রেলপথ সম্প্রসারণ-স্বপ্নের প্রকল্পগুলো দেখুক আলোর মুখ

বাংলাদেশ রেলওয়ের দেড়শ' বছর পূর্ণ হবে আগামী বছর ১৫ নভেম্বর। ১৮৬২ সালে দর্শনা ও জাগিতির মধ্যে ৫৩ কিলোমিটার রেলপথে গাড়ি চলাচলের মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু। এর ৮৫ বছর পর ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির সময়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে রেললাইনের মোট দৈর্ঘ্য ছিল ২ হাজার ৬০৪ কিলোমিটার।


তারও ৬৪ বছর পর বাংলাদেশে রেলপথের দৈর্ঘ্য সেই আড়াই হাজার কিলোমিটারের আশপাশেই ঘুরপাক খাচ্ছে। এই সময় রেলওয়ের আরও একটি বিষয় কমবেশি অপরিবর্তিত_ যাত্রীসেবার মান তেমন বাড়েনি। '৯টার ট্রেন কয়টায় ছাড়বে'_ যুগ যুগ ধরেই যা চালু রয়ে গেছে বাস্তবের খুব কাছাকাছি কৌতুক হিসেবে। এ সময়ে সড়কপথ বিস্তৃত হয়েছে। অনেক সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের কারণে বাংলাদেশ প্রায় অভিন্ন সড়ক নেটওয়ার্কে চলে এসেছে। কিন্তু একই সময়ে পানির দেশ বাংলাদেশের অনেক নদ-নদী শুকিয়ে গেছে বা যাচ্ছে, সংকুচিত হচ্ছে লঞ্চ ও স্টিমার পথ। এমনকি ছোট নৌকা চলাচলের সুবিধাও সীমিত হয়ে পড়ছে। সড়কপথের উন্নয়নকে আমরা এমনকি অভাবিতও বলতে পারি। রাজধানী ঢাকা থেকে শুধু জেলা সদর নয়, প্রায় সব উপজেলাতেই সরাসরি বাস ও অন্য মোটরযানে যাওয়া চলে। কিন্তু তারপরও সর্বমহলের আকুতি_ রেলপথের বিকাশ চাই। কারণ এ ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা সড়কপথের তুলনায় ব্যয় সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব। বর্তমানে ট্রান্স এশিয়ান রেলপথের মাধ্যমে বাংলাদেশকে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সংযুক্ত করার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তাতে অভ্যন্তরীণ রেলপথের গুরুত্ব বাড়ছে। ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে সার্ক কানেকটিভিতেও রেলপথ অন্তর্ভুক্ত। এ প্রেক্ষাপটে আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে রেলওয়ের ৬২টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রস্তাব বিশেষ গুরুত্ববহ বলেই আমরা মনে করি। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় পড়বে। উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে_ ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে সার্কুলার রেললাইন এবং এ দুটি নগরীর চারপাশে রেলপথ নির্মাণ, পদ্মা সেতুতে রেলপথ নির্মাণ, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ রেলপথ ডাবল লাইনের করা, ভাঙ্গা-বরিশাল রেলপথ নির্মাণ প্রভৃতি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্যও কিছু প্রস্তাব রেখেছে। তবে এসব প্রকল্প সম্পন্ন হওয়া এখনও বলা যায় কল্পনা বা স্বপ্নের পর্যায়ে। সরকার রেলওয়েকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বাজেট বরাদ্দ না করলে এগুলো বাস্তবায়ন হতে বহু বছর অপেক্ষা করতে হবে তাতে সন্দেহ নেই। সরকারের নিজস্ব তহবিল এজন্য যথেষ্ট হবে না। অন্যান্য দেশ এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানের সহায়তাও অপরিহার্য। এ ক্ষেত্রেও সরকারের তরফে চাই বিশেষ তৎপরতা। রেল কর্তৃপক্ষ বর্তমানে প্রায় অর্ধশত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু এগুলোর বেশিরভাগের বাস্তবায়ন নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে না_ এমন শঙ্কা রয়েছে খোদ রেলওয়ে বিভাগেরই। তাহলে তো বলতে হয়, প্রস্তাবিত নতুন প্রকল্পগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশের সময়ই এখন পর্যন্ত আসেনি। আমরা আশা করব, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যেসব প্রস্তাব যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারের কাছে পেশ করছে সেগুলো হিমাগারে পড়ে থাকবে না বরং দেখবে আলোর মুখ। আধুনিক ও উন্নত মানের যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য উলি্লখিত প্রতিটি প্রকল্পই গুরুত্বপূর্ণ এবং এ কারণে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দাবি করে।
 

No comments

Powered by Blogger.