প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-বিশ্ব তাকিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে

গভীর আগ্রহ নিয়ে বিশ্ববাসী তাকিয়ে আছে এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে। আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা নাগাদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ পর্ব শুরু হয়ে আগামীকাল ভোরে শেষ হবে।


কে নির্বাচিত হবেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট_ দ্বিতীয়বার বারাক ওবামা, নাকি তার প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান পার্টির মিট রমনি_ এ প্রশ্নে অনিশ্চয়তা আমেরিকার জনগণের মধ্যে যেমন, তেমনি গোটা বিশ্বেও। বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়। এর প্রধান কারণ বিশ্বের সর্ববৃহৎ পরাশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এবং বিশ্বকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিকভাবে প্রভাবিত করায় তার অপরিসীম ক্ষমতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের টানা কয়েকটি দশক যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির উন্নতি-অবনতির সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতির পারদ ওঠানামা করেছে। বিশেষ করে সমাজতান্ত্রিক পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর বিশ্বের একচ্ছত্র প্রভাবশালী রাষ্ট্রে পরিণত হয় যুক্তরাষ্ট্র। গত দুই দশকের পরিবর্তনে এখন চীনসহ অন্যান্য উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তির আবির্ভাবের কারণে আগের সেই অবস্থা নেই। তবু স্বীকার করতেই হবে যে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে আমেরিকার ভালো-মন্দের সঙ্গে বিশ্ববাসীর ভাগ্য এখনও কমবেশি জড়িয়ে আছে। শুধু তাই নয়, বিশ্বে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ থেকে আরম্ভ করে এখানে-ওখানে যুদ্ধের বিস্তার, শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সরকার পরিবর্তন, এমনকি 'বাগ মানানো যায় না' এমন কোনো দেশের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা হবে কি হবে না, এসব রাজনৈতিক-সামরিক ও কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডের কিছুই যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের এই বিপুল প্রভাবের কারণেই সেখানকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সবসময়ই বিশ্ববাসীর দৃষ্টির কেন্দ্রে থাকে। নানা কারণে এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন তাৎপর্যপূর্ণ। সবচেয়ে ব্যয়বহুল আর মার্কিন নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইও হচ্ছে এবারই। মিডিয়া, বিশেষ করে সামাজিক মিডিয়ার কল্যাণে এই নির্বাচনের উত্তাপ এবার বাংলাদেশের মানুষও অনেক বেশি অনুভব করছে। তবে যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে এখনও বিশ্বনেতা মনে করা হয়, সে জায়গায় যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে কি-না সে প্রশ্ন উঠেছে। আধুনিকতার কেন্দ্রে অবস্থিত ইউরোপের বিপর্যস্ত অর্থনীতি উদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্র এবার কোনো আর্থিক সহায়তাই দেয়নি বা দেওয়ার সামর্থ্য তার ছিল না। উন্নয়নশীল দুনিয়াকেও দরাজ হাতে সহায়তা দেওয়ার দিন বোধকরি মার্কিন নেতৃত্বের কাছেও অতীতের বিষয়। তারপরও মার্কিন অর্থনীতির ওপর বিশ্ব অর্থনীতির নির্ভরতা দূর হয়েছে বলা যাবে না। বিশ্বের ৩০টি দেশের জনগণের ওপর পরিচালিত এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, এসব দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেন, তাদের নিজেদের জীবনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রভাব রয়েছে। আর ৪২ শতাংশ বলেছেন, সুযোগ থাকলে তারাও নির্বাচনে ভোট দিতেন। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববাসীর আগ্রহ থাকবেই। বিশ্বের মানুষ চায় শান্তি ও সমৃদ্ধি। মার্কিন জনগণও অহেতুক যুদ্ধ যে চান না, তা তো জনমত জরিপেই স্পষ্ট হয়েছে। সে কারণে ভোটাররাও দৃশ্যত এবার চরমপন্থা বর্জন করে মধ্যপন্থাকেই সার করেছে এবং দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীও শেষ মুহূর্তে মধ্যপন্থা অনুসরণ করছেন। তারা কেউই আর অহমিকা বা ক্ষমতার দম্ভ প্রদর্শন করছেন না। যে কারণে ভোটাররা পড়েছেন বিভ্রান্তিতে। শেষ মুহূর্তে হয়তো ভোটদানের পূর্বরাতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন তারা। আর তাই দুই প্রার্থীর মধ্যে দৃশ্যমান স্মরণকালের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। ভোটাররা কাকে ছেড়ে কাকে ধরবেন। শেষ মুহূর্তে তা নিশ্চয়ই স্থির হবে। আমাদের প্রত্যাশা, এ নির্বাচন বিশ্ববাসীর জন্য স্বস্তিকর একজন প্রেসিডেন্টকেই নির্বাচিত করুক।
 

No comments

Powered by Blogger.