শেখ হাসিনা অত্যন্ত নিচু স্তরের কথা বলেছেনঃ ড. এমাজউদ্দীন

জনপ্রিয় বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী গুম হওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলেন, এমন একটি সংবেদনশীল বিষয়ে জাতির প্রতিনিধি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এমন নিচুমানের কথা আশা করা যায় না।

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে এতটাই ক্ষুব্ধ যে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নিম্নমানের কুরুচিপূর্ণ বলে কোনো মন্তব্যও করতে চাননি। ড. এমাজ উদ্দিন আহমেদ : বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এমাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ইলিয়াস আলীর মতো একজন প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক নেতাকে গুম বা অপহরণ করা হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হয় চুপ থাকতে পারতেন অথবা তাকে খুঁজে বের করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেটা না করে অত্যন্ত নিচু স্তরের কথা বলেছেন। এসব কথা বলার উদ্দেশ্য হলো অপরাধীদের প্রশ্রয় দেয়া। আমরা বিশ্বাসই করতে পারছি না একজন প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিবিদ, জনপ্রিয় নেতা, সাবেক এমপিকে গুম করা হলো, এ পর্যন্ত প্রায় ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে এখন পর্যন্ত তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। আদালত সরকারকে বলেছেন, ১০ দিনের মধ্যে তাকে আদালতে হাজির করতে। সরকার হয়তো তাকে হাজির করতে পারবে বা পারবে না। বিশিষ্ট এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, প্রধানমন্ত্রী জাতির প্রতিনিধি। তার কাছ থেকে এমন নিম্নস্তরের ভাষা কেউ মেনে নেবে না। এসব কথা জিঘাংসা বা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার থেকে প্রকাশ পেয়েছে।
ড. মনিরুজ্জামান মিয়া : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. মনিরুজ্জামান মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রায়ই এ ধরনের উল্টাপাল্টা লাগামহীন বক্তব্য দিতে আমরা শুনি। একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এমন বক্তব্য আমরা প্রত্যাশা করি না। যে ব্যক্তি গুম হয়েছে তাকে খুঁজে বের করার জন্য প্রধানমন্ত্রী পুলিশ ও গোয়েন্দাদের নির্দেশ দিতে পারতেন। তাদের বলতে পারতেন যে, ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের কর। কিন্তু সেটা না করে তিনি বলেছেন, ‘বিএনপির এক নেতা নাকি হারিয়ে গেছে’ ‘তুমি লুকিয়ে থাক, আন্দোলনের ইস্যু পাচ্ছি না।’ এ ধরনের বক্তব্য অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত।
মির্জা আব্বাস : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সাধারণ মানুষ হতাশ হয়েছে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে থেকে এমন কোনো বক্তব্য দেয়া উচিত নয় যাতে কোনো ঘটনার প্রভাবিত হতে পারে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ ঘটনায় বিব্রত হলেও প্রধানমন্ত্রী মোটেও বিব্রত নন। গত দু’দিনে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে বক্তব্য দিচ্ছেন তাতে মনে হয় ইলিয়াস আলীর মতো একজন জনপ্রিয় নেতা গুমের ঘটনায় সরকার মোটেও চিন্তিত নয়। মির্জা আব্বাস ‘আন্দোলনের ইস্যু করার জন্য ইলিয়াস আলীকে নিখোঁজ করা প্রয়োজন নেই। আপনাদের প্রত্যেকটি কাজের মধ্যে আমাদের আন্দোলনের ইস্যু আছে। বিএনপি নেত্রী ইলিয়াস আলীকে লুকিয়ে রেখেছেন, এমন বক্তব্য এ তদন্তকে প্রভাবিত করবে। মির্জা আব্বাস বলেন, ‘স্বজন-হারানোর বেদনা শেখ হাসিনা বুঝেন বলে দাবি করলেও তিনি এখন প্রতিনিয়ত মানুষ গুম করার ইন্ধন দিচ্ছেন।’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় : বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য গুম, অপহরণের রাজনীতি শুরু করেছে। তার এজেন্সির লোকজনই পরিকল্পিতভাবে ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে। প্রধানমন্ত্রীই বলতে পারবেন ইলিয়াস আলী কোথায় আছে। শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ গুমের রাজনীতি করে আপনার পিতা বাঁচতে পারেনি, এবার আপনিও পারবেন না। ক্ষমতায় থাকতে চাইলে অবিলম্বে ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের করুন।’
উল্লেখ্য, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর গুম হওয়া সম্পর্কে গত বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘বিএনপির এক নেতা নাকি হারিয়ে গেছে। সেও হারিছ চৌধুরীর মতো লুকিয়ে আছে কিনা, কে জানে! আন্দোলনের ইস্যু তৈরি করতে বিরোধীদলীয় নেত্রীর নির্দেশে সে (ইলিয়াস আলী) লুকিয়ে থাকতে পারে।’ ইলিয়াস আলী সম্পর্কে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেত্রী তাকে বলেছেন, ‘তুমি লুকিয়ে থাক, আন্দোলনের ইস্যু পাচ্ছি না। নিজের দলের একজনকে গুম করার অভিযোগ তুলে তিনি হরতাল দিয়েছেন। মারামারি, কাটাকাটি করছেন।’

No comments

Powered by Blogger.