পৃষ্ঠপোষকতা পেলে প্রধান রপ্তানি খাত হবে জাহাজ নির্মাণ শিল্প

রকারের পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্প এগিয়ে চলছে। বরং সরকারের আরোপিত শুল্কের বোঝা ও নানা ধরনের বিধি-নিষেধ এ শিল্পের অগ্রগতির পথে একটি বড় বাধা। এসব বাধা দূর করতে প্রয়োজন একটি সুষ্ঠু নীতিমালা, যথেষ্ট পৃষ্ঠপোষকতা ও সমন্বিত উদ্যোগ। গতকাল শনিবার রাজধানীর পল্টনে স্থানীয় একটি সম্মেলনকক্ষে 'দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ' শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান টিকে শিপইয়ার্ড লিমিটেড ও অনলাইন সংবাদপত্র পিটিবি নিউজ ডটকম যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক ম. ইনামুল হক ও নিরাপদ নৌপথ বাস্তবায়ন আন্দোলনের সদস্যসচিব আমিনুর রসুল বাবুল। মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্প বেশ ভালো সাফল্য দেখিয়েছে। এ শিল্পের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ হয়েছে। ইউরোপসহ উন্নত বিশ্বের দেশগুলোয় এসব জাহাজ রপ্তানিও হচ্ছে। অন্যান্য দেশের তুলানায় কম খরচ বলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের মতো সস্তা শ্রমের দেশে ঝুঁকছে। এ সুযোগকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে জাহাজ নির্মাণ শিল্প দেশের প্রধান রপ্তানি খাতে পরিণত হবে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। আন্তর্জাতিক নৌ-সংস্থা (আইএমও) নীতিমালা অনুযায়ী, ২৫ বছরের বেশি পুরনো জাহাজ সমুদ্রে চলাচল নিষিদ্ধ। এ কারণে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের তিন হাজারেরও বেশি সমুদ্রগামী জাহাজ বাতিল হয়ে যাওয়ায় বিশ্বব্যাপী জাহাজ নির্মাণ শিল্পে দেখা দিয়েছে তীব্র সংকট। তবে এই সংকটকে আশীর্বাদ মনে করছেন বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের উদ্যোক্তারা। টিকে শিপইয়ার্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঞ্জুর হোসাইন বলেন, শুধু ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, এই শিল্পের বিকাশে উদ্যোক্তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতাও থাকতে হবে। টিকে শিপইয়ার্ডের পক্ষ থেকে তিনি কর্মরত শ্রমিকদের ন্যায্য বেতন-ভাতাসহ আনুষঙ্গিক সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তা ছাড়া পরিবেশসম্মত ও বিশ্বমানের জাহাজ নির্মাণ শিল্প গড়ে তুলতে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আধুনিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা বলেন।
উল্লেখ্য, দেশে প্রথমবারের মতো জাহাজ তৈরি করে রপ্তানি করতে সক্ষম হয়েছে আনন্দ শিপইয়ার্ড অ্যান্ড শ্লিপ ওয়েজ লিমিটেড। সম্প্রতি বিশ্বমানের দুটি সমুদ্রগামী অয়েল ট্যাংকার নির্মাণের কাজ পেয়েছে দেশীয় জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান টিকে শিপইয়ার্ড লিমিটেড। এই জাহাজ দুটির নকশাও করেছে দেশীয় একটি প্রতিষ্ঠান রেডিয়্যান্ট মেরিন ডিজাইন অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড।
সেমিনারে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নৌযান ও নৌযন্ত্র কৌশল বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আবদুর রহিম বলেন, এই শিল্পে যেমন অনেক সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি আশঙ্কাও রয়েছে। এ শিল্প বিকাশে প্রয়োজন একটি সুষ্ঠু নীতিমালা, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সমন্বিত উদ্যোগ। সরকাররের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোয় বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তার যথেষ্ট অভাব রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপের ফলে এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলাতায় এ শিল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধরনের অনুমতির জন্য উদ্যোক্তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
তিনি আরো বলেন, অন্য অনেক শিল্পের তুলনায় জাহাজ নির্মাণ শিল্পের বর্জ্যে পরিবেশের ক্ষতি খুবই কম। এ শিল্পের বিকাশে দ্রুত সময়ের মধ্যে ডকইয়ার্ডের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী জায়গা বরাদ্দ, সল্প সুদে ব্যাংক ঋণ প্রাপ্তি এবং বিদেশ থেকে কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে জটিলতা দূর করতে সরকারের কাছে আহ্বান জানান তিনি।
সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম ফখরুল ইসলাম বলেন, সারা বিশ্বে সব ধরনের জাহাজের এক হাজার ৬০০ বিলিয়ন ইউএস ডলারের বাজার রয়েছে, যার মধ্যে ছোট জাহাজের (৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টন) ৪০০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ যদি এর ১ শতাংশ ধরতে পারে, তাহলে বছরে ২৮০ বিলিয়ন বাংলাদেশি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। পিটিবি নিউজ ডটকমের প্রধান সম্পাদক আশীষ কুমার দে'র সঞ্চালনে সেমিনারে অন্যদের মধ্যে আলোচনা করেন অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল সংস্থার ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি বদিউজ্জামান বাদল, পিটিবি নিউজ ডটকমের আইন উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মো. এনামুল হক মোল্লা প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.