রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরবে বিএনপি by তানভীর সোহেল

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে চাপ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানাবে বিএনপি। এ ছাড়া দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কেও যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করার প্রস্তুতি রয়েছে দলটির।


মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে এই আহ্বান জানানো হবে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে কাজে লাগানোর বিষয়টিও উত্থাপন করবে বিএনপি। ইউনূসের ব্যাপারে বিএনপির অবস্থানও তুলে ধরা হবে। এ বিষয়ে বিএনপির বক্তব্য হলো, সরকার তাঁকে অসম্মান করেছে। এতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আজ শনিবার রাত সাড়ে আটটায় খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসায় এই সাক্ষাৎ হওয়ার কথা রয়েছে।
সূত্র জানায়, হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে আলোচনায় মূলত রাজনৈতিক বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেবে বিএনপি। স্বল্প সময়ের মধ্যে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো হিলারির কাছে তুলে ধরা হবে। এ জন্য সরকারকে ভূমিকা নিতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চাপ রাখতে অনুরোধ জানানো হবে।
সৌজন্য সাক্ষাৎ হলেও চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি যতটা সম্ভব তুলে ধরতে চায় বিএনপি। এ জন্য সাক্ষাতের আলোচ্যসূচি তৈরির কাজ করছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ও সাবিহউদ্দিন আহম্মেদ। ইতিমধ্যে তাঁরা খালেদা জিয়া ও দলটির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
হিলারির সঙ্গে বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং ইউনূস প্রসঙ্গ ছাড়াও গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, বিরোধী দলের ওপর দমন-নিপীড়ন, বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়ন, শুল্কমুক্ত পণ্যের প্রবেশাধিকার, দক্ষ জনশক্তি আমদানি, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অর্থনৈতিক সহায়তা এবং পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে আলোচনাকে অগ্রাধিকার দেবে বিএনপি।
শমসের মবিন চৌধুরী এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, হিলারি ক্লিনটন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁর সফরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। তা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানকে যুক্তরাষ্ট্র সব সময় গুরুত্ব দেয়। সে ক্ষেত্রে হিলারি ক্লিনটন যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে কিছু জানতে চান, তাহলে বিএনপি তা জানাবে। রাষ্ট্রের সম্মানীয় ব্যক্তিদের অসম্মান করার সরকারের মানসিকতার বিরুদ্ধেও বিএনপি তার অবস্থান পরিষ্কার করবে।
সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা হিলারির কাছে তুলে ধরতে বিএনপি বেশ কিছু উদাহরণ তুলে ধরবে। এর মধ্যে বিরোধী দলের নেতাদের ওপর হামলা-মামলা, গ্রেপ্তার, গুম-হত্যা, সাম্প্রতিক সময়ে বিচার বিভাগ, পুলিশ ও প্রশাসনকে নিজেদের কাজে ব্যবহার, নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে না দেওয়ার নানা তথ্য জোগাড় করেছে দলটি। বিএনপি হিলারি ক্লিনটনকে বলবে, সরকার বিরোধী দলের প্রতি সমান আচরণ করছে না। এ অবস্থায় এই সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। নির্বাচনের সময় সব দলের সমান সুযোগ না পাওয়ার আশঙ্কার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে একটি লিখিত বক্তব্যও তৈরি করছে বিএনপি। হিলারি চাইলে বিএনপি সেটা তাঁকে দেবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন-প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যুক্তরাষ্ট্র সব সময় চায় বাংলাদেশে গণতন্ত্র অব্যাহত থাকুক। তাই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ব্যাহত হোক, এটা তারা চাইবে না। এ জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার গুরুত্ব, এই ব্যবস্থা ছাড়া নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ না করার কারণগুলো তুলে ধরা হবে।
সাবিহউদ্দিন আহম্মেদ বলেছেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে গ্রহণযোগ্য ও সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে করণীয় বিষয়গুলোর ওপর জোর দেওয়া হবে। সরকারের কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হবে। তবে কোনো নালিশ বা অভিযোগ জানানো হবে না।

No comments

Powered by Blogger.