রেলপথ সম্প্রসারণ-মাদকের নেশা নয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও মাদকের ছোবলে পড়েছে। প্রাচ্যের অঙ্ফোর্ডখ্যাত উচ্চতর শিক্ষায়তনেই যদি এমন অবস্থা হয়, তাহলে মেধাবী সন্তানকে লেখাপড়া করতে পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারে কি অভিভাবক? উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পরিবর্তে আজকাল অনেককেই মারণনেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে।


সৃজনশীল মানুষের ভিড় যে চারুকলা ইনস্টিটিউটে, সেখানেও নাকি গাঁজা, ফেনসিডিল কিংবা ইয়াবার রমরমা অবস্থা। বিনোদনপিয়াসী মানুষ ছবির হাটে গেলে কিংবা তার কাছ দিয়ে যদি যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, সেখানেও আছে নেশাখোরদের বিচরণ। ভাবতে অবাক লাগে, যেই মধুর ক্যান্টিনের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাসের অনেক অধ্যায়ই জড়িত আছে, সেই মধুর ক্যান্টিনেও নাকি মাদক ব্যবসা চলে অগোচরে। আর সেই মাদকে আসক্ত হচ্ছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শিক্ষক পর্যন্ত। ছাত্রীদের হলগুলোতেও ফেনসিডিলের বোতল পাওয়া গেছে। জানা গেছে, শিক্ষকদেরও অনেকে নাকি ছাত্র থাকাকালেই মাদকাসক্ত ছিলেন। এসব সংবাদ আমাদের জন্য মোটেও শুভ নয়। কারণ যে শিক্ষক শিক্ষার্থীর গাইড হবেন, সেই শিক্ষকই যদি হন মাদকাসক্ত, তাহলে তিনি শিক্ষার্থীকে কী পথ দেখাবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব এলাকায় মাদক সেবন, বেচাকেনা হয়ে থাকে, তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অজানা নয়। সুতরাং মাদকসেবীদের ধরার ব্যাপারে মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষে অসম্ভব কিছু নয়। সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষে বহিরাগতদের প্রতিরোধ করা সর্বোতভাবে সম্ভব নয়। তাই বহিরাগতদের ঠেকানোর জন্য সরকারের দায় আছে। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে মাদকদ্রব্য প্রবেশ ঠেকাতেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়কেও হাতে ঠেলে দেওয়ার মতো নয়।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে প্রায়ই বলতে শোনা যায়, তাদের নাকি জনবলের সংকট রয়েছে। কিন্তু এ অজুহাত আর কত দিন। দেশের ভবিষ্যৎ যেখানে গাঁজার ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হতে যাচ্ছে, সেখানে সরকারও-বা নির্বিকার থাকে কিভাবে। জরুরি ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ করে দেশের ভবিষ্যৎ-বিনাশী এই মরণনেশা থেকে যুবকদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে অহরহ বহিরাগতদের প্রবেশ থাকার কারণেও মাদক ব্যবসায়ীদের সেখানে ঢোকার পথ সহজ হয়ে পড়েছে। শুধু মাদকাসক্তদের প্রতিরোধের জন্যই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থা দৃঢ়তর করার জন্যও দ্রুত বহিরাগতের অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
পাশাপাশি মাদক প্রতিরোধের জন্য বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে যুবসমাজের হতাশা দূর করার জন্য সচেতনতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ও সে ক্ষেত্রে নিজেদের উদ্যোগ কাজে লাগাতে পারে। অভিভাবকদেরও এগিয়ে আসতে হবে এমন দুরবস্থা থেকে জাতিকে রক্ষা করার জন্য। কারণ আজকে যে ছেলেটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তাকেই যে আগামী দিনের নেতৃত্ব গ্রহণ করতে হবে। সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য তাই সুন্দর তারুণ্য দরকার।

No comments

Powered by Blogger.