বিএনপির নেতাদের একা চলতে মানা by তানভীর সোহেল

ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর বিএনপির নেতাদের একা চলাফেরা করতে দলের পক্ষ থেকে নিষেধ করা হয়েছে। বিশেষ করে, বেশি রাতে ঘরের বাইরে না থাকতে বলা হয়েছে। দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া সবাইকে সাবধানে চলাফেরা ও সতর্ক থাকতে বলেছেন বলে বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে।


বিএনপির অভিযোগ, ইলিয়াস আলীকে সরকারের লোকজন তুলে নিয়ে গেছে বা গুম করেছে।
গতকাল বিকেলে বিএনপির যৌথ সভা শেষে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ইলিয়াস আলীকে সরকার ফেরত দিলে রোববারের হরতাল প্রত্যাহার করা হবে। আর ফিরিয়ে না দিলে লাগাতার হরতাল দেবে বিএনপি।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে এ পর্যন্ত দলটির ২২ জন নেতা-কর্মী গুম বা নিখোঁজ হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা থেকে তাঁদের আটজন নেতা নিখোঁজ হন। তাঁরা হলেন: বিএনপির ঢাকা মহানগরের নেতা চৌধুরী আলম, যশোরের বিএনপি নেতা নাজমুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের নেতা শামীম হাসান ওরফে সোহেল, ঢাকার ৫০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি ইসমাইল হোসেন, বিএনপি কর্মী মাসুদ হোসেন, সিলেট জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ইফতেখার আহমেদ ওরফে দিনার ও কর্মী জুনায়েদ আহমেদ এবং সর্বশেষ ইলিয়াস আলী। এঁদের মধ্যে কেবল দুজন—নাজমুল ইসলাম ও ইসমাইল হোসেনের লাশ পাওয়া গেছে। বাকিদের কোনো খোঁজ মেলেনি।
সবগুলো ঘটনায় অভিযোগে আঙুল ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বরাবরই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। কিন্তু কাউকে এখন পর্যন্ত জীবিত উদ্ধার করতে পারেনি।
দলীয় সূত্রগুলো জানায়, গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানী থেকে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার পর বিএনপির নেতাদের অনেকেই গুম ও অপহরণ-আতঙ্কে আছেন। বিশেষ করে, যাঁরা রাজনীতির মাঠে সক্রিয়, স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালী ও ভালো সংগঠক, তাঁদের মধ্যে আতঙ্কটা অনেক বেশি। তাঁরা রাতে একা চলাফেরা করছেন না।
জানতে জাইলে বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ গতকাল প্রথম আলোকে জানান, একের পর এক নেতা গুম হচ্ছেন। সর্বশেষ ইলিয়াস আলীর মতো নেতা নিখোঁজ হওয়ায় তাঁরা হতভম্ব হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, এ কারণে নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকতে এবং সাবধানে চলাফেরা করতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর খালেদা জিয়া গত বুধবার রাতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে এবং বৃহস্পতিবার রাতে ১৮ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন।
বৈঠকে ছিলেন, এমন একজন জ্যেষ্ঠ নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ইলিয়াস আলীর বিষয়টিকে সহজভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এটা দলের জন্য একটা অশুভ সংকেত। তাই এ অবস্থায় রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে দলীয় নেতাদের আরও ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি গুম-নিখোঁজের ঘটনা ঠেকাতে আন্দোলনের কৌশল নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের কাছে তুলে ধরার বিষয়েও আলোচনা হয়।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ইলিয়াস আলীর ঘটনায় সরকারকে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই ঘটনার জন্য সরকারই দায়ী। তাঁকে পাওয়া না গেলে সরকারকে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে।
আরও কর্মসূচির প্রস্তুতি: বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, নেতা-কর্মীদের ‘গুম’ ও ‘নিখোঁজ’ হওয়া ঠেকাতে এবং সরকারকে চাপে রাখতে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। আগামীকাল রোববারের হরতালের পর আরও হরতাল, অবরোধ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি নিয়ে দলে ও জোটে আলোচনা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মহলকে সঙ্গে পেতে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের দেশের মানবাধিকার-পরিস্থিতির করুণ দশা সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বরাবর দুটি পৃথক চিঠি পাঠানো হয়েছে বলেও বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে।
যৌথ সভা: সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের প্রতিবাদে ডাকা হরতাল সফল করতে গতকাল বিকেলে যৌথ সভা করেছে ঢাকা মহানগর বিএনপি।
নয়াপল্টনে দলের মহানগর কার্যালয়ে এই যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা।
যৌথ সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। সরকারকে বলব, ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দিন, তাহলে বিএনপি রোববারের হরতাল প্রত্যাহার করবে। তা না হলে লাগাতার হরতাল চলবে।’ তিনি বলেন, ৪৮ ঘণ্টার বেশি হয়ে গেছে, ইলিয়াস আলী নিখোঁজ রয়েছেন। অথচ তাঁকে উদ্ধারে সরকারের মন্ত্রী আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত তার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।
খালেদা জিয়ার নির্দেশে হয়তো ইলিয়াস আলী লুকিয়ে আছেন—প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই রাজনীতি আওয়ামী লীগ করে, বিএনপি নয়।’ তিনি বলেন, বিএনপির দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এটা অস্তিত্বের লড়াই। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। ইলিয়াসকে জীবিত অবস্থায় ফেরত দিতে হবে। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ভয় পেয়ে কেউ ঘরে বসে থাকবেন না।’

No comments

Powered by Blogger.