দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিন-উদ্ঘাটিত হোক প্রকৃত সত্য

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে উধাও হয়ে যাওয়া বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর সন্ধান শুক্রবার পর্যন্ত মেলেনি। কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি তাঁকে। বৃহস্পতিবার দিনভর হরতাল হয়েছে বৃহত্তর সিলেটে। কাল রবিবার সারা দেশে হরতালের ডাক দেওয়া হয়েছে। সাবেক এই সংসদ সদস্যের উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় তাঁর এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ। দল ক্ষুব্ধ।


পরিবারের জন্য ঘটনাটি দুঃখজনক। অন্যদিকে গণতন্ত্রের জন্য এ ঘটনাটি একটি অশুভ সংকেত। ছাত্রনেতা থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য- রাজনৈতিক জীবনে ইলিয়াস আলীকে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। এই রাজনৈতিক জীবনে ইলিয়াস আলী বিতর্কের উর্ধ্বে ছিলেন এমন কথা বলা যাবে না। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই এমনটিও নয়। ছাত্রজীবনে রাজনীতিতে হাতেখড়ি তাঁর। দলবদল করেছেন অনেকবারই। নিজের দলের মধ্যেও তিনি আলোচিত ও বিতর্কিত। দলীয় নেতৃত্বও একসময় রাজনীতিতে তাঁর কার্যকলাপ সীমাবদ্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। নিজের এলাকায়ও তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ছিল। সেই প্রতিপক্ষ একটা সুযোগ নিতে পারে। আবার সরকারের কোনো সংস্থার মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা একটি অশুভ চক্র সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেওয়ার জন্য এমন একটি কাজ করে থাকতে পারে- এসব আশঙ্কা একেবারেই অমূলক নয়। অন্যদিকে বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র যে হিসাব দিচ্ছে সেটাও আতঙ্কিত হওয়ার মতো। পরিবারের অভিযোগ ও ১৩টি সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের সমন্বয় করে সংস্থাটি জানাচ্ছে, ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৭ মাস ১৯ দিনে সারা দেশে ১০০ ব্যক্তি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে অপহরণের শিকার হয়েছেন। এই ১০০ জনের মধ্যে ২১ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি ৭৬ জনের কোনো খোঁজ নেই। বেসরকারি এ সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অথচ একের পর এক এ ধরনের রহস্যজনক নিখোঁজ ও গুপ্তহত্যার ঘটনার রহস্য উন্মোচিত হচ্ছে না, যা সমাজের জন্য একটি হুমকি। এটা সরকার ও রাষ্ট্রকে বুঝতে হবে। সব নিখোঁজ ও গুপ্তহত্যার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। নিখোঁজ ব্যক্তিকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না, কী ঘটেছে তা জানা যাবে না- এটা হতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে সরকারের নানা মহল থেকে নানা বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে ইলিয়াস আলীর বাসায় গিয়েছিলেন। বিএনপি নেতারা তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন। থানায় জিডি হয়েছে। ব্যবসায়ী জামালউদ্দিন হত্যাকাণ্ডের দিকে ইঙ্গিত থাকলেও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, এ ঘটনায় সরকার বিব্রত। ঠিক একই সময়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হয়েছে, আন্দোলনের ইস্যু সৃষ্টির জন্য ইলিয়াস আলীকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এখন বিবেচনার বিষয় দুটি। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে লুকিয়ে রাখার কথা বলাতে ধরে নিতে হবে, এটাই সরকারের অবস্থান। অন্যদিকে বিএনপির দাবি, ইলিয়াস আলীকে তুলে নিয়ে গুম করা হয়েছে। সরকারকে এখন এই রহস্য ভেদ করতে হবে। ইলিয়াস আলীকে তাঁর দল লুকিয়ে রাখলে কোথায় রেখেছে, সেটা সরকারকেই খুঁজে বের করতে হবে। আবার সরকারের কোনো সংস্থা ইলিয়াস আলীকে তুলে নিয়ে গিয়ে গুম করেনি, এটাও সরকারকে প্রমাণ করতে হবে। আগেই বলা হয়েছে, ঘটনাটি গণতন্ত্রের জন্য শুভকর নয়। তাই এ বিষয়ে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে সরকার ও বিরোধী দলকে। যেকোনো মন্তব্য করার আগে দ্বিতীয়বার ভাবুন। প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখুন।

No comments

Powered by Blogger.