সবাই রানি... by শাহরিয়ার ফিরোজ

বছর ফ্রেঞ্চ ওপেন, উইম্বলডন ও ইউএস ওপেন দেখেছে নতুন তিন মহিলা চ্যাম্পিয়নকে। টেনিসে যে প্রভাবশালী মহিলা তারকার বড় সংকট, এটা তারই প্রমাণ আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে মহিলা এককের শিরোপা জিতবেন কে? ফ্রেঞ্চ ওপেন কিংবা উইম্বলডনে? এটা কোনো প্রশ্ন হলো! ঠিকই ধরেছেন—প্রশ্নটা আসলে প্রতীকী। উত্তর নেই জেনেও এখানে এই প্রশ্নের অবতারণা এ জন্য যে, বিশ্ব মহিলা টেনিসটা এখন বড় উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে। একক কোনো তারকার আধিপত্য নেই। আলোচনায় নেই এমন তারকারাই চমক দেখিয়ে জিতে নিচ্ছেন গ্র্যান্ড স্লাম। তাই কে জিতবেন আগামী বছরের অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ফ্রেঞ্চ ওপেন কিংবা উইম্বলডন, বলা মুশকিল।

এই বছরটির দিকেই পেছন ফিরে দেখা যাক। বছরের চারটি গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা উঠেছে ভিন্ন চারজনের হাতে। টেনিসে এটি অবশ্য বিরল ঘটনা নয়। ১৯৯০ সালেও যখন মহিলা টেনিসের রমরমা অবস্থা, তখনো বছরের চারটি গ্র্যান্ড স্লাম উঠেছে চারজনের হাতে। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে জেতেন স্টেফি গ্রাফ, ফ্রেঞ্চ ওপেনে নিজের প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম জেতেন মনিকা সেলেস, উইম্বলডনে ব্যক্তিগত ১৮তম শিরোপা জেতেন মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা এবং বছরের শেষ গ্র্যান্ড স্লাম ইউএস ওপেনের মুকুট পরেন গ্যাব্রিয়েলা সাবাতিনি। কিন্তু এখন এটা ঘটছে প্রায় নিয়মিতই। ২০০৪, ২০০৫ ও ২০০৮ সালের পর এ বছরও চারটি গ্র্যান্ড স্লামে আলাদা চার বিজয়িনীকে দেখল টেনিস বিশ্ব। কিন্তু অন্যান্যবারের চেয়ে এবারের ঘটনাটা যেখানে আলাদা, তা হলো চার চ্যাম্পিয়নের তিনজনই জিতেছেন ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম। শুধু অস্ট্রেলিয়ান ওপেনই জিতেছিলেন আগে গ্র্যান্ড স্লামের স্বাদ পাওয়া কিম ক্লাইস্টার্স। বাকি তিনটি গ্র্যান্ড স্লাম উঠেছে অপ্রত্যাশিত তিন নতুন চ্যাম্পিয়নের হাতে—ফ্রেঞ্চ ওপেনে লি না, উইম্বলডনে পেত্রা কেভিতোভা এবং ইউএস ওপেনে সামান্থা স্টোসুর। ২৩ বছর পর একই বছরে গ্র্যান্ড স্লামে নতুন তিন মহিলা চ্যাম্পিয়নকে দেখল টেনিস। এটা টেনিসের ইতিবাচক দিক। নতুন নতুন খেলোয়াড় উঠে আসছে। গ্র্যান্ড স্লাম টুর্নামেন্ট পাচ্ছে নতুন নতুন চ্যাম্পিয়ন।
কিন্তু এই ‘প্রাপ্তির’ উল্টোপিঠে মহিলা টেনিস হারিয়ে ফেলেছে ব্যক্তি-দ্বৈরথের আকর্ষণ। মার্গারেট কোর্ট-বিলি জিন কিং, স্মিথ-ইভোন গুলাগং, ক্রিস এভার্ট-মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা, স্টেফি গ্রাফ-মনিকা সেলেসের কোর্ট মাতানো সেই দ্বৈরথের ধারার শেষ সেরেনা-ভেনাসে। তাঁরা একই পরিবারের। কারণ এটাই হোক, কিংবা সেরেনার আধিপত্যের সঙ্গে ভেনাসের পাল্লা দিতে না পারা—দুই উইলিয়ামস বোনের দ্বৈরথ আকর্ষণীয় হয়ে ওঠেনি। ফর্মের সঙ্গে টেনিসের রাজত্বও হারিয়েছেন তাঁরা। টেনিসে একক আধিপত্য বলতে যুগে যুগে আমরা যা দেখে এসেছি, সেটার অভাব ফুটে উঠেছে প্রকটভাবে। দীর্ঘদিন ছড়ি ঘোরাবে এমন কাউকেই দেখা যাচ্ছে না মহিলা টেনিসে। ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানে আছেন ক্যারোলিন ওজনিয়াকি। কিন্তু এখনো কোনো গ্র্যান্ড স্লামই তিনি জিততে পারলেন না। দুই দফায় মোট ৫১ সপ্তাহ র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ওজনিয়াকি। কোনো গ্র্যান্ড স্লাম না জিতে দীর্ঘদিন র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকার এটি নতুন রেকর্ড (আগের রেকর্ডটি ছিল দিনারা সাফিনার, ২৬ সপ্তাহ)। এক অর্থে এটি এখন মহিলা টেনিসের দৈন্যেরও প্রতীক!
ক্যারোলিন ওজনিয়াকির আগে যাঁরা র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠেছেন, তাঁদের দিকেও একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এতে আরও স্পষ্ট মহিলা টেনিসের দৈন্য। ওজনিয়াকির আগে এক সপ্তাহের জন্য র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ছিলেন কিম ক্লাইস্টার্স। আগেও অবশ্য তিনি শীর্ষে ছিলেন তিন দফায়। ক্লাইস্টার্সের আগে ১৮ সপ্তাহের জন্য শীর্ষে ছিলেন ওজনিয়াকি, তাঁর আগে ৪৯ সপ্তাহের জন্য সেরেনা। তারও আগে দ্বিতীয় দফায় এক সপ্তাহের জন্য শীর্ষে ওঠেন দিনারা সাফিনা। র‌্যাঙ্কিং-শ্রেষ্ঠত্বের এত ঘন ঘন হাতবদল এর আগে কখনোই দেখা যায়নি। ১৯৭৫ সালে র‌্যাঙ্কিং চালু হওয়ার পর ২০০০ সাল পর্যন্ত ২৫ বছরে যেখানে মাত্র নয়জন তারকা এক নম্বর হয়েছেন, সেখানে ২০০১ থেকে ২০১১ পর্যন্ত ১০ বছরে টেনিসের নতুন রানি হয়েছেন আরও ১১ জন। এই সময়ে র‌্যাঙ্কিং-শ্রেষ্ঠত্ব বদল হয়েছে ১৪ বার!
সামনে যে আরও বদল হবে, সেটা পরিষ্কার। শীর্ষে থাকা ওজনিয়াকির অবস্থান সুসংহত নয়। যেকোনো মুহূর্তে তাঁকে টপকে পঞ্চমবারের মতো শীর্ষে উঠতে পারেন মারিয়া শারাপোভা। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছেন তিনে থাকা বেলারুশের ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কাও। তাঁরও গ্র্যান্ড স্লাম জেতা হয়নি। জেতা হয়নি চারে থাকা রাশিয়ার ভেরা জনারেভারও। অর্থাৎ কোনো গ্র্যান্ড স্লাম না জেতা তিন তারকা আছেন র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ চারে। এটা বোধ হয় একটা নতুন রেকর্ড!

No comments

Powered by Blogger.