চেক ডিজঅনার কী করবেন? by জাহিদ আহমেদ

বদুল কাদির রাজধানীর ব্যস্ততম গাউছিয়া মার্কেটের একজন পাইকারি কাপড় ব্যবসায়ী। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে তাঁর কাছ থেকে তিন লাখ টাকার কাপড় কিনে নিয়ে যান কামরাঙ্গীরচরের আরেকজন খুচরা কাপড় ব্যবসায়ী মো. রফিক (ছদ্মনাম)। যে কাপড়ের মূল্য বাবদ তাঁকে ঢাকা ব্যাংকের তিন লাখ টাকার একটি চেক দেন। কিন্তু আবদুল কাদির সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে জমা দিলে ‘অপর্যাপ্ত ফান্ড’ দেখিয়ে ডিজঅনার হয়। এখানে মূল ঘটনাটি হচ্ছে, মো. রফিকের ঢাকা ব্যাংকে যে হিসাব রয়েছে, সেই নম্বর থেকে মো. আবদুল কাদিরকে তিন লাখ টাকা প্রদানের জন্য একটি চেক ইস্যু করেন এবং তাঁর ওই হিসাবে রক্ষিত টাকার পরিমাণ চেকটি পরিশোধ করার ক্ষেত্রে অপর্যাপ্ত হওয়ার কারণে ডিজঅনার হয়। আবদুল কাদিরের মতো এ রকম আরও অনেক ব্যবসয়ী, ব্যাংক, অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত চেকদাতাদের দ্বারা চেক ডিজঅনারের মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছে।

আর এই চেক ডিজঅনার হচ্ছে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে একটি অপরাধ। নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্ট-১৮৮১, উল্লিখিত এই আইনের ১৩৮ নম্বর ধারায় চেক ডিজঅনার-সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি ও মামলার আইনি প্রক্রিয়ার সুনির্দিষ্ট বিধানাবলি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অত্র ধারাটি কার্যকর হওয়ার জন্য সর্বপ্রথম শর্ত হচ্ছে, চেকটি ইস্যুর তারিখ থেকে ছয় মাস সময়ের মধ্যে তা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে ক্যাশ করার জন্য জমা দিতে হবে। উল্লেখ্য, ছয় মাসের মধ্যে জমা না দিলে তা অকার্যকর হবে।
দ্বিতীয়ত, চেকটি ব্যাংক থেকে ডিজঅনার হওয়ার পর থেকে ৩০ দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধের জন্য চেক প্রদানকারীকে লিখিতভাবে নোটিশ দিতে হবে। নোটিশ জারি সম্পর্কে ১৩৮ সংশোধিত ধারায় বলা হয়েছে যে প্রথমে চেষ্টা করতে হবে নোটিশ ব্যক্তিগতভাবে সরাসরি চেক প্রদানকারীর ওপর জারি করতে। তা সম্ভব না হলে, তার বাসস্থান বা যে স্থানে সে সর্বশেষ ব্যবসা করেছে, সেই ঠিকানায় প্রাপ্তি স্বীকার রসিদসহ (এডি) ডাকযোগে নোটিশ পাঠাতে হবে। এবং সর্বশেষ পদ্ধতি হিসেবে বলা হয়েছে, একটি বহুল প্রচলিত জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশ করা।
তৃতীয়ত, নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে চেক প্রদানকারী চেকে উল্লিখিত পরিমাণ টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে ১৩৮ ধারায় চেক ডিজঅনার অপরাধের জন্য মামলা দায়ের করতে হবে নোটিশে উল্লিখিত মেয়াদ শেষের পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে।
চেক ডিজঅনার অপরাধের শাস্তি হচ্ছে এক বছর মেয়াদ পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা চেকে বর্ণিত অর্থের তিন গুণ পরিমাণ অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডেও দণ্ডিত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আপিলের সুযোগ থাকলেও আপিল দায়েরের পূর্বশর্ত হচ্ছে, চেকে উল্লিখিত টাকার কমপক্ষে ৫০ শতাংশ টাকা যে আদালত দণ্ড প্রদান করেছেন সেই আদালতে জমা দেওয়া।
সর্বশেষ কথা হচ্ছে, চেক লেনদেনের প্রক্রিয়াকে অনেক সহজসাধ্য করেছে। ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক উভয় ক্ষেত্রেই লেনদেনের একটি সহজ মাধ্যম হতে পারে চেক। চেক হচ্ছে পারস্পরিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্যতার প্রতীক। আর চেক ডিজঅনার হচ্ছে একটি অপরাধ। পাশ্চাত্যে চেক ডিজঅনারকে অনেক অপমানের চোখে দেখা হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের দেশে অসৎ, চতুরতার কারণে চেক ডিজঅনারের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ব্যবসায়িক লেনদেনের ক্ষেত্রে অবিশ্বাসের কারণ বেশি দেখা দিয়েছে।
লেখকঃ আইনজীবী, জজকোর্ট, ঢাকা

No comments

Powered by Blogger.