সচেতন ও সতর্ক থাকলে বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব-নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যু

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বলছে ১৫ জন, কিন্তু পত্রিকার খবরে জানা গেছে, নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। লক্ষণীয় যে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় এনকেফালাইটিস রোগ সংক্রমণের কারণ যে নিপাহ ভাইরাস, তা সুনিশ্চিতভাবে উদঘাটনে সময় লেগেছে প্রায় চার দিন।


অথচ নিপাহ ভাইরাসে যে মস্তিষ্কে প্রদাহজনিত এনকেফালাইটিস হতে পারে এবং যেহেতু বাদুড় এ ভাইরাসের বাহক, তাই খেজুরের কাঁচা রস যে প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়াতে পারে, তা তো সবার জানা। এ ব্যাপারে প্রথম থেকেই সতর্ক থাকা এবং এলাকাবাসীকে খেজুরের কাঁচা রস না খাওয়ার জন্য সচেতন করা যেত। চার-পাঁচ দিন পর স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এখন যে সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান পরিচালনা করছেন, তা আরও আগে শুরু করলে কিছু জীবন হয়তো রক্ষা পেত, মানুষকেও আতঙ্কে থাকতে হতো না।
মালয়েশিয়ায় ১৯৯৮ সালে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রথম ধরা পড়ার পর সিঙ্গাপুর ও ২০০১ সালে মেহেরপুরে এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তখন থেকেই এ ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে খেজুরের রস সংগ্রহের পাত্র ও কাঠি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা, বাদুড়ের আধা খাওয়া বিভিন্ন ফল, বিশেষত পেয়ারা, লিচু প্রভৃতি না খাওয়া এবং অন্যান্য সতর্কতার বিষয় আলোচিত হয়। আমাদের দেশে বাদুড়ের উৎপাত কম নয়। কিন্তু নগরায়ণের ফলে বাদুড় বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীতে পরিণত হতে চলেছে বলে বাদুড় প্রজাতি সংরক্ষণেরও প্রয়োজন রয়েছে। তাই প্রতিকার হিসেবে বাদুড় না মেরে বরং আলোচ্য সতর্কতামূলক পদক্ষেপগুলো অনুসরণই বাঞ্ছনীয়।
হাতীবান্ধার বিয়োগান্তক ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ, প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারকে বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে এ ধরনের জটিল রোগতত্ত্ব বিষয়ে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধিতে মনোযোগী হতে হবে। যেভাবে ডেঙ্গু সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ও মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে, নিপাহ ভাইরাসের ব্যাপারেও তা সম্ভব। সচেতন হতে হবে ফল বিক্রেতাদেরও। বাদুড়ে ঠোকরানো ফল যেন বাজারে বিক্রি করা না হয়, সেটা তাঁদের দেখতে হবে। পাশাপাশি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর হাঁচি, কাশি বা থুথু থেকে যেন রোগ না ছড়ায়, সেটা দেখার দায়িত্ব নিতে হবে রোগীর পরিবারের সদস্যদের। আক্রান্ত রোগীর দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে জীবন রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই রোগের লক্ষণ দেখামাত্রই রোগীকে নিকটস্থ হাসপাতালে নেওয়ার সুবিধা জনসাধারণের সহজলভ্য করার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.