সরকারি আবাসন প্রকল্প-অগ্রাধিকার প্রকল্পেও ঢিলেমি?

স্বল্প ও মধ্যম আয়ের জনগোষ্ঠীভুক্ত কিছু লোকের একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই হতে পারে উত্তরা আদর্শ আবাসিক শহর (তৃতীয় প্রকল্প) প্রকল্পের মতো নির্ধারিত ১৯টি সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে; কিন্তু এগুলোর চলার গতি ধীর এবং কোনো কোনোটি এমনকি প্রয়োজনীয় অনুমোদনও লাভ করেনি।


শুক্রবার সমকালে 'ঝুটঝামেলায় আটকে আছে নানা আবাসিক প্রকল্প' শিরোনামে খবরে বলা হয়, উত্তরা প্রকল্পের বিস্তারিত পরিকল্পনা গত এক বছরে এমনকি আনুষ্ঠানিক অনুমোদনও লাভ করেনি। অথচ এ প্রকল্পের আওতায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ২২ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বছর আগে এ প্রকল্পের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। বর্তমান সরকারের মেয়াদকালেই এর বাস্তবায়ন হবে, এমনই ছিল অঙ্গীকার। কিন্তু এক বছরে পরিকল্পনাই চূড়ান্ত করা যায়নি। সরকারের মেয়াদের আড়াই বছরে কতটা কী হবে, কে জানে? রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউকের চেয়ারম্যান মনে করেন, 'আবাসন খাত শক্তিশালী করার জন্য কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও এর বাস্তবায়ন কাজ বিঘি্নত হচ্ছে এবং যারা এর পেছনে সক্রিয় তারা অনেক শক্তিশালী।' ধরে নেওয়া যায়, তিনি বেসরকারি খাতের রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীদের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। এ মহল জমি ও ফ্ল্যাট তৈরি করে বিপুল লাভ করছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার গুরুতর অভিযোগও রয়েছে এবং তা অমূলক নয়। সরকার আবাসন প্রকল্পে জড়িত হোক, সেটা তারা কোনোভাবেই চায় না। এটা বুঝতে তাদের সমস্যা হয় না যে, সরকার ফ্ল্যাট তৈরি করে তাদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম দামে বিক্রি করবে; কিন্তু আমাদের তো এটাও জানা আছে, সরকারের হাত অনেক লম্বা এবং আন্তরিক উদ্যোগ থাকলে যে কোনো শক্তিশালী বাধাই তাদের পক্ষে অপসারণ করা সম্ভব। কিন্তু সমকালের প্রতিবেদনে সরকারের ভেতরের অনেক বাধার উল্লেখ রয়েছে_ যেমন আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং মন্ত্রণালয় ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কাজে সমন্বয়হীনতা। সংসদীয় কমিটি ও মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্বের লড়াইও এ ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করেছে বলে প্রতীয়মান হয়। উত্তরা আদর্শ আবাসিক প্রকল্পের ক্ষেত্রে দেখা যায়, মন্ত্রণালয় ২২ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য খসড়া বিস্তৃত পরিকল্পনা প্রণয়ন করলে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এই বলে আপত্তি জানায়, ফ্ল্যাটের জন্য নির্ধারিত মূল্য বাস্তবসম্মত নয়। এ ইস্যুতে দু'পক্ষের চাপান-উতরে যথেষ্ট সময়ক্ষেপণ হয়, যা অনাকাঙ্ক্ষিত। মন্ত্রণালয়ের কাজে ভুলত্রুটি থাকলে কিংবা দুর্নীতি-অনিয়মের ঘটনা ঘটলে তা সংসদীয় কমিটি অবশ্যই দেখবে; কিন্তু কোনোভাবেই একটি অগ্রাধিকারসম্পন্ন প্রকল্পের কাজ ফেলে রাখার অবকাশ নেই। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার অবসান ঘটাতেও অন্য কেউ ভূমিকা রাখতে পারবে না। আমরা আশা করব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় নির্ধারিত আবাসন প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়ে সম্পন্ন করার জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সরকারি-বেসরকারি যে কোনো প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শেষ না হলে নানাভাবে খেসারত দিতে হয়। এতে সম্ভাব্য সুফলভোগীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয় এবং ব্যয়ের বোঝা স্ফীত হয়। এ থেকে মুক্ত হতে প্রয়োজন উপযুক্ত পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নে আন্তরিক নিষ্ঠা ও দক্ষতা। স্বল্প ও মধ্যম আয়ের জনগোষ্ঠীর একটি অংশের জন্য যেসব প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে তার বাস্তবায়ন এ ক্ষেত্রে একটি যোগ্য চ্যালেঞ্জ।
 

No comments

Powered by Blogger.