের কাজে যোগদান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি উদ্বেগ প্রকাশ করে সরকারের অবস্থান জানতে চেয়েছেন। গত রোববার অর্থমন্ত্রী বলেছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সরকারের যে সমঝোতা হয়েছে, সরকার তা থেকে সরে আসেনি। অন্যদিকে, বহিঃসম্পদ বিভাগের এক বিবৃতিতে গতকাল বলা হয়, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সরকারের যেসব বিষয়ে সমঝোতা হয়, আজ পর্যন্ত তার ব্যত্যয় ঘটেনি। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নে আবার সম্পৃক্ত হয়েছে।’ তারা মসিউরের ছুটি সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু বলেনি।
প্রশ্ন হলো, অর্থমন্ত্রীর এই আশ্বাস কিংবা বহিঃসম্পদ বিভাগের বিবৃতিতে বিশ্বব্যাংক আশ্বস্ত হবে কি না?
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ছুটি শেষ করে এমন সময়ে কাজে যোগদানের ঘোষণা দিলেন, যখন বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে একটি অর্থবহ আলোচনা ও দুদকের তদন্ত প্রক্রিয়াধীন। একজন ঝানু আমলা হিসেবে তাঁর নিশ্চয়ই জানা আছে, তদন্ত চলা অবস্থায় তিনি কাজে যোগ দিলে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সরকারের যে সমঝোতা হয়েছে, তার স্পষ্ট ব্যত্যয় ঘটবে। কিন্তু বহিঃসম্পদ বিভাগের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। আবার মসিউর এ কথাও বলেছেন যে সরকার চাইলে বা বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিশ্চিত করার স্বার্থে তিনি দীর্ঘ ছুটিতেও যেতে রাজি আছেন। তা হলে জনগণ কার কথা বিশ্বাস করবে? পদ্মা সেতুর মতো এ রকম একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প নিয়ে শুরু থেকে সরকার যে লুকোচুরি করে আসছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এতে দেশের ভাবমূর্তি যেমন ক্ষুণ্ন হয়েছে, তেমনি বৃহৎ এই জাতীয় প্রকল্পটি নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
প্রশ্ন উঠেছে সরকারের সদিচ্ছা নিয়েও। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্পের বাস্তবায়ন চাইলে মসিউরকে ছুটিতেই থাকতে হবে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত। এখানে কোনো গোঁজামিলের সুযোগ নেই। আর না চাইলে বা সরকারের বিকল্প চিন্তা থাকলে তা-ও পরিষ্কার করে বলতে হবে। সরকার তীরে এসে নৌকাটি ডোবাবে, না নোঙর করার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করবে, সে সিদ্ধান্ত এখন তাদেরই।

No comments

Powered by Blogger.