বক্ষব্যাধি হাসপাতাল নামেই বিশেষায়িত by প্রণব বল

ফৌজদারহাট বক্ষব্যাধি হাসপাতাল। ১০০ শয্যার এই প্রতিষ্ঠানটি ফুসফুসজনিত দীর্ঘস্থায়ী প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী রোগের (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ—সিওপিডি) জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে সরকারিভাবে পরিচিত। কিন্তু তা কেবল নামেই। এত বড় একটি হাসপাতালে একটি এক্স-রে মেশিন নেই, নেই পর্যাপ্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা। প্রয়োজনীয় জনবলের সংকট তো রয়েছেই। আর বক্ষব্যাধির মধ্যে এখানে মূলত চিকিৎসা হয় যক্ষ্মা রোগের। এ ছাড়া অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদির কিছু কিছু চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ১০০ শয্যার হলেও এখানে গড়ে রোগী থাকে ৬৫ জন। প্রতিদিন এখানকার বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে থাকে ২৫ জনের মতো। গত ফেব্রুয়ারি মাসে এখানে চালু করা হয়েছে মালটি ড্রাগ রেসিসটেন্স (এমডিআর) বিভাগ নামে একটি পৃথক ইউনিট। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় এটি চালু হয়। যেসব যক্ষ্মা রোগীর কোনো ওষুধে কাজ করে না, তাদের এখানে রেখে দীর্ঘদিন চিকিৎসা দেওয়া হয়। গত রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এমডিআর ইউনিটের পুরুষ ওয়ার্ডে ১৬ জন ও মহিলা ওয়ার্ডে সাতজন রোগী রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব রোগীকে সম্পূর্ণ আলাদা কক্ষে রাখতে হয়। কারণ, এদের মাধ্যমে অন্যদের মধ্যে রোগ-জীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি। এ ছাড়া তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আলাদা পরীক্ষাগারও প্রয়োজন। কিন্তু বক্ষব্যাধি হাসপাতালের ওয়ার্ডের মধ্যে কাচের ঘের দিয়ে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য এমডিআর বিভাগ করা হয়েছে। এ ছাড়া তাদের কফ, রক্ত পরীক্ষার জন্য পৃথক কোনো পরীক্ষাগারও নেই। একটি এক্স-রে মেশিন থাকলেও তা দীর্ঘদিন ধরে অচল অবস্থায় রয়েছে। এ জন্য রোগীদের দুর্ভোগের অন্ত নেই।
একটি মাত্র পরীক্ষাগার থাকলেও তাতে সাধারণ যক্ষ্মা কিংবা অন্য রোগীদের পরীক্ষার জন্যও যথেষ্ট নয় বলে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা জানান।
এ প্রসঙ্গে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের কনসালটেন্ট মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ বলেন, ‘আমাদের এখানে সাধারণ কফ, ব্লাড সুগার ও রক্তের সামান্য কিছু পরীক্ষা ছাড়া তেমন কোনো পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। জনবলেরও কিছু ঘাটতি আছে। তবে এখানে যক্ষ্মার চিকিৎসা ভালো হয়।’
জানা গেছে, হাসপাতালের ১১টি চিকিৎসক পদের দুটি বর্তমানে খালি। এ ছাড়া সহকারী সেবিকাদের ১৭টি পদ শূন্য।
এ ছাড়া বাবুর্চি, অফিস সহকারী, ক্যাশিয়ারও নেই। বক্ষব্যাধি কিংবা সিওপিডি চিকিৎসার জন্য সে রকম কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদও নেই। অপারেশন থিয়েটার তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে ওষুধের সংকটও হয় বলে চিকিৎসকেরা জানান।
বিষয়টি স্বীকার করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক মো. আবু তাহের বলেন, ‘এটাকে সিওপিডির জন্য বলা হলেও মূলত এটি যক্ষ্মা রোগের জন্য বিশেষায়িত। বক্ষব্যাধি বলতে যা বোঝায় সে রকম সুযোগ-সুবিধা নেই। তার পরও মাল্টি ড্রাগ রেসিস্ট বিভাগ চালু করা হয়েছে। তার জন্য এখনো পর্যাপ্ত সুবিধা নেই।
এ জন্য অবশ্য আধুনিক সম্পূর্ণ পৃথক পরীক্ষাগার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
ফৌজদারহাট বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ছাড়াও চট্টগ্রামের সিআরবি পাহাড়ে আরেকটি বক্ষব্যাধি হাসপাতাল রয়েছে। রেলওয়ের পরিচালনাধীন ৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে চিকিৎসক বলতে মাত্র একজন।
আর দৈনিক রোগীর সংখ্যা গড়ে চার থেকে পাঁচজন।

No comments

Powered by Blogger.