রেল সঙ্কেত দিলে স্ত্রী-সন্তানকে হারাতে হতো না by টিএম মামুন

‘কী শুনবেন ভাই, আ..আ...আমার সব শেষ হয়ে গেছে রে ভাই, সব শেষ! আমরা ১১ জন আত্মীয়রা একসঙ্গে হেঁটে রেললাইন পার হচ্ছিলাম। কোনে ধরনের হর্ন বা সঙ্কেত ছাড়াই আচমকা ট্রেন এসে ধাক্কা দিয়ে চলে গেল। তারপর প্রায় ১ ঘণ্টা কী হয়েছে, তা আমি ঠিক বলতে পারবো না।

স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমি জ্ঞান ফিরে দেখি রেললাইনের ওপরে লাশের টুকরো! রেল সঙ্কেত দিলে স্ত্রী-সন্তানকে হারাতে হতো না!’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাংলানিউজ এমনটাই জানান বৃহস্পতিবার রাতে টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত শিশু রাকিবের বাবা ও স্ত্রী রলেসা ওরফে অলেসার স্বামী রানা।
এরপর প্রায় ২৫ মিনিট পর তিনি চোখ মুছতে মুছতে বলেন, ‘রাত তখন অনুমানিক ১০ কিংবা ১১টা বাজে। রেললাইন পার হলেই বড় আপা বিলকিসের বাড়ি।

কালিহাতী নেমে হেঁটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ কালো মেঘে ঢেকে যায় আকাশ। এক মুহূর্তের ঝড়ে সব ল-ভ- হয়ে যায়। ঘটনার পর চিৎকারে আশেপাশের লোকজন আলো নিয়ে এসে লাশ উদ্ধার করে আমাকেও তাদের সঙ্গে শেরপুরে পাঠিয়ে দেন।’

কাঁদতে কাঁদতে কৃষক রানা জানান, অল্পদিন আগেই তার বোনের প্রথম ছেলে সন্তানের জন্ম হয়েছে। তাকে দেখার জন্য আত্মীয়রা অধীর হয়েছিলেন। সেই আদরের বোনের ছেলেকে আর দেখা হলো না।

‘আহ, ভাই, আর কথা বইলেননা, ভাই, আমি আর কিছু বলতে পারবোনা’ বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন রানা। 

ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত আসমার স্বামীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি, আমি, কিছু বরতে পারবোনা। আমার আর কিছুই নেই, কথা বলে কোনো লাভ নেই।’

এর আগে শেরপুর থানার পরিদর্শক (ওসি) আমিরুল ইসলাম ও বিলকিসের বাবার বাড়ি পরিদর্শনকারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলহাজ্ব উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, বিলকিসের ৬ দিনের ছেলেকে দেখতে গিয়ে টাঙ্গাঈল জেলার কালিহাতীতে ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে নিহত হন গোফফার ফকিরের স্ত্রী আসমা আকতার (৪০), মেয়ে শান্তা (১২), মকবুল হোসেনের ছেলে মামনি (১২), রানার স্ত্রী রলেসা (২৮) ও তার ছেলে রাকিব (১০)।

এ ঘটনায় আনোয়ার হোসেন (৩২) ও আরও এক আত্মীয় আহত হয়ে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

নিহতদের বাড়ি বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শাহ বন্দেগী ইউনিয়নের মোকন্দপুর কানাইকান্দি এলাকায়।

এবিষয়ে শেরপুর থানার ওসি বাংলানিউজকে জানান, লাশের টুকরোগুলো একসঙ্গে করার পর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরই লাশ দাফনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.