ভাষা-আইন ও বাংলা ভাষা by ড. শিশির ভট্টাচার্য্য

বাংলাদেশে ইদানীং 'ভাষা পরিকল্পনা', 'ভাষা-আইন' ইত্যাদি বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। ভাষা পরিকল্পনায় কোনো একটি দেশে এক বা একাধিক ভাষা ব্যবহারের প্রকৃতি নির্ধারণ করা হয়। আর ভাষা-আইন এবং এর সঠিক প্রয়োগ সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নির্দিষ্ট ভাষার আইনসংগত ব্যবহার নিশ্চিত করে।


মনে রাখতে হবে, এতদসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো একান্তই রাজনৈতিক ও সামাজিক। বৈয়াকরণের চোখে সব ভাষার গুরুত্ব সমান, যদি সংশ্লিষ্ট জনগণ আন্তরিকভাবে তা চায়। তবে যেকোনো ভাষাই রাষ্ট্রভাষা হতে পারে। কিন্তু সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নির্দিষ্ট অঞ্চলে সব ভাষার গুরুত্ব সমান হতে পারে না। কারণ এর সঙ্গে জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের ক্ষমতা ও রুটি-রুজির প্রশ্ন জড়িত থাকে। '৪৭-৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে প্রত্যাখ্যান এবং বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার দাবির পেছনে এ কারণগুলো নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।
পৃথিবীতে অন্তত দুটি দেশে ভাষা-আইন করেও মুখের ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার সরকারি প্রচেষ্টা সফল হয়নি শুধু জনগণের সদিচ্ছার অভাবে। এর মধ্যে একটি আয়ারল্যান্ডের 'গায়েলিক', আর অন্যটি পেরুর 'কেচুয়া' ভাষা। অন্যদিকে ইসরায়েলে মৃত ভাষা হিব্রুকে পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব হয়েছে রাজনৈতিক ও সামাজিক সদিচ্ছার কারণে। কানাডার কুইবেকে ভাষা-আইন প্রণয়ন করে মাত্র ৩০ বছর সেই আইন যথাযথভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে ইংরেজিকে সঙ্গে নিয়েই ফরাসি ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে। কুইবেকের প্রাদেশিক সরকার কর্তৃক প্রণীত ভাষা-আইন এবং এর প্রয়োগের সাফল্য বাংলাদেশের জন্য একটি ভালো দৃষ্টান্ত হতে পারে।
উত্তর আমেরিকায় ফরাসি ভাষা যেন 'কুইবেকের পদ্মপত্রে নীর'_কুইবেকোয়াদের ভয় ছিল, এই বুঝি তাদের মাতৃভাষাটি হারিয়ে গেল ইংরেজির অথৈ সাগরে। এ অবস্থার পেছনে আছে ইউরোপের ইতিহাস। ফরাসি আর ইংরেজদের মধ্যে যুদ্ধ চলছিল অষ্টাদশ শতকে। ১৭৬৩ সালে প্যারিসে স্বাক্ষরিত এক চুক্তি অনুসারে কানাডার মালিকানা ইংরেজদের হাতে তুলে দেয় ফ্রান্স। এরপর দলে দলে ইংরেজিভাষীরা এই নতুন ব্রিটিশ কলোনিতে বসতি স্থাপন শুরু করে। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইংরেজদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর ইংল্যান্ডের রানির অনুগত বহু ইংরেজ পরিবার যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে চলে আসে কানাডায়; এবং তাদের অনেকেই থাকার জন্য কুইবেক প্রদেশকে বেছে নেয়। যদিও কুইবেকে ফরাসিরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল সব সময়, তবু আজ থেকে ৩০ বছর আগেও কুইবেকের সাংস্কৃতিক রাজধানী মন্ট্রিল ছিল ফরাসি সংখ্যাগরিষ্ঠ এক ইংরেজিভাষী শহর। অফিস-আদালত আর ব্যবসা-বাণিজ্যের ভাষা ছিল ইংরেজি। ফরাসিভাষীরা ছিল অনেকটা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। ইংরেজি বলতে না পারলে ভালো কাজ পাওয়া যেত না, এমনকি ফরাসি পারিবারিক নাম থাকলেও কাজ পেতে অসুবিধা হতো। আমার পরিচিত এক ব্যক্তির নাম ছিল ফরাসিতে জড়র (ফরাসি উচ্চারণ : 'রোয়া') কিন্তু তাঁকে ঝামেলা এড়ানোর জন্য ইংরেজি উচ্চারণে 'রয়' বলতে হতো। অদ্ভুত এই ভাষিক পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে সত্তরের দশকের মাঝামাঝি, যখন কুইবেকোয়ারা তাদের ফরাসি ভাষা আর সংস্কৃতিভিত্তিক জাতীয়তার ব্যাপারে সচেতন হয়ে ওঠে। ওই সময় পার্টি কুইবেকোয়া নির্বাচনে জিতে একের পর এক ভাষা-আইন প্রণয়ন এবং তা প্রয়োগ করে কুইবেককে আইনের দৃষ্টিতে একটি একভাষী প্রদেশে পরিণত করে।
এই আইনগুলোর মধ্যে বিখ্যাত হচ্ছে ১৯৭৪ সালের ৩১ জুলাই পাস হওয়া কুইবেকের 'ভাষা-আইন-১০১'। বাংলাদেশের ভাষা পরিস্থিতিতে প্রয়োগযোগ্য এই আইনের প্রাসঙ্গিক কিছু ধারা ফরাসি থেকে তর্জমা করে দেওয়া হলো। প্রসঙ্গত বলে নিই, ১০১ আইনে ফরাসি ভাষা-আইন প্রয়োগ করার জন্য একটি রাষ্ট্রীয় ভাষা কমিশনের কথা বলা আছে। এই কমিশনের প্রধানের নাম 'লেফটেন্যান্ট জেনারেল' এবং তিনি কানাডার গভর্নর জেনারেল (রাষ্ট্রপতির সমপর্যায়ের) কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন। বলা বাহুল্য, ফরাসি 'লেফটেন্যান্ট' শব্দটির মূল অর্থ_'যিনি কোনো বিশেষ পদে বা জায়গার দায়িত্বে থাকেন'; এবং সেই লেফটেন্যান্ট জেনারেল সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা নন। এ ছাড়া ভাষা কমিশনে অন্য আরো সদস্য রয়েছেন এবং কমিশনের একটি বড়সড় কর্মীবাহিনীও আছে। ভাষা কমিশন কিংবা এর সদস্যরা এক গভর্নর জেনারেল ছাড়া আর কারো কাছে তাদের কাজের জন্য জবাবদিহি করতে বাধ্য নয়, এমনকি কুইবেক প্রাদেশিক সরকারের কাছেও নয়।
১. ফরাসি ভাষা জাতীয় ঐতিহ্য এবং একে রক্ষা করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। এই ভাষাকে প্রাধান্য দেওয়া, এর বিকাশ ও মান রক্ষার জন্য যা যা করা দরকার, তা করতে কুইবেক সরকার বাধ্য। ফরাসি ভাষা কুইবেকের প্রশাসনিক ভাষা। প্রশাসনিক কাজকর্মে অবশ্যই ফরাসি ভাষা ব্যবহৃত হতে হবে। রাষ্ট্রীয় প্রশাসন এবং এর সব কর্মকর্তা জনগণ ও অন্যান্য কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের কাজে ফরাসি ভাষা ব্যবহার করবেন। সব ধরনের সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হবে ফরাসি। যাবতীয় সরকারি ও প্রশাসনিক নথিপত্র ফরাসি ভাষায় লিখিত হতে হবে। প্রয়োজনে সঙ্গে ইংরেজি অনুবাদ থাকতে পারে। কিন্তু আইনে উলি্লখিত ব্যতিক্রমধর্মী কিছু ক্ষেত্র ছাড়া সাধারণভাবে ফরাসি ভাষায় লিখিত নথিই মূল নথি হিসেবে গণ্য হবে। যেসব পৌরসভা ও শিক্ষায়তনে কর্মচারীদের সিংহভাগ ইংরেজিভাষী, সেখানে ফরাসি ও ইংরেজি উভয় ভাষা অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের ভাষা হিসেবে গণ্য হবে।
২. ফরাসি ভাষার জ্ঞান নেই এমন কেউ জনপ্রশাসনে নিযুক্ত হতে পারবেন না, অন্য পদে বদলি হবেন না কিংবা পদোন্নতিও পাবেন না। ফরাসি ভাষায় এই জ্ঞান গভর্নর জেনারেল কর্তৃক নির্ধারিত মানসম্মত হতে হবে। উপরোক্ত মানসম্মত ফরাসি ভাষা বলতে পারেন না এমন ব্যক্তিকে কোনো ধরনের লাইসেন্স দেওয়ার অধিকার কোনো সংস্থার নেই। তবে প্রয়োজন হলে ফরাসি না জানা ব্যক্তিকে অনূর্ধ্ব এক বছরের জন্য লাইসেন্স দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এই লাইসেন্স নবায়ন করতে গভর্নর জেনারেলের অনুমতি লাগবে।
৩. যাবতীয় চুক্তিপত্রের ভাষা হবে ফরাসি। তবে বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রের সঙ্গে করা চুক্তিগুলো ফরাসি এবং সংশ্লিষ্ট দেশের ভাষায় রচিত হতে পারে। জনপ্রশাসন এবং যাবতীয় পেশামূলক সংস্থা (করপোরেশন) ফরাসি ভাষায় তাদের সব ধরনের সেবা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। যাবতীয় প্রচার-পুস্তিকা, বিজ্ঞাপন ও বিজ্ঞপ্তির ভাষা হবে ফরাসি। তবে সঙ্গে ইংরেজি অনুবাদ থাকতে পারে। আদালতের অন্যতম ভাষা হবে ফরাসি। যদি কোনো মামলার রায় একান্তই ইংরেজিতে দেওয়া হয়, তাহলে আইন মন্ত্রণালয়কে সেই রায় ফরাসিতে অনুবাদের ব্যবস্থা করতে হবে। কুইবেকের কোনো আইনের ব্যাখ্যায় ফরাসি ও ইংরেজি বয়ানে গরমিল দেখা দিলে ফরাসি বয়ান প্রাধান্য পাবে।
৪. কাজের জগতের ভাষা হবে ফরাসি। মালিকরা তাঁদের কর্মচারীদের সঙ্গে যাবতীয় যোগাযোগ ফরাসি ভাষায় করবেন। যাবতীয় কাগজপত্র (ডকুমেন্ট) ফরাসি ভাষায় লেখা হবে। অবশ্য কর্মচারীদের একাংশ যদি ইংরেজিভাষী হয়, তাহলে সঙ্গে ইংরেজি অনুবাদ থাকতে পারে। যেসব প্রতিষ্ঠানে ফরাসিভাষী কর্মচারীর সংখ্যা কম, সেসব প্রতিষ্ঠানকে তাদের কর্মচারীদের ফরাসি ভাষা শেখানোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে লেফটেন্যান্ট জেনারেলের পক্ষ থেকে এমন একটি সনদপত্র দেওয়া হবে, যাতে লেখা থাকবে_সেই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফরাসি জ্ঞান কেমন, প্রতিষ্ঠানে ফরাসি ভাষার উপস্থিতি কতটা, বিভিন্ন নথিপত্র, প্রচার পুস্তিকা, বিলবই-রসিদবই ইত্যাদিতে ফরাসি ভাষার ব্যবহার কেমন প্রভৃতি। কর্তৃপক্ষ যেকোনো সময় যেকোনো প্রতিষ্ঠানে গিয়ে এই সনদ আছে কি না যাচাই করে দেখতে পারে। যেসব প্রতিষ্ঠানের এই সনদ নেই, তারা কোনো রকম সরকারি সহায়তা, ভর্তুকি বা আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যত রকম সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা, তার কিছুই পাবে না।
৫. ব্যবসা জগতের ভাষাও হবে ফরাসি। ব্যবসায় প্রশাসন, ব্যবসার নাম, সাইনবোর্ড, ব্যবসার যাবতীয় চুক্তিপত্রে ফরাসি ভাষার ব্যবহার বাধ্যতামূলক। কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম যদি ফরাসিতে লেখা না হয়, তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটিকে লাইসেন্স দেওয়া হবে না। অন্য কোনো আইনের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ না হলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের যেকোনো নাম রাখা যেতে পারে। এমনকি নামটি একাধিক অক্ষর বা বর্ণ বা সংখ্যার সমন্বয়ে গঠিত হতে পারে। চুক্তিপত্র, বিভিন্ন দলিল-রসিদ বা সাইনবোর্ডে ফরাসি নামটি দৃশ্যমান হতে হবে অথবা কোনোমতেই ইংরেজিতে (বা অন্য কোনো ভাষায়) লেখা নামের তুলনায় কম দৃশ্যমান হওয়া চলবে না। পণ্যের ওপর লাগানো যাবতীয় লেবেল ফরাসি ভাষায় লেখা হতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান ১৯৭৪ সালের ৩১ জুলাইর আগে তাদের নিয়ন সাইনবোর্ড লাগিয়েছে, তাদের পাঁচ বছরের মধ্যে এই সাইনবোর্ড 'ভাষা-আইন-১০১' অনুসারে বদলে নিতে হবে।
৬. শিক্ষা কমিশন কর্তৃক পরিচালিত যাবতীয় শিক্ষায়তনে ফরাসি ভাষায় পাঠদান করতে হবে। এমন ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা ফরাসি ভাষায় শিক্ষা গ্রহণের জন্য উপযুক্ত ফরাসি-জ্ঞানের অধিকারী হয়। কোনো বিদ্যালয়েই পূর্ব অনুমতি ছাড়া ইংরেজি ভাষায় শিক্ষাদান করা, বাড়ানো বা কমানো যাবে না। যেসব বিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষায় পাঠদান করা হয়, সেসব বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এমন ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা ফরাসি লিখতে, পড়তে ও বলতে পারে। তবে আদিবাসী ইন্ডিয়ান এবং ইনুইটদের তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষাদান করা যাবে।
৭. এসব আইন অমান্যকারীকে ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রথম অপরাধের জন্য কমপক্ষে ২৫ ডলার ও সর্বোচ্চ ৫০০ ডলার এবং প্রতিষ্ঠানকে কমপক্ষে ৫০ ডলার ও সর্বোচ্চ এক হাজার ডলার জরিমানা করার বিধান রাখা হলো। পরবর্র্তী দুই বছরের মধ্যে একই অপরাধের জন্য ব্যক্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ তিন হাজার ডলার এবং প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ৫০০ ডলার জরিমানার বিধান রাখা হলো।
বাংলাদেশেও শিক্ষিত এবং ভাষা গবেষণায় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ভাষাবিজ্ঞানীদের সুপারিশের ভিত্তিতে অনুরূপ একটি ভাষা-আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে এবং একটি উচ্চক্ষমতা ও কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন (দ্বিতীয়টাই বেশি দরকার) কমিশন গঠন করে সেই আইন প্রয়োগ করা যেতে পারে। ওপরের তর্জমায় 'কুইবেক' শব্দটির জায়গায় 'বাংলাদেশ' এবং 'ফরাসি' শব্দটির জায়গায় 'বাংলা' বসিয়ে নিলে এবং অন্য ছোটখাটো পরিবর্তন-পরিবর্ধন করলে বাংলাদেশের জন্য একটি খসড়া ভাষা-আইন তৈরি হয়ে যাবে। অন্য অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ভাষা-আইন প্রয়োগ করা অপেক্ষাকৃত সহজ। কারণ ভাষা পরিস্থিতি এখানে মোটামুটি সরল। এই ভাষা কমিশনের একটি প্রধান কাজ হবে_ভবিষ্যতে সমাজে নতুন বস্তু আসার সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ভাষার ধ্বনিতত্ত্ব ও রূপতত্ত্বের নিয়ম মেনে সেসব বস্তুর জন্য নতুন বাংলা প্রতিশব্দ তৈরি করা এবং বিজ্ঞাপন ইত্যাদিতে সেসব প্রতিশব্দের ব্যবহার নিশ্চিত করা।
ফরাসিতে 'কম্পিউটার', 'মোবাইল' ইত্যাদি পণ্যের জন্য আলাদা শব্দ সৃষ্টি করা হয়েছিল এই পণ্যগুলো বাজারে ঢোকার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই। সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীরা মিডিয়ায় এসব শব্দ ব্যবহার করা শুরু করেছিলেন এবং কালক্রমে শব্দগুলো চালু হয়ে গেছে। কম্পিউটার, মোবাইল ইত্যাদি যন্ত্রের প্রোগ্রাম, চলচ্চিত্র, ভিডিও গেইম ইত্যাদি ফরাসি বা জাপানি ভাষায় তর্জমা না হলে ফরাসি বা জাপানি বাজারে ঢুকতে পারে না। বাংলাদেশেও এ ব্যাপারটাকে আইনের ভিত্তি দেওয়া যেতে পারে এবং এতে বহুসংখ্যক অনুবাদকের কর্মসংস্থান করাও সম্ভব হবে।
যাঁরা নিজেদের প্রমিত বাংলার সমর্থক বলে দাবি করেন, তাঁদের সামনে আপাতত পাঁচটি কাজ_
১. পণ্য ও সেবার ইংরেজি নামের বাংলা প্রতিশব্দ সৃষ্টি করা।
২. যেকোনো পণ্য বা সেবার বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করা।
৩. প্রমিত বানানের ব্যবহার কমবেশি নিশ্চিত করা।
৪. নিজেরা বাংলা বলার সময় অকারণে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার না করা।
৫. বাংলা ভাষা আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের দাবির সপক্ষে জনমত গঠন করা।
এই কয়েকটি কাজ ঠিকঠাকমতো করতে পারলেই প্রমিত বাংলা তার অস্তিত্ব রক্ষার আশু বিপদ কাটিয়ে উঠতে পারবে। কথায় কথায়, কারণে-অকারণে ইংরেজি শব্দ বা ব্যাকাংশের গোঁজামিল দিয়ে যাঁরা বাংলা বলেন, সামাজিকভাবে তাঁদের সমালোচনা করা যেতে পারে, যাতে তাঁরা এবং অন্যরাও নিজেদের ভাষা শুধরে নিতে পারেন। শিক্ষাঙ্গন বা কর্মস্থলে প্রমিত বাংলা বলার জন্য ছোটখাটো পুরস্কার বা বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা থাকতে পারে। সব সময় মনে রাখতে হবে, ইংরেজি বা অন্য কোনো ভাষার সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। প্রমিত বাংলা ও প্রমিত ইংরেজি_এই দুটি ভাষাই আমরা শিখব এবং এত ভালোভাবে শিখব। একটির সঙ্গে অন্যটি মিশিয়ে আমরা জগাখিচুড়ি বানাব না।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ংযরংযরৎ.নযধঃঃধপযধৎলধ@মসধরষ.পড়স

No comments

Powered by Blogger.